দুষ্কৃতী সন্দেহে সিভিক পুলিশের এক কর্মীকে বেধড়ক পেটাল গ্রামবাসীরা। বুধবার রাতে এই ঘটনার পরে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার পুলিশ গিয়ে অরূপ ঘোষ নামে ওই যুবককে উদ্ধার করে। তাঁকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অরূপবাবুর শরীরের একাধিক হাড় ভেঙেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছে। সেই রাতেই কৃষ্ণগঞ্জের ওসি অনিন্দ্য বসুকে ‘ক্লোজ’ করে পুলিশ লাইনে সরানো হয়। জেলা পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “ওই থানা এলাকায় পরপর অপরাধের ঘটনা হচ্ছে। বুধবারও সিভিক পুলিশের এক কর্মীকে মারধর করা হয়েছে। তাই ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হল।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাতে স্থানীয় তারকনগরের দুই যুবক-যুবতী পাশের গ্রাম শিবনিবাসের মন্দিরে ‘বিয়ে’ করে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে দু’টি গাড়ি শিবনিবাস থেকে ফেরার সময়ে ফাঁকা মাঠে দুষ্কৃতীদের হামলা হয়। তারা লুঠপাট শুরু করে। খবর যায় শিবনিবাসের পুলিশ ফাঁড়িতে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই ঘটনাস্থলের আশপাশে অরূপবাবুকে দেখতে পেয়ে তাঁকেই মারধর করতে শুরু করেন ওই ‘বর-কনে’র আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসীরা। গাড়িতে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তারকনগরে। তারপর পেটাতে পেটাতে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তারকনগর স্টেশনে। কৃষ্ণগঞ্জের সিআই সত্যরঞ্জন চাকি ও ওসি অনিন্দ্য বসু স্টেশন থেকে অরূপবাবুকে উদ্ধার করেন। সেখানে গ্রামবাসীরা তাঁদের উপরেও চড়াও হন।অরূপবাবুকে মারধরের অভিযোগে পুলিশ ওই যুবতীর বাবা বিশ্বনাথ সরকার ও বিদ্যুৎ পোদ্দার নামে এক গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে।
কেন অরূপবাবুকে মারধর করা হল? এ দিন ‘বিয়ে’ করতে গিয়েছিলেন কমলকৃষ্ণ মণ্ডল। তাঁর কথায়, “ওই যুবক পুলিশের কর্মী হলে আমাদের লোকজনের তাড়া খেয়ে পালালেন কেন?” অরূপবাবুর দাদা রমেন ঘোষের দাবি, “আমার ভাই নির্দোষ। থানা থেকে দুষ্কৃতীহানার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল।” কমলকৃষ্ণবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “ওই যুবক একাই দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করবেন বলে ভেবেছিলেন? অন্যদের ছাড়া তাই একাই চলে এলেন? এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অরূপবাবু ওই এলাকায় গৃহশিক্ষকতা করতেন। গ্রামের অনেক বাসিন্দাদেরই বক্তব্য, অরূপবাবু খুবই ভাল ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, গোটা ঘটনাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। থানা থেকে কেউ অরূপবাবুকে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে।
এই ঘটনায় রাজনীতির রংও জড়িয়েছে। অরূপবাবুর বাবা বাদলচন্দ্র ঘোষ পুলিশের কাছে কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের ধীমান সরকার সহ কুড়ি জনের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাদলবাবু অভিযোগ, “ধীমান দাঁড়িয়ে থেকে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।” ধীমানবাবুর অবশ্য সাফাই, “আমি ঘটনাস্থলেই ছিলাম না। আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। তা ছাড়া, অরূপ যথেষ্টই ভাল ছেলে, তাঁকে কেন মারধর করা হল বুঝতে পারছি না।” |