গ্রাম থেকে শহরে, শহর থেকে গ্রামে
বৃত্তের বাইরে
স্থির বিন্দুতে রেখার পথ পরিক্রমা শেষে তৈরি হয় বৃত্ত। অথচ রোজকার এই নির্দিষ্ট বৃত্তের বাইরেও আছে অসীম জীবন। বৃত্তের বাইরে গিয়ে মিশে যায় গ্রাম শহরের সংস্কৃতি। পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পী মণিমালা চিত্রকরের ইচ্ছে তৈরি হয় দাদু বাণেশ্বরের পট আঁকা দেখে। দশ বছর বয়সে চলে আসেন নয়া গ্রামে। তার পর কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আজ পরিণত শিল্পী মণিমালা (বাঁ দিকে)। রেখা, রঙ আর চমৎকার গানের গলা আলাদা করে চিনিয়ে দেয় পটশিল্পীকে। ২০০১-এ রাজ্য পুরস্কার পান। ২০০৫-এ বোস্টন ও ওয়াশিংটন, পরের বছর নিউজিল্যান্ড-অকল্যান্ড। শহরের কাছে এ ভাবেই মণিমালার পটযাত্রা। ২০১২-য় জীবনকৃতি সম্মান জানিয়েছে ইন্দিরা গাঁধী রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয়। ‘লেজেন্ডারি পটচিত্রকর’ পুরস্কার দিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ অ্যাকাডেমিক ট্যালেন্ট সার্চ। পিংলায় অজস্র ছাত্রছাত্রীই এখন মণিমালার সংসার। পুরাণ ছাড়াও ওঁর পটের বিষয় হয়েছে নারী শক্তি, নারী পাচার, সৌরশক্তি, পণপ্রথা, স্বনির্ভরতা বা বাংলা ভাষার প্রসারের মতো সমসাময়িক বিষয়। জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় ২৬-২৭ অক্টোবর (১১-৪টে) আয়োজিত হয়েছে পটের একটি কর্মশিবির। মণিমালার সঙ্গে থাকবেন নুরজাহান, রেজিয়া, নিরঞ্জন ও আনন্দ চিত্রকর, শিক্ষাদান পর্বে। ভবিষ্যতে এই শিবিরের কাজ নিয়ে প্রদর্শনীর ভাবনা রয়েছে বলে জানালেন কিউরেটর বিজনকুমার মণ্ডল। অন্য দিকে গুজরাতের শিল্পী জ্যোতি ভাট শহর ছেড়ে গ্রামে ঘুরেছেন অন্য বৃত্তের সন্ধানে। বাবা ছিলেন ‘শিশু বিহার’ নামে চিত্রশিক্ষা সংস্থায়। জ্যোতির প্রাথমিক শিল্পচর্চা এখানেই। ১৯৫০-এ বরোদায় চিত্রশিক্ষা শঙ্খ চৌধুরী, কে জি সুব্রহ্মণ্যমের কাছে। ’৬১-তে বৃত্তি পেয়ে বিদেশেও যান। ১৯৬৬-তে চিত্র শিক্ষকতা শুরু ভাদোদরাতে। এ সময় তিনি ছবি তোলায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন এবং গুজরাতের প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরতে থাকেন। ১৯৬৯-তে ওঁর ছবি নিয়ে আয়োজিত হয় প্রদর্শনী ‘পেন্টার্স উইথ আ ক্যামেরা’। ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে ওঁর খ্যাতি। জ্যোতির ছবি নিয়ে ‘ফোটোগ্রাফস অব রুরাল ইন্ডিয়া’ শীর্ষক প্রদর্শনী এ বার কলকাতায়, সিগাল-এর প্রদর্শকক্ষে, তসবিরের উদ্যোগে। উদ্বোধন আজ, চলবে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত (সঙ্গে ডানে তারই একটি)। এ দিকে এ কালের ৪২ জন চিত্রশিল্পী ও ভাস্করের ভাবনায় ধরা পড়েছে দেবী দুর্গার রূপ। রানিকুঠি অরবিন্দ ইনস্টিটিউটের গ্যালারি লা ম্যের-এ ‘দুর্গা’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীটি চলবে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত।

