বউয়ের সোনার বালা থেকে ছেলের জন্য ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট
ডাকাতির কারণ শুনে চোখ কপালে উঠল পুলিশের
র পর ডাকাতির ঘটনা ঘটছিল। তদন্তে নেমেও ডাকাতির কুলকিনারা করতে পারছিল না পুলিশ। কারণ, সচরাচর যারা এ সব করে বেড়ায়, বা পুলিশের খাতায় যাদের বিরুদ্ধে অপরাধের নথি রয়েছে, তেমন কারও সঙ্গেই এ সব ডাকাতির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে ফের ঘটে গেল আর একটি ডাকাতি। কলেবরে বড় হওয়ায় পুলিশও জোর তদন্তে নামল। দেখা গেল এখানেও অপরাধীদের কোনও অতীত নেই। তবু হাল ছাড়া নয়। নানা সূত্র ধরে চলল খোঁজখবর। অবশেষে ফল মিলল হাতেনাতে। ধরা পড়ল ৬ জন নাটের গুরু। হাঁফ ছাড়ল পুলিশ। উদ্ধার হল ২টি রিভলভার, ৪টি মোটর সাইকেল, একজোড়া সোনার বালা, ২টি মোবাইল ও ব্যাঙ্কর পাশ বই-সহ কয়েক হাজার টাকা। কিন্তু ধৃতদের জেরা করতে গিয়ে পুলিশ কর্তাদেরই এ বার অবাক হওয়ার পালা। এ তো একেবারেই ফিল্মের গল্প।
বাদুড়িয়া থানায় ধৃতদের জেরা করার সময় একের পর এক উঠে আসা তথ্যে চোখ কপালে উঠছিল তদন্তকারী অফিসারদের। ধৃত ৬ জনেরই বয়স আঠারো থেকে বাইশের মধ্যে। তবে কেউই পেশাদার ডাকাত নয়। কারও বান্ধবীকে মোটর সাইকেলের পিছনে বসিয়ে ঘুরে বেড়ানোর সাধ তো কারও ইচ্ছা বউকে একজোড়া সোনার বালা উপহার দেওয়ার। কারও সাধ দামী মোবাইল ফোনের। কারও বা চিন্তা ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আর সেই ইচ্ছা পূরণ আর চিন্তামুক্ত হতেই এই ডাকাতি।
আদালতের পথে ধৃতেরা।
সম্প্রতি বসিরহাটের বাদুড়িয়ার নানা জায়গায় বাড়ছিল চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি। নানা চেষ্টা করেও দুষ্কৃতীদের নাগাল পাচ্ছিল না পুলিশ। কারণ, ‘নতুন’ এই দুষ্কৃতীদের কোনও অতীত রেকর্ড পুলিশের খাতায় নেই। এরই মধ্যে গত ৭ সেপ্টেম্বর বাদুড়িয়ার চাতরা সেতুর কাছে এক মুরগি-খাদ্যের ব্যবসায়ীর দোকানে হামলা হয়। রাত ১১টা নাগাদ জনা ছয়েক দুষ্কৃতী দোকানে ঢুকে তাঁর মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা, দামী মোবাইল, টিভি এবং ব্যবসায়ীর কর্মচারির কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। ওই ডাকাতির পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। কিন্তু কোথাও কোনও সূত্র মিলছিল না। এরই মধ্যে হঠাৎ বাদুড়িয়া থানার ওসি কল্লোল ঘোষের কাছে খবর আসে পোলতা গ্রামে সামান্য একজন মাছ বিক্রেতা সুজিত মণ্ডল এবং গাড়ির খালাসি রাকেশ পার দু’টি দামী মোটর সাইকেল কিনেছে। দু’জনের গতিবিধির উপরে নজর রাখা শুরু হয়। ইতিমধ্যে বাদুড়িয়ার ওই ব্যবসায়ীর ছিনতাই হওয়া মোবাইলের সূত্র ধরে জানা যায় সেটি ব্যবহার করছে বসিরহাটের চৌরচরের নজরুল গাজী। খোঁজ নিয়ে জানা যায় শুধু ওই মোবাইল ব্যবহারই নয়, নতুন একটি মোটর সাইকেলে সে তার বান্ধবীকে নিয়ে রোজই ঘুরতে বেরোয়। নজরুলের উপরে নজর রাখতে গিয়ে বসিরহাটেরই শিকড়া কুলিন গ্রামে অশোক রামের খোঁজ পায় পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে, ওই ডাকাতির পর তিনজন মোটর সাইকেল কেনে। তবে অশোক মোটর সাইকেল কেনেনি। সে একজোড়া সোনার বালা কিনেছে।
তদন্তে ওই গ্রামেই ডাকাতিতে জড়িত সুব্রত দাসের কথা জানতে পারে পুলিশ। জানা যায় মালতীপুর স্টেশনে তার একটা ছোট মুদির দোকান রয়েছে। তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে থাকে পুলিশ। সুব্রত ডাকাতির বখরার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা ছেলের ভবিষ্যতের জন্য খোলাপোতায় একটি ব্যাঙ্কে রেখেছে বলে জানা যায়। বাকি টাকা রেখেছে নিজের হেরোইনের নেশার খরচের জন্য। জেরায় জানা যায় ধৃতদের কেউ ক্লাস সিক্স, কেউ ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছে। টিভিতে সিনেমা ও সিরিয়াল দেখেই তারা ডাকাতির পরিকল্পনা আঁটে। কারণ এর চেয়ে সহজে টাকা উপায়ের আর রাস্তা নেই।
ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র, টাকা।
সোমবার আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ধৃতদের যখন গাড়িতে তোলা হচ্ছিল তখন অশোক বলে, “ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ার পরে চাউমিনের দোকান দিয়েছিলাম। বিয়েও করি। খুবই টানাটানির সংসার। বউটা অনেকদিন ধরেই একজোড়া সোনার বালার জন্য বলত। অত টাকা কোথায় পাব? এক রাত ‘কাজ’ করলে ইচ্ছাপূরণের স্বপ্নটা দেখায় সুব্রত। লোভ সামলাতে না পেরে রাজিও হয়ে যাই। এখন লোভেরই ফল ভুগছি।” আর সুব্রতর কথায়, “সামান্য মুদির দোকান। তার উপর সঙ্গদোষে হেরোইনের নেশা আছে। ঘরে ছেলেবউ আছে। কিন্তু কী করব, নেশার টাকা জোগাড়েই শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই নজরুল যখন বলল এক রাত জাগলে অনেক টাকা মিলবে রাজি হয়ে যাই। তবে টাকা পেয়ে ছেলের জন্য ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে ২৫ হাজার টাকা রেখেছি।” রাকেশ আর সুজিত বলে, “ওই ব্যবসায়ীর অনেক টাকা। ভেবেছিলাম সামান্য টাকা নিলে কিছু বলবে না। আমরাও মোটর সাইকেল কিনে বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে একটু আনন্দ করতে পারব। কিন্তু ওই নতুন মোটর সাইকেলই যে কাল হবে তা বুঝিনি।”

—নিজস্ব চিত্র।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.