মাজরা পোকা ও বাদামি শোষক পোকার আক্রমণে বেশির ভাগ জায়গায় মাঠের ধান মাঠেই পড়ে থাকছে বলে দাবি করেছেন চাষিরা। ধানজমিতে পোকা দেখা যাওয়ায় রীতিমতো দিশেহারা অবস্থা, জানিয়েছেন তাঁরা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, সম্প্রতি খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে এই সমস্যা।
কাটোয়া মহকুমা কৃষি আধিকারিক রবিউল হক বলেন, “মাজরা পোকা থেকে ধান গাছকে রক্ষা করা এখন অসম্ভব। কারণ মাজরা পোকা ধানের শিষের ভিতর ঢুকে বংশবিস্তার করছে। এই অবস্থায় প্রতিষেধক দিয়েও কোনও উপকার পাওয়া যাবে না। তবে বাদামি শোষক পোকা থেকে ফসল বাঁচানো সম্ভব। সেই বিষয়ে চাষিদের জরুরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।” কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কাটোয়া মহকুমায় ৭৬ হাজার হেক্টর জমিতে খারিফ মরসুমের ধান চাষ হয়। প্রায় প্রতিটি জমিতেই রয়েছে পোকার উপদ্রব।
চাষিরা জানাচ্ছেন, প্রথমে কয়েকটি বাদামি শোষক পোকা (স্থানীয় স্তরে এটি ভ্যানভেনে পোকা বলে পরিচিত) ধান গাছের কাণ্ডে বসছে। তখন এদের চোখে দেখা যাচ্ছে না। তার পরে ঝাঁকে ঝাঁকে কান্ডে এসে বসে থাকছে। ফলে কিছু দিন পরেই সবুজ গাছ লাল হয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলকোটের সিঙ্গত গ্রামের চাষি নবকুমার দাসের কথায়, “খালি চোখে দেখা না যাওয়ায় চাষিরা বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কিন্তু দু’একদিনের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে পোকা ধানগাছে আক্রমণ করছে। তখন কিছু করার থাকছে না।” একই কথা বলেছেন কাটোয়ার সুশান্ত কুমার মণ্ডল, কেতুগ্রামের হৃদয় দাস। স্থানীয় চাষি সুভাষ দাসের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বাদামি শোষক পোকার জন্যই। |
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠান্ডা-গরমের সমস্যার কারণেই দেখা যাচ্ছে পোকার উৎপাত। চাষিরা জানিয়েছেন, এর আগেই ফসলের উপর খোলা পচা রোগ, মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছিল। তার উপর এখন যোগ হল বাদামি শোষক পোকা। যে ভাবে গাছের উপর বারবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে আদৌ কোনও লাভ হবে কি না সেই নিয়ে চাষিরা যথেষ্ট সন্দিহান। কৃষিকর্তারা মনে করছেন, এই সমস্যার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। ঘন করে ধান রোয়ার জন্য গাছের ভিতর হাওয়া কম খেলে। আবার অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করার ফলেও সমস্যা ঘটে। আবার একই সময়ে গোটা মাঠ জুড়ে কীটনাশক প্রয়োগ হয় না। ফলে যেখানে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়, পোকাগুলি তখন পাশের খেতে চলে যায়।
|
প্রতিকারের উপায় |
• জমিতে ছোট ব্লক করে কীটনাশক ছড়ালে বাদামি পোকা কমবে।
• প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে ১০০ লিটার কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
• প্রতি বিঘায় ৪ কেজি করে কুইনালফস ১.৫%, মিথ্যাইল প্যারাসিয়ান ২% ও
ফেনভেলারেট ৪% যন্ত্রের সাহায্যে গুঁড়ো করে ছড়ালে ভাল হয়। |
|
কী ভাবে মিটবে এই সমস্যা?
কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটি জমিতে ছোট ব্লক করে কীটনাশক প্রয়োগ করলে গাছের সঙ্গে মিশে থাকা বাদামি শোষক পোকার বংশ বিস্তার কমানো যাবে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি নিয়মিত পরিচর্যা করলে পোকার উপদ্রব থেকে গাছকে বাঁচানো সম্ভব হয়। এখন যদি প্রতিটি জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করা যায়, তা হলে উপকারিতা পাওয়া যাবে। যন্ত্রের সাহায্যে কীটনাশক গুঁড়ো করে ছড়ালে ভাল হয়।
কৃষিকর্তাদের পরামর্শ, প্রতি বিঘায় চার কেজি করে কুইনালফস ১.৫%, মিথাইল প্যারাসিয়ান ২%, ফেনভেলারেট ৪% যন্ত্রের সাহায্য গুঁড়ো করে ছড়ালে ভাল হয়। হাতে করে ছড়িয়ে কোনও লাভ হবে না। একই সঙ্গে অ্যাসিফেট, অ্যাসিফেট ৫০% ও ইমিডাকলোপ্রিড ১.৮% মিশ্রণ কিংবা অ্যাসিটামিপিরিড এক গ্রাম প্রতি লিটার জলে গুলে স্প্রে করতে হবে। প্রতি বিঘায় ৮০ থেকে ১০০ লিটার কীটনাশক স্প্রে করতে হবে বলে জানিয়েছে কৃষি দফতর। |