কুমোরটুলি
গত বছর পুজোয় কলকাতা এসেছিলেন প্রবাসী বাঙালি শম্পা গুহ মজুমদার। তখন কুমোরটুলির বেশ কিছু ছবি তুলেছিলেন তিনি। শম্পার তোলা ৩৭টি ছবি দিয়ে এ বার সেজে উঠেছিল মুম্বইয়ের লোখান্ডওয়ালাতে সঙ্গীতশিল্পী অভিজিৎ ভট্টাচার্যের পুজো মণ্ডপ। সঙ্গে ছিল কলকাতার আরও ক’জন চিত্রগ্রাহকের তোলা কুমোরটুলির ছবিও। মুম্বইয়ের অন্যতম বিখ্যাত এই পুজোতে রোজকার ভোগ, ধুনুচি নাচ, ঢাক বাজানো এ সবের পাশাপাশি অন্যতম আকর্ষণ ছিল কুমোরটুলির ছবি। বিশেষ করে অবাঙালিদের কাছে। বাংলার এই বিখ্যাত উৎসবের জন্য কী ভাবে তিল তিল করে প্রতিমা গড়েন কুমোরটুলির শিল্পীরা, তাই-ই ফুটে উঠেছিল ছবিগুলোতে।

বিরল সম্মান
বাঙালির জীবনে প্রায় তেমন কিছুই আর ঘটে না গর্ব করার মতো। আবার ঘটেও! চিন্ময় গুহকে এ বার ফ্রান্স থেকে ‘নাইট অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স’ উপাধিতে সম্মানিত করা হল। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার তাঁকে শিরোপা দিল ফরাসি সরকার। ছবির দেশ, কবিতার দেশ ফ্রান্স গুণী ও শিল্পীকে মুক্ত মনে খুঁজে বের করে নিরপেক্ষ ভাবে সম্মান জানাতে সে দেশের জুড়ি নেই, তা সে ‘পথের পাঁচালী’-র জন্য সত্যজিতের মতো নবীন চলচ্চিত্রকারই হোন, বা রবীন্দ্রনাথের মতো আনকোরা চিত্রকর। সংস্কৃতি মন্ত্রকের দেওয়া এ-সম্মান এ বার চিন্ময় পেলেন জ্ঞানচর্চায় তাঁর স্বতন্ত্র অবদানের জন্যে, অন্য সম্মানিতরা গায়ক কিথ রিচার্ডস ও চলচ্চিত্রকার ট্যারানটিনো। ’৫৭-য় প্রবর্তিত এ-সম্মান দেওয়া হয় শিল্পসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্যে, পেয়েছেন টি এস এলিয়ট, অড্রি হেপবার্ন, বব ডিলান, মৃণাল সেন, বা এমন আরও অনেকে। এর আগে ২০১০-এও চিন্ময়কে ১৮০৮-এ নেপোলিয়ন-প্রবর্তিত ‘নাইট অব অ্যাকাডেমিক পামস’ উপাধিতে ভূষিত করেছিল ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রক, শিক্ষাক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সেতু তৈরির জন্যে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি, দু’টি ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির এ হেন সম্মান প্রাপ্তির এমন উদাহরণ বিরল।

বিশ্বপথিক
শিশু রবি বাবার কাছে শুনত উপনিষদ। সে ছিল তার এক রকম বড় হওয়া। আর এক ভাবেও বড় হয়ে উঠছিল সে। দেবেন্দ্রনাথের এই সন্তান নিজের মতো করে আবিষ্কার করছিল জগতের সৌন্দর্য। সে শুধু সুর আর ছন্দে নয়, প্রকৃতির রূপেও। খোয়াই থেকে সুন্দর নুড়ি পাথর খুঁজে এনে বাবাকে উপহার দিলে তিনি রবিকে উৎসাহ দিতেন আরও সুন্দর পাথর খুঁজতে। ক্রমে ভূপ্রকৃতি থেকে আকাশ। সেখানে তারার মেলা। দেখে মনে হয় যেন কাছাকাছি, পাশাপাশি। সত্য বড় রহস্যময়। নক্ষত্রেরা পাশাপাশি নয়, রয়েছে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। চোখে দেখে যাদের মনে হয় এত কাছে, তারা এত দূরে! রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনার শুরু নক্ষত্রদের পারস্পরিক দূরত্বে বিস্ময়বোধ থেকে। এমনটা দাবি করলেন অভিনেতা এবং আজীবন রবীন্দ্রানুরাগী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বিশ্বপথিক রবীন্দ্রনাথ বইটি প্রকাশ উপলক্ষে এক ঘরোয়া সভায়। বইয়ের লেখক বিকাশ সিংহ আলোচনা করলেন রবীন্দ্রনাথের স্পেস-টাইম ভাবনা। সময় যে এক মস্ত প্রহেলিকা, বিজ্ঞান যে সতত রত তার চরিত্র অনুধাবনে, এ সব জানিয়ে বিকাশ টানলেন কবিগুরুর লাইন ‘সীমার মাঝে অসীম তুমি...।’ বিকাশের দাবি, বিশ্বকবি ঠিকই বুঝেছিলেন যে সময় বারবার জন্মায়। তার ক্ষয় নাই, লয় নাই।

