টাটকা খবর
‘মুকুটটা তো পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই’

১ মে, ১৯১৯-২৪ অক্টোবর, ২০১৩
প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম শিল্পী মান্না দে। বৃহস্পতিবার ভোর ৩টে ৫০ মিনিটে বেঙ্গালুরুর বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। গত ৮ জুন গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে সেখানে ভর্তি ছিলেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে বুকের সংক্রমণ ও কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝে বেশ কয়েক বার তাঁর ডায়ালিসিসও হয়। আজ ভোরে চিকিত্সকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
পরিবার সূত্রে খবর, সাধারণ মানুষ যাতে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন তার জন্য সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তাঁর দেহ বেঙ্গালুরুর রবীন্দ্র কলা ক্ষেত্রে শায়িত ছিল। আজ দুপুরে বেঙ্গালুরুর হিব্বল মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর মৃত্যুতে সমগ্র দেশের চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, রাজনৈতিক-সহ নানা মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দার্জিলিং সফররত মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রয়াত শিল্পীর মেয়ে সুমিতা-র সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। শিল্পীর মরদেহ কলকতায় আনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ জানান। যদিও সেই উদ্যোগ মান্না দে-র পরিবারের আপত্তিতে সফল হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে না পেরে তিনি মর্মাহত।
এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার মান্না দে-র কন্যা সুমিতা অভিযোগ করেন, কলকাতায় তাঁর বাবার টাকাপয়সা নয়ছয়ের ব্যাপারে সুরাহা চেয়ে গত পাঁচ মাস ধরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনারের কাছে দরবার করেছেন। কিন্তু কোনও সাড়া পাননি।
চিরবিদায়...

শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন কন্যা সুমিতা।
শেষ যাত্রায় শিল্পী
মান্না দে নামে আমজনতা তাঁকে চিনলেও তাঁর আসল নাম প্রবোধচন্দ্র দে। ১৯১৯ সালের ১ মে তিনি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা পূর্ণচন্দ্র দে ও মা মহামায়াদেবী। ছোটবেলা থেকে কাকা সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে-র কাছে তাঁর সঙ্গীতশিক্ষার শুরু। ১৯৪২-এ কাকার হাত ধরেই তিনি মুম্বই (তত্কালীন বম্বে) পাড়ি দেন। কৃষ্ণচন্দ্র ছাড়াও তিনি ওস্তাদ আমান আলি খান ও ওস্তাদ আব্দুল রহমান খানের কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেন। কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গীত পরিচালনায় ‘তমন্না’ ছবিতে সুরাইয়ার সঙ্গে দ্বৈতকণ্ঠে তাঁর গাওয়া প্রথম গান ‘জাগো আয়ে ঊষা, পঞ্ছি বোলে জাগো’। ছবিতে গান করার সঙ্গে সঙ্গে কাকা কৃষ্ণচন্দ্র ও শচীনদেব বর্মনের সঙ্গে সহকারী সঙ্গীত পরিচালকের কাজ করেন। সঙ্গীতজীবন শুরুর ৬ বছরের মধ্যেই তিনি দেশের অন্যতম বিখ্যাত শিল্পীদের মধ্যে জায়গা করে নেন। ১৯৫৩ সালে সুলোচনা কুমারনের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাঁদের দুই কন্যা— সুরমা ও সুমিতা।

বাংলা, হিন্দি, ভোজপুরি, পঞ্জাবি, কোঙ্কনি, অসমিয়া, ওড়িয়া, গুজরাতি, মরাঠি-সহ বিভিন্ন ভাষায় তিনি চার হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। ১৯৭১ সালে তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ২০০৫ ও ২০০৭ সালে যথাক্রমে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার পান। এ ছাড়াও ৪টি জাতীয় পুরস্কার, রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি লিট, আলাউদ্দিন খান পুরস্কার-সহ দেশ বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার তিনি পেয়েছেন।

