সরকারি ফতোয়া উড়িয়ে দিলেন ওঁরা। সংখ্যায় কম হলেও স্টিয়ারিং হাতে সৌদি আরবের বেশ কয়েক জন মহিলাকে শনিবার দেখা গেল রিয়াধ বা জেড্ডার মতো শহরের রাস্তায়।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এর আগেই অবশ্য মেয়েদের গাড়ি চালানোর পক্ষে সওয়াল করে আন্দোলনকারীরা বলেছিলেন ২৬ অক্টোবর, শনিবার পথে নামবেন মহিলারা। ফতোয়ার মুখে কেউ কেউ পিছিয়ে গেলেও বেশ কয়েক জন সাহস করে এগিয়ে এসেছেন। গত কাল বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের গাড়ি চালানোর ভিডিও তুলে আন্দোলনের সমর্থকরা তা আপলোড করে দিয়েছেন ইউটিউব এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। তবে গাড়ি চালাতে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিরোধের মুখেও পড়তে হয়েছে কয়েক জন মহিলাকে।
জরিমানা করা হয়েছে ১৬ জন মহিলাকে। এঁরা প্রত্যেকে অনলাইন আন্দোলন “উওম্যানস ড্রাইভিং ইজ এ চয়েস”-এর সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের এক মুখপাত্র কর্নেল ফওয়াজ আল মিমান জানান, রিয়াধে ৬ মহিলাকে আটকানো হয়েছে। ৩০০ রিয়াল (৪৯০০টাকা) জরিমানা করা হয়েছে। তা ছাড়া রাজার দেশের আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর পুরুষ অভিভাবককে ডেকে এনে কাগজে সই করতে হয়েছে প্রত্যেক মহিলাকে। জেড্ডায় আরও দু’জন মহিলাকে জরিমানা করেছে পুলিশ। তবে মহিলাদের কাউকেই থানায় ডেকে আনা হয়নি বলে দাবি মিমানের। নিজের গাড়িতেই বসিয়ে রাখা হয় মহিলাদের। তার পর ডেকে পাঠানো হয় সেই মহিলার পুরুষ অভিভাবককে। এর পরে আর গাড়ি চালাব না আটক মেয়েদের বাধ্য করা হয়েছে এই প্রতিশ্রুতি দিতে।
অর্থনীতির গবেষক মাই আল সোয়ান আবার জানিয়েছেন, নির্বিঘ্নেই হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়েছেন। ইউটিউবে সেই ভিডিও পোস্টও করেছেন। রিয়াধের বাড়ি থেকে দোকানে যান তিনি। কেনাকাটা সেরে আবার ফিরে এসেছেন। সোয়ানের কথায়, “রাস্তায় কোনও কোনও গাড়ি থেকে একটু বেশি খেয়াল করলেও কেউ কিছু বলেনি।” তাই গর্বিত সোয়ান বলছেন, “আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে।’’ রাস্তায় নামার আগে কিছুটা উদ্বেগ অবশ্য ছিল সোয়ানের। কিন্তু এ বার ভয় কেটে গিয়েছে। তিনি চান, আরও বেশি করে মহিলারা গাড়ি নিয়ে পথে নামুক।
রিয়াধে আটক মহিলাদের থানায় নিয়ে যাওয়া না হলেও জেড্ডায় কিন্তু পেশায় ফোটোগ্রাফার এল মোসলিমানির দাবি, তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মন্তব্য, “আমি যা করছি, তা নিয়মবিরুদ্ধ কোনও কাজ নয়, সেটা বোঝাতেই একটু চক্কর কাটতে বেরিয়েছিলাম।” কিন্তু পথেই তাঁকে অনুসরণ করতে শুরু করে কয়েক জন। মোসলিমানির বক্তব্য, ওরা পুলিশেরই চর। ওদের দেখে মোসলিমানি তাঁর নিজের ড্রাইভারকে ফোন করে আসতে বলেন। কিন্তু তার আগেই তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তাঁকে গাড়ি না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হয়নি।
প্রবীণ মনোবিদ মাদিহা আল আজরৌশ বলছেন, “আমরা স্বাভাবিক জীবন চাই। গাড়ি চালিয়ে এক কাপ কফি খেতে যেতে পারি। বা আমার ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা করাতেও।”
আর যারা এই ফতোয়া দিয়েছিল, সৌদি আরবের সেই অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের কী বক্তব্য? মন্ত্রকের মুখপাত্র মনসুর আল-তুর্কি বলেন, “কেউ নিয়ম ভেঙেছে বলে শুনিনি।” অথচ রিয়াধের বেশ কয়েক জায়গায় পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়েছে। রাস্তায় কড়া নজর ছিল তাদের।
সেই নজরে ভয় পেয়ে পিছু না হটে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন নানা বয়সের মহিলারা। আর যাঁরা বাড়িতে বসে রইলেন, রাজার দেশের আইন কানুন কত দিন ঠেকিয়ে রাখবে তাঁদের, সেটাই জানতে উদগ্রীব গোটা বিশ্ব। |