হস্তশিল্প
প্রদর্শনীতে মুর্শিদাবাদের শিল্পীদের তৈরি সিল্কের রুমাল দেখে বিস্মিত হন তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। খোঁজ শুরু করেন বাংলার হস্তশিল্পীদের। ইতিমধ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তশিল্পকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য একটি প্রস্তাব দেন। সেটি গৃহীত হয় চিফ সেক্রেটারি বেটসন বেলের প্রচেষ্টায়। ১৯১৬-য় গঠিত হয় বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। পরের বছর লেডি কারমাইকেলের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম আলোচনা সভা। উৎসাহ জুগিয়েছিলেন কাশিমবাজার ও বর্ধমানের মহারাজা, কোচবিহারের মহারানি, মুর্শিদাবাদের নবাব, রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলার হস্তশিল্পকে কেন্দ্র করে ওদের প্রথম বিপণি হগ স্ট্রিটে। এখন ঠিকানা ১১ ক্যামাক স্ট্রিট, অপেক্ষা এ জে সি বোস রোডে পুরনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়ার। হস্তশিল্পের প্রচার ও প্রসারে এই সংস্থা এখন কিংবদন্তি, শতবর্ষের দোরগোড়ায়। ২৬ অক্টোবর তাজবেঙ্গলের লনে এক অনুষ্ঠানে হাতে-কলমে কাজ দেখাবেন হস্তশিল্পীরা, অতীত দিনের কথা শোনাবেন শর্মিলা ঠাকুর। নৃত্যে প্রীতি পটেল ও শর্মিলা বিশ্বাস। থাকবেন প্রণয়চন্দ মহতাব।

ঝড়ের পাখি
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
চার দশক আগের পুজোর মুখে মহাজাতি সদনে যাত্রাতারকাদের নিয়ে কম্বিনেশন নাইট। পালা, ব্রজেন দে-র সেই বিখ্যাত ‘বাঙালি’। মোবারক স্বপনকুমার, নাসির খাঁ অভয় হালদার। আজ অ্যাকাডেমিতে আবার এক জুটি, সেই ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই। দীর্ঘকাল পরে পুরো নতুন রূপে মঞ্চস্থ হবে ‘নাট্যরঙ্গ’-এর ‘ঝড়ের পাখি’। ডিরোজিয়ো-র জীবন নিয়ে নাটক। ডিরোজিয়ো-র চরিত্রে স্বপনকুমারের ভাগ্নে সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধাকান্ত দেব অভয় হালদারের তৃতীয় পুত্র দেবশঙ্কর হালদার। এই প্রথম সুরজিৎ এলেন নির্দেশনায়।

