হ্যাঁ, না এবং ফের হ্যাঁ।
রেল মন্ত্রককে জমি দিলে ক্ষতিপূরণ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট পরিবারের এক জনের চাকরি বাঁধা। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন প্রস্তাবিত ডানকুনি-ফুরফুরা রেল প্রকল্প নিয়ে এমনই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তৃণমূলের হাত থেকে রেল কংগ্রেসের হাতে আসার পরেই প্রতিমন্ত্রী হয়ে সেই আশ্বাস ‘অবাস্তব’ বলে কার্যত বাতিল করে দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। বছরখানেক বাদে শনিবার ডানকুনি-ফুরফুরা রেলপথের কাজ দেখতে গিয়ে সেই অধীরই ঘোষণা করলেন, “জমিদাতাদের চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না।” যা শুনে ডানকুনির তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ তো ভোটের রাজনীতি! লোকসভা ভোট এগিয়ে আসার কারণেই এই চমক।”
তবে এই আচমকা অবস্থান বদল নিয়ে অধীরের ব্যাখ্যা, “ডানকুনি-ফুরফুরা প্রকল্পটি রেলের বিশেষ প্রকল্প হিসেবে ঘোষিত। এই ধরনের প্রকল্পে জমিদাতা পরিবারের এক জনকে চাকরি দিতে অসুবিধা নেই। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে রেল প্রকল্পটিও এমনই একটি প্রকল্প। তা ছাড়া, যে সব চালু প্রকল্পে জমি দাতাদের ইতিমধ্যেই চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রেও জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে নতুন করে কোনও প্রকল্পে জমিদাতাদের আর চাকরি দেওয়া অসম্ভব।” |
রেল সূত্রের খবর, ১৯.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল প্রকল্পে ইতিমধ্যে ফুরফুরা থেকে কল্যাণবাটি পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার (৫৪ একর) জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। ডানকুনির দিক থেকে গোবরা পর্যন্ত ১.২ কিলোমিটার জমি রেলের নিজের হাতেই রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩৫৮ জন জমিদাতা ক্ষতিপূরণের চেক হাতে পান। তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন তাঁদের মধ্যে ১১৪ জন চাকরিও পেয়েছেন। এর পরে রেল দফতর কংগ্রেসের হাতে চলে এলে নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত জমিদাতা পরিবারের ২৪৪ জন রেলে চাকরির জন্য আবেদন করেও তা পাননি। ৬৪৩ জন ইতিমধ্যেই জমি দিতে চেয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে সম্পত্তিপত্রও দিয়েছেন।
তবে ডানকুনি-ফুরফুরা রেল প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে এ দিনও সন্দেহ প্রকাশ করেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর। ফুরফুরা দরবার শরিফে তিনি বলেন, “এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ সরকারের সদিচ্ছার উপরেই নির্ভর করছে। জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি রেলের নয়, রাজ্যের। রেল বিজ্ঞপ্তি জারি করে তা সরকারের হাতে দিয়েছে। কিন্তু অধিগ্রহণের কাজে তেমন গতি নেই।” হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা অবশ্য বলেন, “রেলের তরফে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রই দেওয়া হয়নি। তাই জমি অধিগ্রহণের জায়গাতেই নেই প্রশাসন। প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তিও হয়নি।”
অধীরের ভোলবদলে জমিদাতারা বিভ্রান্ত। ফুরফুরার সুরজিৎ হাজরা ওই প্রকল্পে নয় শতক জমি দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “না আঁচালে বিশ্বাস নেই।” |