‘বড় একা লাগে...’
স্মরণে-বরণে মান্না:
প্রণব মুখোপাধ্যায়: বহুমুখী প্রতিভার এক অসাধারণ শিল্পী ছিলেন মান্না দে। তাঁর গায়কি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আমি গভীর ভাবে মর্মাহত। তিনি ‘সুরসম্রাট’ ছিলেন। তাঁর গায়কি ছিল স্বতন্ত্র। ভারত এক জন কিংবদন্তি শিল্পীকে হারাল।
জাকির হুসেন: শেষ ‘স্বর্ণকণ্ঠ’ শিল্পী চলে গেলেন।
লতা মঙ্গেশকর: আজ মহান শাস্ত্রীয় গায়ক যাঁকে আমরা মান্না দে নামে চিনি তিনি আমাদের মধ্যে নেই। আমার যতদূর মনে পড়ে, ১৯৪৭/৪৮-এ মান্না দে-র সঙ্গে আমি অনিল বিশ্বাসের ধ্রুপদী সঙ্গীত গেয়েছিলাম, যেটি তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম গাওয়া গান। মান্না দে খুব হাসিখুশি ও সরল স্বভাবের মানুষ ছিলেন, নিজের কাজের প্রতি তাঁর খুব শ্রদ্ধা ছিল। ঈশ্বরের কাছে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি। তাঁর আত্মাকে প্রণাম জানাই।
অমিতাভ বচ্চন: ভারতীয় সঙ্গীত জগতে নক্ষত্র পতন। তাঁর অনেক স্মৃতি ও গান আজ মনে পড়ছে। কাজ শুরু করার আগে প্রত্যেকের আজ এক মিনিটের নীরবতা পালন করা উচিত।
নরেন্দ্র মোদী: আমরা এক কিংবদন্তি শিল্পীকে হারালাম। তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে তিনি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
শাবানা আজমি: মান্না দে এক জন অসাধারণ কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন। ‘অ্যায় মেরি জোহরা জবি’, ‘দিল কা হাল শুনে দিলওয়ালা’, ‘পুছো না ক্যায়সে ম্যায়নে’— এই সব গানের মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন।
প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়: ইয়ে সার্কাস হ্যায় তিন ঘণ্টে কি...প্যাহলা বচ্পন...দুসরা জওয়ানি, তিসরা বুঢ়াপা হ্যায়। অউর উসকে বাদ রিয়েলিটি অফ লাইফ। ইউ আর উইথ আস। স্যালুট।
সারা জীবন তিনি সঙ্গীতের সাধনা করে গেছেন। শুধু শিল্পী হিসেবে নয়, মানুষ হিসাবেও খুব ভাল ছিলেন। তিনি মারা যাননি, তিনি অমর।
অনুপম খের: মান্না দে সেই কিংবদন্তি শিল্পীদের মধ্যে প্রথম, যাঁর গান আমি শিমলায় একটি অনুষ্ঠানে শুনেছিলাম। তিনি তাঁর কণ্ঠস্বরের মতোই ভদ্র ও শান্ত ছিলেন। তাঁকে খুব মিস করব। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
অভিজিত্: কফি হাউস থেকে আমি যে জলসাঘরে— সব গানের মধ্যে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তিনি ভগবানের দূত।
বাপি লাহিড়ী: উনি সুরসম্রাট ছিলেন। সঙ্গীত গুলে খেয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গীতজগত্ পিতৃস্থানীয়কে হারাল।
অপর্ণা সেন: ওঁর সঙ্গে আমার খুব বেশি দেখা হয়নি, সেই দুঃখ চিরকাল রয়ে যাবে। এই মৃত্যু পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক বিরাট ক্ষতি।
গানে গানে উনি আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
আরতি মুখোপাধ্যায়: উনি নিজেই সঙ্গীতের প্রতিষ্ঠান ছিলেন। ওঁর প্রয়াণে অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
অনুপ ঘোষাল: মান্নাদা এক পরিপূর্ণ শিল্পী।
অরুন্ধতি হোমচৌধুরী: আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়ে গেল। গানই আমার কাছে সব কিছু, সেই জায়গা থেকেই এই ক্ষতি।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী: প্রতিটি দেশের সাঙ্গীতিক বাবা চলে গেলেন। মান্না দে ভারতের রত্ন।
সুপর্ণকান্তি ঘোষ: সুরের দিক থেকে পৃথিবী খুব গরিব হয়ে গেল।
শান্তনু মৈত্র: যত দিন গান থাকবে, তত দিন মান্না দে বেঁচে থাকবেন।
হৈমন্তী শুক্লা: তিনি আমার বাবার মতো ছিলেন। আমি আজ যেটুকু জানি সবই তাঁর জন্য। তাঁর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হলাম। গানের জগতের বিরাট ক্ষতি হল।
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়: তাঁর প্রাপ্য তিনি পাননি। বাঙালি হিসাবে তাঁর কথা ভেবে গর্ব বোধ করি। তাঁর মতো শিল্পী কোনও দিন আসেনি, কোনও দিনও আসবে না।
সৃজিত্ মুখোপাধ্যায়: লেজেন্ড নেভার ডাইস। তবে একটা মন খারাপ তো থাকবেই। একে একে অনেকেই চলে গেছেন। আজ মান্না দেও চলে গেলেন।
সঙ্গীত যদি ঈশ্বর হয়, তবে নিঃসন্দেহে তিনি ঈশ্বরকে ছুঁয়েছিলেন। তাঁর মতো শিল্পী হাজার বছরে একবার জন্মায়।
দেবজ্যোতি মিশ্র: তিনি অত্যন্ত পরিশিলীত এক জন শিল্পী ছিলেন। তাঁর জীবন সুতপুত্রের মতো শুরু হয়েছিল। অসম্ভব সংগ্রাম করে তিনি প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। তাঁর মতো গান আর কেউ গাইতে পারবেন না।
শ্রীকান্ত আচার্য: মান্না দে-র মতো শিল্পী শতাব্দীতে এক বারই আসেন।
বাঙালীর প্রতিটি আবেগের প্রকাশ মান্না দে তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে করে গেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.