ভাল নাটক
ভাল নাটকের সন্ধান এই উদ্দেশ্যেই ১৯৯০ থেকে ‘সুন্দরম’ আয়োজন করছে মৌলিক পূর্ণাঙ্গ নাটক রচনার প্রতিযোগিতা। এক সময় কুমার রায়, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়রা বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন। এ বছর বিচারকের দায়িত্বে নাট্য সাংবাদিক সুব্রত ঘোষ ও অভিনেত্রী চিত্রা সেন। এই প্রতিযোগিতার হাত ধরেই অনেক নাট্যকার বাংলা থিয়েটারে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এ বছর ২২ অক্টোবর ২৪ তম প্রতিযোগিতা শিশির মঞ্চে। ‘পার্থপ্রতিম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে বীরভূমের নাট্যকার সুব্রত নাগ’কে, তাঁর ‘ন হন্যতে’ নাটকটির জন্য। সুন্দর নাট্য সম্ভার নামে দুই খণ্ডে ২২টি পুরস্কৃত নাটকের সংকলন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। এ দিকে আকাশবাণী কলকাতা তৃপ্তি মিত্রকে শ্রদ্ধা জানাতে শোনাচ্ছে তাঁর বেতার-নাটকগুলি। ২৫ অক্টোবর তাঁর জন্মদিন। সে উপলক্ষে ‘তৃপ্তি মিত্র নাট্য সপ্তাহ’-তে (২৫-৩১ অক্টোবর) রেনবো চ্যানেলে প্রতি দিন দুপুর দুটোয় অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ‘বলি’, ‘বাঁশরী’, ‘বিরাজ বৌ’, ‘ছেঁড়া তার’, ‘মালিয়া’, ‘স্বজন’ এবং ‘তাহার নামটি রঞ্জনা’।

নন ভেজ আর্ট
বিশ্বায়নের তাগিদে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ক্রমেই যেন পরিবর্তিত হয়ে চলেছে। আধুনিক জীবনযাত্রা আর ব্র্যান্ডের প্রতি মোহ এখন সমার্থক। সবই যেন অন্ধ অনুকরণের দাসত্ব, ফলে কোণঠাসা আমাদের শেকড়ের সংস্কৃতি। এরই প্রতিবাদে তুলি ধরেছিলেন দিল্লির বনদীপ, নীলাঞ্জন আর কলকাতার অনির্বাণ (সঙ্গে তাঁর একটি কাজ)। এই ত্রয়ীর নিবেদন ‘দি নন-ভেজ আর্ট শো’। মায়া আর্ট স্পেসের উদ্যোগে এই প্রদর্শনী শুরু হবে ২৩ অক্টোবর রাজডাঙার মোহনা’তে। চলবে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত (২-৮টা)।

খুঁজতে খুঁজতে
‘পথ চলতি হঠাৎ হঠাৎ গাছের গায়ে বা বালুর তটে, ঘরের আসবাবে বা রাস্তার দেওয়ালে কোনও একটা রূপ হয়তো দেখতে পায় প্রদীপ, আর সেগুলোকে ধরে রাখে তার ক্যামেরায়।’ বটপাকুড়ের ফেনা-য় লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী প্রদীপ দত্তের এই অন্য ধরনের ফটোগ্রাফি শুরু হয়েছিল নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। ‘সূর্যাস্তের সময় আন্দামানে সমুদ্রের ধারে দেখেছিলাম নোনা জলে গাছের গুঁড়ি খেয়ে গিয়ে নানা রকম প্রতিকৃতি তৈরি হয়েছে।’ সেই থেকেই জল, বালি, মেঘ, ফাটা দেওয়াল ইত্যাদিতে খুঁজে বেড়াতেন এই ধরনের প্রতিকৃতি। এ রকম ৬০টি ছবি নিয়ে ২২-২৪ অক্টোবর (২-৮টা) গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় চলবে তাঁর তোলা ছবির প্রদর্শনী ‘আ ভয়েজ অব ফর্ম’। উদ্বোধন করবেন শঙ্খ ঘোষ। ২৬ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর প্রদর্শনীটি আবার দেখা যাবে সোদপুরের জলসাঘরে। সঙ্গে তারই একটি ছবি। এ দিকে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় আজই শেষ হচ্ছে রাজকুমার মুখোপাধ্যায়ের আঁকা ছবির প্রদর্শনী। শিল্পীর কথায়, তাঁর এই প্রদর্শনীর ছবির বিষয়বস্তু ‘রঙ নিয়ে খেলা’।

