সরকারি হাসপাতাল
দায়িত্বে স্বচ্ছতা আনতে উঠছে ওয়ার্ড মাস্টার পদ
পদের দায়িত্ব বহুবিধ। কিন্তু সুনির্দিষ্ট নয় কাজের এক্তিয়ার। সরকারি হাসপাতালের ‘ওয়ার্ড মাস্টার’ পদটি তুলে দিয়ে তাই ‘ফেসিলিটি ম্যানেজার’ নামের নতুন পদ আনতে চলেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। উদ্দেশ্য একটাই। সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার উন্নয়ন। তাই বেসরকারি হাসপাতালের আদলে, সরকারি হাসপাতালেও দায়-দায়িত্ব চিহ্নিত করতে চায় স্বাস্থ্য দফতর। ২২ অক্টোবর স্বাস্থ্যভবনে বিশেষ টাস্কফোর্সের বৈঠকে এ নিয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শুরু হয়েছে নতুন পদের জন্য দায়িত্ব নির্দিষ্ট করার প্রক্রিয়াও।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ফেসিলিটি ম্যানেজারদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে স্নাতক, যা এখনকার ওয়ার্ড মাস্টারদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার (অষ্টম শ্রেণি পাশ) থেকে বেশি। সেই সঙ্গে চাকরি পাওয়ার পর ‘হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট’ পাঠ্যক্রমের আদলে এসএসকেএম হাসপাতালে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তার পরই হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের সঙ্গে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে কাজ করবেন এঁরা। ফেসিলিটি ম্যানেজারদের পদোন্নতির সুযোগ থাকবে। তাঁরা অ্যাসিন্ট্যান্ট সুপার হতে পারবেন।
জেলার যে সব হাসপাতালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার নেই সেখানে সুপারের পরেই সব দায়িত্ব থাকবে এই ফেসিলিটি ম্যানেজারদের উপর। এখন রাজ্যে যে ৩৫০-৪০০ জন ওয়ার্ড মাস্টার রয়েছেন তাঁদের মধ্যে ১০ বছর বা তার বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের ৬ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফেসিলিটি ম্যানেজারের পদে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য চিকিত্‌সক সুব্রত মৈত্র।
কিন্তু নতুন এই পদ তৈরি হলে রোগীদের ঠিক কী উপকার হবে?
এম আর বাঙুর হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কথায়, “বেসরকারি হাসপাতালে ফেসিলিটি বা ফ্লোর ম্যানেজারেরা সব ঝক্কি সামলান। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে ওয়ার্ড মাস্টারমশাইরা বেশিরভাগ সময় নিজেদের ঘরে বসে থাকেন। কোনও দায়িত্ব নিতে চান না। ফেসিলিটি ম্যানেজারের পদ তৈরি হলে এটা আর হতে দেওয়া হবে না। তাঁরা যেমন ভাল বেতন পাবেন, তেমনই কাজ না হলে জবাবদিহিও করতে হবে।” তাতে যে আখেরে লাভ হবে রোগীরই, সেটা জানিয়ে দিলেন নীলরতন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন চিকিত্‌সক-বিধায়ক শশী পাঁজা। বললেন, “হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে সমন্বয়ের পাশাপাশি প্রতি দিন বিকেলে রোগীর বাড়ির লোকের সঙ্গে চিকিত্‌সকদের কথা বলানোর বিষয়টি পরিচালনা করবেন। এতে সুবিধা হবে রোগীরই।”
সহজ ভাষায় পরিষেবার মানোন্নয়ন এবং সরকারি হাসপাতালের কাজকর্মে স্বচ্ছতা আনতেই এই উদ্যোগ, দাবি স্বাস্থ্য দফতরের। এক বড়কর্তার কথায়, “আসলে এইভাবে আমরা সুপার, ডেপুটি সুপার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার, ফেসিলিটি ম্যানেজার, নার্সিং সুপারপ্রত্যেকের সুনির্দিষ্ট কাজ ভাগ করে দিতে চাইছি। তা না হলে দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেকের দায়িত্ব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
কিন্তু উদ্যোগটি নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরেই জাগছে দু’টি সংশয়। প্রথমত, এখনকার ওয়ার্ড মাস্টারদের জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ পর্যন্ত সবই করতে হয়। অনেকেরই সন্দেহ, তাঁদের জায়গায় উঁচু ডিগ্রিধারী-প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নতুন ছেলেমেয়েরা ফেসিলিটি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিলে এই সব দায়িত্ব আদৌ পালন করতে চাইবেন কি না। আরও প্রশ্ন, বর্তমানে কর্মরত ওয়ার্ড মাস্টারদের অনেকেই যোগ্যতার বিচারে ফেসিলিটি ম্যানেজার হতে পারবেন না। তাঁদের কী হবে?
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র সুমন বিশ্বাসের উত্তর, “একটা ভাল কাজের জন্য সামান্য কিছু লোকের সমস্যা হলে হবে। তাঁদের জন্য পরে চিন্তা করা যাবে। কাউকেই ফেলে দেওয়া হবে না।” আবার প্রথম সংশয়টি নিয়ে ভাবতে নারাজ স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী। তাঁর মতে, “বেসরকারি হাসপাতালে ফেসিলিটি ম্যানেজার বা ফ্লোর ম্যানেজাররা সবই সামলান। তাঁরা প্রত্যেকে উচ্চশিক্ষিত। তা হলে সরকারি হাসপাতালে তা করা যাবে না কেন? করিয়ে নিতে হবে। কী ভাবে হবে তার পরিকল্পনা করছি।”
ওয়ার্ড মাস্টার পদের বিলোপের উদ্যোগটিকে অবশ্য স্বাগত জানাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ স্টেট হসপিটাল ওয়ার্ড মাস্টার অ্যান্ড স্টুয়ার্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর সচিব শত্রুজয় মিত্রও। তাঁর মতে, “ফেসিলিটি ম্যানেজারদের দিয়ে হাসপাতালের একেবারে তৃণমূল স্তরের কাজ করাতে অসুবিধা হতেই পারে। তবু এই সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করছি, কারণ এতে এত দিনে ওয়ার্ড মাস্টারদের সামনে উন্নতির একটা রাস্তা খুলবে।”
উন্নতির পথে হাঁটতে চাইছে রাজ্য সরকার। পদোন্নতি চান ওয়ার্ড মাস্টাররাও। দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে সে জোড়া লক্ষ্যেই পৌঁছনো যাবে, আশা স্বাস্থ্য দফতরের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.