১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ করতে হবে দুর্গাপুজোর মধ্যে, না করলে পরের তিন মাস কাজ মিলবে নাপুরুলিয়ার হুড়ার এক পঞ্চায়েতের তরফে এমনই বলা হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকার শ্রমিকদের একাংশের। দিন আনি-দিন খাই ঘরের ওই শ্রমিকদের দাবি, ১০০ দিনের প্রকল্পে পঞ্চায়েতে কাজ চেয়েও না পেয়ে তাঁরা ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। পুজোর মধ্যে তাঁদের কাজ করানো হয়েছে তারই ‘প্রতিক্রিয়া’য়।
পুজোর মধ্যে কাজ করানোর কথা মানলেও তা নিয়ে জোরাজোরির অভিযোগ মানতে চাননি সংশ্লিষ্ট লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। লিখিত আকারে কোনও অভিযোগ না হলেও বিষয়টি কানে পৌঁছেছে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “লিখিত ভাবে কাজ চাওয়ায় ১৫ দিনের মধ্যে কাজ দেওয়ার নিয়ম। সেই নিয়ম মানতে গিয়ে তেমন হলে পুজোর মধ্যে এক দিন কাজ করিয়ে, শ্রমিকদের পরে বাকি কাজ করানো যেত। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে বিশদে খোঁজ নেব।”
সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলা সফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজের অবস্থা দেখে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে যান। প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পে বছরে চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত ৪৫-৪৬ লক্ষ টাকার কাজ করিয়েছে পঞ্চায়েতগুলি। সেখানে চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকার কাজ করিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েত। স্থানীয় লায়েকডি গ্রামের বাসিন্দা জবকার্ডধারী জনা ৭৫ শ্রমিকের অভিজ্ঞতা, ১০০ দিনের প্রকল্পে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি তাঁদের কয়েকজন দিন ছ’য়েক কাজ পেয়েছেন। বাকিরা সেই সময়ে পঞ্চায়েতে কাজ চাইলেও পাননি। তাঁরা ব্লক প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। |
স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রশাসনের থেকে নির্দেশে পেয়ে লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েত কাজের আবেদন করা জবকার্ডধারীদের জানায়, অষ্টমীর দিন থেকে স্থানীয় লক্ষণপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুর সংস্কারের কাজ করতে হবে। লায়েকডি গ্রামের জবকার্ডধারী গৌতম যোগী, দীপক বাউরি, নিরঞ্জন বাউরি, বন্দনা বাউরিদের ক্ষোভ, “অষ্টমী তো বছরে একবারই আসবে। অনেকে উপোসও করে ওই দিন। তাই পুজোর পরে ওই কাজ করানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু পঞ্চায়েত আমাদের কথা শুনতে চায়নি।” জবকার্ডধারীদের দাবি, তাঁদের বলা হয়, ব্লক অফিস থেকে অষ্টমীর দিনেই কাজ করানোর নির্দেশ এসেছে। এখন কাজ না করলে পরের তিন মাস কাজ দেওয়া যাবে না।
অষ্টমীপুজোর দিন প্রায় ৭৪ জন শ্রমিক ওই পুকুরে কাজ করেন। পর দিন, নবমীতে বৃষ্টির মধ্যেও অনেকে কাজ করতে যান। তবে সে দিন আর কাজ হয়নি। পুকুর সংস্কার সেই থেকে বন্ধ। কেন এমন হল? পঞ্চায়েত প্রধান শেফালি মাহাতো বলেন, “ওই শ্রমিকেরা পুজোর মধ্যে কাজ করতে রাজি ছিলেন বলেই পুকুরটি সংস্কার করতে বলা হয়েছিল। জোর খাটানো বা পরে কাজ না দেওয়ার হুমকির অভিযোগ ঠিক নয়।” উপপ্রধান সাধনা সেনাপতিরও দাবি, “ব্লক অফিসের নির্দেশেই শ্রমিকদের কাজ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকেরা পুজোর মধ্যে কাজ করা নিয়ে আমাদের কাছে আপত্তিও জানাননি।”
তা হলে পুকুর সংস্কারের কাজ এখন বন্ধ কেন? জবাব এড়িয়ে প্রধান বা উপপ্রধান বলেছেন, “আমরা কাজটা দ্রুত শুরু করব।” তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানে পুজোর মধ্যে সরকারি কর্মীদের পুজোর ছুটি দিচ্ছেন, সেখানে তাঁরই দলের পরিচালনাধীন পঞ্চায়েত পুজোর দিনে কাজ করানোয়, এলাকায় শোরগোল পড়েছে। বিতর্ক এড়াতেই কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।
লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েতের এই ঘটনা কানে গিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি তৃণমূলের সৃষ্টিধর মাহাতোরও। তিনি বলেছেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে মানুষকে যথাসম্ভব বেশি কাজ দেওয়াটাই পঞ্চায়েতের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে প্রধানকে বলব শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টিও যেন কাজ দেওয়ার আগে ভাবেন।”
|
মাটির দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল চার মাসের এক শিশুর। শনিবার সকালে নানুর থানার দাসকল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রিনি দাস। বাড়ি নানুরের মোহনপুর গ্রামে। বাবা-মায়ের সঙ্গে দাসকল গ্রামে দাদুর বাড়িতে এসেছিল সে। একই ঘটনায় মৌসুমি দাস, কাবেরী দাস ও সুমিত্রা দাস নামে আরও তিন শিশু বোলপুর হাসপাতালে চিকিত্সাধীন। তাদের মধ্যে এক জনের অবস্থা সঙ্কটজনক বলে জানিয়েছেন বোলপুর মহকুমার সহ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুল। তাকে বর্ধমান মেডিক্যালে স্থানান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, দাসকল গ্রামের স্বপন দাসের খড়ের চালাবাড়ির পাশে এ দিন কচিকাঁচারা খেলছিল। সেখানে চাঁদমুখি দাস নামে এক বালিকার কোলে ছিল স্বপনবাবুর নাতনী রিনি। আচমকা ওই মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে। অন্য তিন শিশুর সঙ্গে রিনিও চাপা পড়ে। শব্দ শুনে পাড়া-প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। চার জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। সেখানে চিকিত্সকেরা রিনিকে মৃত বলে জানান। স্থানীয় বাসিন্দা হরিসাধন দাস বলেন, “আমার ভাগ্নি মৌসুমি পুজোর ছুটিতে এসেছিল। এমনটা ঘটবে ভাবতেও পারিনি। উত্সবের মরসুমে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।” |