সুবর্ণজয়ন্তী
বারো বছর বয়সে কাকার সঙ্গে গিয়েছিলেন সুচিত্রা মিত্রের কাছে গান শিখতে। সে দিনটা আজ ঝাপসা। শুধু এটুকুই বলতে পারলেন, প্রথম দেখেই অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন। ‘মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিলাম যদি গান শিখতেই হয়, তবে ওঁর কাছেই শিখব। ডোভার লেনে কাকার বাড়িতে গান শেখাতে আসতেন সুচিত্রাদি।’ স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী পূর্বা দাম। মনে পড়ে সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে অনুষ্ঠান করার কথা। ‘খুব ভয় পেতাম। উনি গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সাহস দিতেন। বলতেন, ভয় কী, আমি তো আছি। তুই ঠিক পারবি। শেষ দিকে যখন ওঁর বাড়ি যেতাম, কী খুশিই যে হতেন। হাতটা ধরে চুপচাপ বসে থাকতেন।’ সঙ্গীত জীবনের পঞ্চাশটা বছর পেরিয়ে এই কথাগুলিই মনে পড়ে শিল্পীর। সুচিত্রা মিত্রের শেষ দিন পর্যন্ত তাঁর কাছেই গান শিখেছিলেন। এ ছাড়া মালবিকা কাননের কাছে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত এবং কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের কাছে অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রগীতি ও রজনীকান্তর গান শেখেন। তাঁর কণ্ঠে ‘মধুর রূপে বিরাজো’ অথবা ‘ওহে সুন্দর মম গৃহে আজি’ শুনতে বার বার ভাল লাগে। শিল্পীর সঙ্গীতজীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২২ অক্টোবর রবীন্দ্রসদনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ‘পূরবী সঙ্গীত’-এর পক্ষ থেকে তাঁর তিন ছাত্রী মন্দিরা, শ্রাবণী ও শুভ্রা ‘কেটেছে দিন গান গেয়ে মোর’ অনুষ্ঠানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবার আয়োজন করেছেন। উপস্থিত থাকবেন পূরবী মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, রবীন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। গান ছাড়াও অনুষ্ঠিত হবে নৃত্যগীতি আলেখ্য ‘বিরহ মিলন কথা’।

আব্বাস-স্মরণ
গানের প্রতি আগ্রহ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে। নিজে নিজেই গান শেখা। পরে কলকাতায় জমিরউদ্দিন খানের কাছে গান শেখেন। পল্লিগীতি, দেশাত্মবোধক, ইসলামি প্রভৃতি গান গাইলেও ভাওয়াইয়া-র জন্যই বেশি জনপ্রিয় আব্বাসউদ্দীন আহমেদ। জন্ম কোচবিহারে, ১৯০১-এর ২৭ অক্টোবর। উত্তরবঙ্গের পল্লিগীতি সংগ্রহে তাঁকে সাহায্য করেন তাঁর অনুজ, ভাওয়াইয়া-র কবি আবদুল করিম। আব্বাসউদ্দীনের গাওয়া বহু গানের স্রষ্টা তিনি। ভাটিয়ালি, জারি, সারি, ভাওয়ালি, দেহতত্ত্ব, বিচ্ছেদি প্রভৃতি গান জনপ্রিয় করেন আব্বাস। গ্রামে-গঞ্জে যেমন গেয়েছেন, তেমনই রেকর্ডে লোকগীতিকে বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয় করে তুলেছেন। নজরুল ইসলামকে ইসলামি গান লিখতেও অনুপ্রাণিত করেন। আব্বাসউদ্দীন বেশ কয়েক বছর কলকাতায় ছিলেন। তাঁর গান পাকিস্তান আন্দোলনে মুসলিম জনমত সংগঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। দেশভাগের পর তিনি তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগে যোগ দেন। আমার শিল্পী জীবনের কথা তাঁর স্মৃতিকথা। শিল্পকলা আকাদেমি ও অন্য নানা সম্মান পেয়েছেন। ১৯৫৯-এর ৩০ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। তাঁর কন্যা ফিরদৌসি রহমান ও পুত্র মুস্তফা জামান আব্বাসিও বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী। ‘আব্বাসউদ্দীন স্মরণ সমিতি’ দীর্ঘ দিন ধরে তাঁকে নিয়ে কাজ করছে। বেশ কয়েক বছর তারা ‘আব্বাস মেলা’ও আয়োজন করেছে। ২৭ অক্টোবর স্মরণ সমিতি ও গ্যালারি গোল্ড-এর (মেনকা সিনেমার কাছে) উদ্যোগে সন্ধে পাঁচটায় শিল্পীর জন্মদিনের বিশেষ অনুষ্ঠান। থাকবেন অমর পাল নাশিদ কামাল সুখবিলাস বর্মা তপন রায় শক্তিনাথ ঝা স্বপন বসু গাজি আব্দুল হাকিম ও অন্যরা।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.