ঢাকার আর্জি, সমুদ্রসীমা দেখল আন্তর্জাতিক কোর্ট
মিষ্টি জলের বখরা নিয়ে মিটমাট কিছুতেই হচ্ছে না। তবে নোনা জল নিয়ে ঝগড়া মেটার পথে এক ধাপ এগোনো গেল। সৌজন্যে আন্তর্জাতিক আদালতের সালিশি।
বাংলাদেশের চাহিদা মতো তিস্তার জল দিতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি চাইলেও বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন চলছেই। সেই সময়ে আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতিনিধিদের ডেকে এনে সমুদ্রের জলসীমা নির্ধারণের সমস্যা সমাধানের রাস্তায় কয়েক ধাপ এগোল ঢাকা।
সমুদ্রের জল-সীমান্ত নিয়ে কয়েক বছর ধরেই মন কষাকষি চলছিল দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে। শেষ পর্যন্ত হামবুর্গের ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল ফর দ্য ল অফ দ্য সি’ (সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত)-এ ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ ঠোকে বাংলাদেশ। মূলত সেই নালিশ খতিয়ে দেখতেই আন্তর্জাতিক আদালতের এই দলটি হোভারক্র্যাফ্ট ও হেলিকপ্টারে চেপে গত তিন দিন ধরে ঘুরে বেড়িয়েছেন জলে-আকাশে। প্রতিবেশী দুই দেশের প্রতিনিধিদের পাশে নিয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখেছেন সমুদ্র-সীমান্ত।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান রুডিজার উলফ্রাম, অস্ট্রেলিয়ার ইভান অ্যান্টনি শিয়ারার, ঘানা-র টমাস আবোয়াগি মেনসা এবং ফ্রান্সের জঁ পিয়ারকোট। মেনসা সমুদ্র আইন বিশেষজ্ঞ এবং এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের পরামর্শদাতা।
পিয়ারকোট সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আদালতের বিচারক। গত বুধবার তাঁরা বাংলাদেশে পৌঁছন। বৃহস্পতিবার সে দেশের হোভারক্র্যাফ্টে চেপে সমুদ্র-সীমান্ত ঘুরে দেখেন। পরে মাঝসমুদ্রেই উঠে পড়েন ভারতের হোভারক্র্যাফ্টে। চলে আসেন ভারতের উপকূলে সুন্দরবনের কাছে। সেখানে তাঁদের জন্য প্রস্তুত ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীর দু’টি হেলিকপ্টার। তাতে চড়ে তাঁরা সমুদ্র-সীমান্তে পর্যবেক্ষণ চালান। সেখান থেকে আসেন কলকাতায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, বিদেশি এই প্রতিনিধি দলটি বেশ কিছু যন্ত্রপাতি ও কাগজপত্র এনেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশি হোভারক্র্যাফ্টটি আয়তনে ছোট হওয়ায় সে সব যশোরেই পড়ে থাকে। বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার সেই সব সরঞ্জাম কলকাতায় নিয়ে আসে। সেনাবাহিনীর এক অফিসারের কথায়, “১৯৭১-এ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে এই প্রথম ভারতীয় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার বাংলাদেশ ঘুরে এল।”
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রতিবেশী দুই দেশের যৌথ পর্যবেক্ষক দল নিরন্তর স্থল-সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক মেটানোর কাজ করে চলেছে। যেটুকু অংশ নিয়ে মতভেদ রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমেই মিটিয়ে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু সমুদ্র-সীমান্ত নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেও সমাধান সূত্র মিলছিল না। মন্ত্রকের এক অফিসারের কথায়, “বঙ্গোপসাগরে যেখানে আমরা আমাদের সীমান্ত বলে মনে করছি, তার কিছুটা তাদের অংশ বলে মনে করছে বাংলাদেশ। সমুদ্রে তো খুঁটি পুতে সীমান্ত নির্ধারণ করা যায় না। তাই, মীমাংসা সূত্র বেরোয়নি।”
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এই কারণেই বছর দুয়েক আগে জার্মানির সমুদ্র আইন সংক্রান্ত এই আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল ঢাকা। প্রথমে সেখানেই দু’পক্ষকে বসিয়ে মতভেদ মেটাতে চেয়েছিলেন বিচারকরা। কিন্তু, চেষ্টা সফল হয়নি।
তার পরেই সরেজমিনে সীমান্ত ঘুরে দেখার বিষয়টি ঠিক হয়। বিদেশ মন্ত্রকের সূত্র জানাচ্ছে, এই প্রতিনিধি দলের সদস্য ৩০ জন। ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ অফিসারেরা যেমন আছেন, রয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের অফিসারেরাও।
প্রশ্ন উঠেছে, এই নালিশের মাধ্যমে দিল্লিকে কি কোনও বার্তা দিতে চাইছে ঢাকা? এর আগে এক বার তিস্তার জলের ভাগ পেতেও আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মেটাতে রাজি হয় দুই দেশ। তাই বিশেষ জলঘোলা হয়নি।
কিন্তু, আন্তর্জাতিক আদালতকে ডেকে এনে সমুদ্রসীমা নিয়ে মতভেদ মেটানোয় ঢাকার এই সাফল্য নিশ্চিত ভাবেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আগামী দিনে তিস্তার ক্ষেত্রেও যদি তারা আন্তর্জাতিক আদালতে যায়, সেই অশনি সঙ্কেতই যেন দেখছে নয়াদিল্লি। হয়তো সেই কারণেই আন্তর্জাতিক আদালতের প্রতিনিধিদের এই সফর নিয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চাইছে না দিল্লি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.