হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে নিয়ে ফের সরকারি হাসপাতালেই যেতে হল এইচআইভি আক্রান্ত মাকে। দিন কয়েক আগে কৃষ্ণনগরের জেলা সদর হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন তেহট্টের ওই মহিলা। বুধবার চিকিৎসকরা তাঁকে ছুটি দিয়ে দেন। প্রশাসন ও হাসপাতাল সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার ওই মহিলার ভাসুর গাড়ি পাঠিয়ে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে না এনে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাপের বাড়ি। সেখানেও তাঁর ঠাঁই না হওয়ায় প্রশাসনের উদ্যোগে ফের তাঁকে ফিরিয়ে আনা হল তেহট্ট মহকুমা হাসপাতালে। মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবার সন্ধ্যায় বৃষ্টির মধ্যে ওই মহিলা সদ্যোজাতকে নিয়ে স্থানীয় একটি স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। শিশুটি বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছিল। তাই চিকিৎসার জন্য মা ও সদ্যোজাত দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে ঘর তৈরি হচ্ছে। সেটা পুরোপুরি তৈরি হয়ে গেলেই তিনি সেখানে সন্তানকে নিয়ে ফিরে যাবেন। আমরা ওই মহিলার স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।”
এইচআইভই সংক্রমণের কারণেঅ ওই মহিলাকে আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না, এমন অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন তার পরিবার, প্রতিবেশীরা। বরং দারিদ্রকেই কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন তাঁরা।
বছর দেড়েক আগে ওই মহিলার বিয়ে হয় স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে। সেই যুবক কর্মসূত্রে পুণেতে থাকেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার মাস পাঁচেক পরেই জানা যায় যে ওই দম্পতি এইচভিআক্রান্ত। তাঁরা তেহট্টের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন। স্বামী কাজে চলে যাওয়ার পরে তাঁর দেখভাল করতেন দিদি। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক বছর আগে এইচভিআক্রান্ত ওই মহিলার বাবা মারা যান। মা ফের বিয়ে করে আলাদা থাকেন। দিদির কাছেই মানুষ ওই মহিলা। জেলা সদর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই মহিলা বলেন, “আমাদের মা মেয়েকে বসিয়ে খাওয়ানোর ক্ষমতাও দিদির নেই। কোথায় যাব, কে আশ্রয় দেবেন জানি না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে ওই মহিলাকে কৃষ্ণনগর থেকে নিয়ে এসে মায়ের বাড়ির সামনে নামিয়ে দেয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। সেখানে ঠাঁই না পেয়ে পাশের দিদির বাড়িতে চলে আসেন ওই মহিলা। সমস্যা তৈরি হয় সেখানেও। এলাকার মানুষ তখন পাশের একটি স্কুলের বারান্দায় নিয়ে আসে আশ্রয় দেন মা ও সদ্যোজাতকে। খবর যায় প্রশাসনের কাছে। ওই মহিলার দিদি বলেন, “আমার স্বামীও বাইরে কাজ করেন। মাসে আট হাজার টাকা আয়। সেই টাকায় দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালায়। এই অবস্থায় বোন আর তার মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমরা তাই ওকে শ্বশুরবাড়িতেই পাঠাতে চেয়েছিলাম।”
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের কাকলি ভট্টাচার্য বলেন, “মেয়েটির মায়ের পরিবার অত্যন্ত গরিব। একটামাত্র ছোট ঘর। বৃষ্টি হলে জলও পড়ে। সেখানে তাঁদের মানসিক ভারসাম্যহীন দুই ছেলেও থাকে। এই অবস্থায় সেখানে সদ্যোজাতকে নিয়ে থাকা বিপজ্জনক। তাই সবাই চেয়েছে মহিলার দায়িত্ব তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনই নিক।” প্রতিবেশীরা বলছেন, “এইচআইভির জন্য ওঁকে থাকতে দেওয়া হয়নি, এটা ঠিক নয়। আমরা তো এই ঘটনা পাঁচ মাস আগেই জানতে পেরেছিলাম। তখনই তো কিছু একটা ঘটতে পারত।”
ওই মহিলার ভাসুর বলেন, “আমরা ভাড়া বাড়িতে থাকি। সেখানে ওদের আনা যাবে না। গ্রামের বাড়িতে ঘর মেরামত করে সেখানে ওদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।” |