বিশ্বের বৃহত্তম খনন বহুজাতিক বিএইচপি বিলিটন কার্যত ভারত থেকে তার কাজকর্ম গুটিয়ে নিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মহলের ইঙ্গিত, এ ক্ষেত্রেও বাধা সেই লালফিতের ফাঁস ও নীতিগত জটিলতা।
এই ব্রিটিশ-অস্ট্রেলীয় বহুজাতিক সোমবার জানিয়েছে, হাতে পেয়েও ৯টি তেল ও গ্যাস ব্লক তারা ছেড়ে দিয়েছে। কারণ সেগুলিতে খননকার্য চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিভিন্ন সরকারি ছাড়পত্র পেতে অস্বাভাবিক দেরির কারণেই তাদের এই সিদ্ধান্ত। তবে বিএইচপি তেল ও গ্যাস ব্লক ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও কারণ দেখায়নি।
এক বিবৃতিতে সংস্থা জানিয়েছে, “খনন সংক্রান্ত পরিকল্পনা ঢেলে সাজতেই এই উদ্যোগ। গত এক বছরে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা ও যোগাযোগ হয়েছে।” কিছু দিন আগেই বিএইচপি জানিয়েছিল, খননকার্য চালানো নিয়ে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অনুমোদন পেতে অস্বাভাবিক দেরি হচ্ছে।
ভারত যখন তার ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে বিদেশি লগ্নি টানতে মরিয়া, ঠিক তখনই বিএইচপি-র কাজ গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সার্বিক ভাবে এ দেশের ভাবমূর্তির উপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। জানুয়ারিতেই আরও কিছু তেল ও গ্যাস ব্লক বণ্টনে নতুন করে নিলাম হওয়ার কথা। ওই নিলামেও বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছ থেকে ভাল সাড়া মিলবে বলে আশা করছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে বিএইচপি-র সিদ্ধান্তে ধাক্কা খেতে পারে সম্ভাব্য বিদেশি লগ্নি, এমনই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের। এর জন্য কেন্দ্রের নীতিকেই দুষছেন তাঁরা।
এর আগেও নিউ এক্সপ্লোরেশন লাইসেনসিং পলিসি বা নেল্প ৭-এ বিএইচপি তাদের দেওয়া ৬টি ব্লক ছেড়ে দিয়েছিল। এগুলিতে তাদের মালিকানা ছিল ২৬%। নেল্প ৮-এ হাতে আসা ৩টি ব্লক ছেড়েও সংস্থা বেরিয়ে আসে, যদিও এগুলির ১০০% মালিকানাই তাদের ছিল। তবে নেল্প ৯-এ পাওয়া যে-ব্লকটি বিজি গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন, সেখানে ৫০% মালিকানা এখনও হাতে রেখেছে বিএইচপি।
কেন্দ্রের নীতি ও লালফিতের ফাঁসে পড়ে আরও কিছু বিদেশি সংস্থা এর আগে ভারত ছেড়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, নরওয়ের স্ট্যাটঅয়েল ও ব্রাজিলের পেট্রোব্রাস। ২০১০ সালে ওএনজিসি পরিচালিত ব্লকে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রাথমিক আগ্রহ দেখালেও শেষে পিছিয়ে যায় তারা। কারণ সেই সময় মতো সায় না-পাওয়া। ওএনজিসি-র তদানীন্তন চেয়ারম্যান আর এস শর্মাই এ কথা জানান। বস্তুত, বিপুল তেল আমদানির জেরে ভারতের চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি বাড়লেও দেশে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বিদেশি লগ্নি টানায় পিছিয়ে পড়ছে তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, সে জন্য এখনও বাধা আমলাতান্ত্রিক ফাঁস। |