প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘কিছু শহরে ট্রামের ভাবনা কেন্দ্রের, আশায় কলকাতা’ (১৩-৯) প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই পত্র। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের ইনস্টিটিউট অব আরবান ট্রান্সপোর্ট ও বণিকসভা ফিকি-র যৌথ সমীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়েছে: বর্তমানে মেট্রো রেল চলাচলে অত্যধিক ব্যয়, আশানুরূপ যাত্রীর একান্ত অভাব এবং এই ব্যবসা অলাভজনক হওয়ার দরুন দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গণপরিবহণের আয় হিসেবে দেশের মাঝারি মানের শহরগুলিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নব সাজে দূষণহীন বৈদ্যুতিন যান ট্রাম চালু করা যেতে পারে। কারণ, এক কিলোমিটার মেট্রো চালুর খরচ যেখানে ৩৫০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা, সেখানে একই ক্ষেত্রে ট্রাম চলাচলে ব্যয় হবে মাত্র ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। ওই সুপারিশে সায় দিয়ে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক মনে করছে ফরাসি বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ঘটাং ঘটাং শব্দবন্ধে চাকায় রবার বেল্ট পরিয়ে এখন ভারতে একমাত্র চলাচলকারী কলকাতার ট্রামেও পুনরুজ্জীবন ঘটানো সম্ভব। তা ছাড়াও, যাত্রী বহনের ক্ষমতা বাসের চেয়ে ট্রামের বেশি এবং চালানোর খরচ কম হওয়ায় ট্রাম অধিক লাভজনক। |
ইউরোপ ও আমেরিকার ৩৫০টির অধিক শহরে ট্রাম চালু আছে, আরও ৭০টি শহরে তা চালুর তোড়জোড় চলছে। শ্লথগতি, যানজট ও লোকসান এই তিনটি কারণে কলকাতায় বেশ কিছু রুটে ট্রাম তুলে দিয়ে ১৯৯২ সাল থেকে রাস্তায় বাস নামায় ট্রাম সংস্থা। ফ্রান্সের সেনেট সদস্য তথা ট্রাসবুর্গের মেয়র রোলাঁ রিস দিল্লিতে ফিকি ও ফরাসি দূতাবাস আয়োজিত ‘নেক্সট জেনারেশন ট্রামওয়েজ সলিউশন’ শীর্ষক আলোচনাসভায় বলেছেন, “লোকে বলে রাস্তায় ট্রামলাইন থাকলে গাড়ির গতি কমে যাবে। কিন্তু তাদের বোঝাতে হবে, গাড়ির সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এক সময় রাস্তায় কোনও ফাঁকা জায়গা থাকবে না। ট্রামের মতো পরিবহণ ব্যবস্থার কথা ভাবতেই হবে।”
প্রায় দেড় যুগ আগে সি এম ডি এ-র তৈরি মাস্টার প্ল্যানে বলা হয়েছিল, “শহরে মেট্রো রেলের সঙ্গে সংযোগকারী হিসেবে ট্রাম চালানো যেতেই পারে। কিছুটা আধুনিকীকরণ করে রাসবিহারী এভিনিউ, বিধান সরণি, অরবিন্দ সরণি, জাজেস কোর্ট রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, খিদিরপুর রোডে ট্রাম চালানো যেতে পারে। কারণ, ট্রামের কতগুলি সুবিধা রয়েছে। জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ সংরক্ষণ তো বটেই, বেশি সংখ্যায় যাত্রী পরিবহণের ক্ষমতাও রয়েছে ট্রামের।’’ সেই সঙ্গে সুপারিশ করা হয়েছিল, ‘‘বি টি রোড ধরে শ্যামবাজার থেকে ডানলপ ব্রিজ, ই এম বাইপাস, হাওড়ায় ফোরশোর রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে জোকা, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ইত্যাদি রাস্তায় লাইট রেল ট্রানজিট সিস্টেম চালু করা যেতেই পারে।’’ পাশাপাশি মার্কিন সংস্থার প্রোজেক্ট রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ‘‘অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ট্রাম একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটকের ভূমিকা নিতে পারে।’’ ওই রিপোর্টে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ট্রামের ব্যাপক বিস্তারের সম্ভাবনাগুলিও তুলে ধরা হয়েছিল।
মানসকুমার রায়চৌধুরী। কলকাতা-২৬
|
‘সাইকেল চড়েন? আপনি ভদ্রলোক নন’ (১০-৯) এই অপবাদ শুধু কলকাতায় নয়, গ্রামগঞ্জের সাইকেল চালকদেরও অভদ্র মানুষ ভাবা হয়। সেখানে আইনের কচকচানি না-থাকলেও যুগানুপযোগী হওয়ায় জাত খুইয়েছে সাইকেল। চারচাকা গাড়ি, মোটরসাইকেল তো বটেই, পদযাত্রীরাও তোয়াক্কা করেন না সাইকেল চালককে। আমি গ্রামের মানুষ। পেটের তাগিদে বর্তমানে বেলুড়ে থাকি। হাট-বাজার, অফিস পদব্রজেই সারি অথচ আমার সাধের সাইকেল গ্রামের বাড়িতে পড়ে আছে। সেটি চড়েই কোচবিহার (১৯৯৪-৯৯) ও বালুরঘাটে (২০০০-০২) ঘুরে বেড়িয়েছি। এখানে আসার আগে (মে ২০১৩) পর্যন্ত গ্রাম থেকে স্টেশন ১২ কিমি পথও প্রতিদিন আনাগোনা করেছি। কলকাতা ও তার থেকেও প্রাচীন হাওড়া শহরে সাইকেল চালানোর অসুবিধা শুধু পুলিশবাহিনীর জন্য নয়। এই দুই শহরে এক পশলা বৃষ্টিতেই জল থই থই করে। সাইকেল তো কোন ছার, পদযাত্রাই দুঃসাধ্য।
লক্ষ্মণ সাঁতরা। বেলুড় মঠ, হাওড়া |