ভাগীরথীর ভাঙনে বিপন্ন কেতুগ্রামের রঘুপুর ও নতুনগ্রাম।
ভাগীরথীর দুই পাড়ে অবস্থিত এই দুই গ্রাম। রঘুপুর অবস্থিত ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে (নদিয়ার দিকে), ও পশ্চিমপাড়ে, অবস্থিত নতুনগ্রাম (মুর্শিদাবাদের দিকে)। ইতিমধ্যেই ভাগীরথীতে তলিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি বাড়ি। পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগে রঘুপুর গ্রামে ভাগীরথীর পাড় ধসে এক বাসিন্দার মৃত্যু হয়। মৃতের নাম বৈকুন্ঠ ঘোষ। বছর আটচল্লিশের বৈকু্ন্ঠবাবু স্নান করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন ভাগীরথীর পাড়ে। হঠাৎই ধসে যায় নদীর পাড়। বৈকুন্ঠবাবু তলিয়ে যান নদীতে। পরে তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। |
এই দুই গ্রামে ভাগীরথীর ভাঙন অবশ্য এই প্রথম নয়। ভাঙন দেখতে আট বছর আগে বর্ধমানের তৎকালীন জেলাশাসক সুব্রত গুপ্ত রঘুপুর গ্রামে গিয়েছিলেন। ভাঙন রোধের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরে ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেলেও ভাঙন রোধে কোনও কাজ হয়নি। কাজ হয়নি নতুন গ্রামেও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভাঙন বিধ্বস্ত এই দুটি গ্রাম বর্ধমান জেলা প্রশাসনে ‘প্রবলেম ভিলেজ’ হিসেবে চিহ্নিত। স্থানীয় মৌগ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের প্রধান মথুরা ঘোষের আক্ষেপ, “স্থানীয় বাসিন্দারা বাঁচার তাগিদে পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।”
রঘুপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামসুন্দর ঘোষ, মাখাই ঘোষের ক্ষোভ, “কয়েক বছর আগে স্বয়ং জেলাশাসক গ্রামের ভাঙন রোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্বাস বাস্তবের মুখ দেখেনি। এরপর কাকে বিশ্বাস করব?” দুই গ্রামের বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, কয়েক বছরে দুই গ্রামেরই কয়েকশো বিঘা জমি, শ’দুয়েক বাড়ি, প্রাথমিক স্কুল, কবরস্থান চলে গিয়েছে ভাগীরথীর গর্ভে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছরে রঘুপুর ও নতুনগ্রাম থেকে ভাঙনের ভয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ অন্যত্র চলে গিয়েছেন। নদী ক্রমশ এগিয়ে আসায় বাসিন্দারা পাড় থেকে কয়েকশো মিটার দূরে ছিটে বেড়ার ঘর তৈরি করে বাস করতে শুরু করেছিলেন।
গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পর ভাগীরথী আবার ফুঁসতে শুরু করেছে। ফলে শেষ আশ্রয়টুকুও হারানোর আশঙ্কা করছেন তাঁরা। স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, “বাম সরকারের আমলে ভাঙন প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি চেষ্টা করছি। দেখা যাক কী হয়।”
নতুন গ্রামের বাসিন্দা হামেদ আলি, রঘুপুরের লক্ষ্মী ঘোষেরা জানান, ভাঙনের আতঙ্কে নদীর পাড়ে চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এলাকার অনেক বড় চাষি এখন দিনমজুরে পরিণত হয়েছেন। এই দুই গ্রামে সড়ক যোগাযোগের কোনও ব্যবস্থা নেই। থাকতে হয় নৌকার ভরসায়। ভাগীরথী ফুঁসতে থাকায় নৌকা চলাচলেও বিঘ্ন ঘটেছে।
বর্ধমান জেলা সেচ দফতরের আধিকারিক ধীরাজ ধরের আশ্বাস, ভাঙন রোধের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।” তবে কাজ শুরু না হওয়া পর্যন্ত অবশ্য কোনও ভরসা করতে রাজি নন রঘুপুর ও নতুনগ্রামের বাসিন্দারা। |