পঁয়ত্রিশ পেরোলেই মহিলারা সাবধান! তার পরই বছরে অন্তত এক বার ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নির্ণয়ে বিশেষ রক্ত পরীক্ষা করানোয় জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তেমন ব্যথা, জ্বালা, অস্বস্তি বা জ্বরজারি কিছুই থাকে না। এই ক্যানসার ধরা পড়তে অনেক দেরি হয়ে যায়। শনিবার ডিম্বাশয়ের ক্যানসার-বিষয়ক এক আলোচনাচক্রে ডাক্তারেরা জানান, এই ক্যানসার প্রাথমিক পর্বে চিহ্নিত করার কিছু নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেরিয়েছে। তা এ রাজ্যে চালু হলে রোগের মোকাবিলায় সুবিধা হবে। এখন ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নির্ণয়ে রক্তের ‘সিএ১২৫’ নামে একধরনের প্রোটিন পরীক্ষা চালু আছে। কর্পোরেট সংস্থার কর্মীদের বার্ষিক স্বাস্থ্যপরীক্ষায় তা অন্তর্ভুক্ত করলে সচেতনতা বাড়বে বলে মনে করেন ডাক্তারেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে মেয়েদের যত রকম ক্যানসার হয় তার মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ডিম্বাশয়ের ক্যানসার। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার। ভারতে প্রতি ১০ জন মেয়ের ক্যানসার হলে তার মধ্যে তিন থেকে চার জনের ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা।
১৯৯৫ সালে আমেরিকার ‘ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’ এর চিকিৎসক-গবেষক ইয়ান জিউ ডিম্বাশয়ের ক্যানসার নির্ণয়ের একটি নতুন পদ্ধতি বার করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, ‘লাইসোফোসফেটিডিক অ্যাসিড’ (এলপিএ) নামে রক্তের একটি ‘লিপিড’ বা চর্বি বাড়লেই বোঝা যাবে মারণ রোগটি বাসা বেঁধেছে। ২০০৪ সালে এই আবিষ্কার বিশ্ব জুড়ে স্বীকৃত হয়। ইয়ান জিউও এ দিন কলকাতার আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন। ভারতে এলপিএ পরীক্ষা শুরু করার ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দিয়েছেন তিনি।
ইয়ান জিউ-এর পদ্ধতি কলকাতায় চালু করার জন্য সওয়াল করছেন কয়েকজন স্থানীয় চিকিৎসক-গবেষক। মলিকিউলার প্যাথলজির গবেষক শৌভিক সেনগুপ্ত যেমন বলছেন, “সিএ১২৫-এর পরীক্ষাটি শেষ কথা নয়। ডিম্বাশয়ে ক্যানসার থাকলেও অনেক সময়ে রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় সিএ১২৫ প্রোটিনের পরিমাণ ঠিকই আছে। ইয়ানের এলপিএ পরীক্ষাটি ঢের বিশ্বাসযোগ্য। খরচাও খুব বেশি নয়।”
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ শারদ্বত মুখোপাধ্যায় জানান, ডিম্বাশয়ের ক্যানসার দু’ধরনের হয়। টাইপ-১ বেশি দূর ছড়ায় না। অস্ত্রোপচারের পর রোগী অনেক দিন সুস্থ থাকেন। কিন্তু এতে কেমোথেরাপি কাজ করে না। আবার টাইপ-২ এ কেমো কাজ করলেও সেটি দ্রুত ছড়ায় এবং রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আশিস মুখোপাধ্যায়, জয়দীপ বিশ্বাস এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ কালীদাস বক্সিরা জানিয়েছেন, ৩৫-এর পরে যে মহিলারা খুব মোটা হয়ে যান, পেট বেড়ে যায়, মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথা, অস্বস্তি, পেট ফোলার অনুভূতি হয়, যাঁদের সন্তান হয় না বা ঋতুকালীন সময়ে পেট ও পায়ে অসম্ভব যন্ত্রণা হয় বা যাঁদের পরিবারে রক্তের সম্পর্কের কারও আগে ডিম্বাশয় বা স্তন ক্যানসার হয়েছিল, তাঁদের বছরে অন্তত একবার পরীক্ষা করানো উচিত। সিএ১২৫ প্রোটিন পরীক্ষা কিংবা আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে ডিম্বাশয়ের অবস্থা দেখে নেওয়া উচিত। |