উদ্বোধনের পরে বছর পার, বন্ধ ভ্রাম্যমাণ লোক আদালত
সাকুল্যে একটি গাড়ি। তার ভরসাতেই ঘটা করে উদ্বোধন হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ লোক আদালতের। ২০১২ সালের ১ জুলাই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও ঝাড়গ্রামে এই পরিষেবা চালু হয়। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। আর দেখা মেলেনি এই আদালত-গাড়ির। পরিকাঠামো আর সমন্বয়ের অভাবে শুরু হয়েই বন্ধ হয়ে গেল অতি প্রয়োজনীয় একটি পরিষেবা।
নানা আদালতে পাহাড়প্রমাণ মামলার বোঝা কমাতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে যাবেন বিচারকেরাই। চটজলদি মামলার মীমাংসা করে দেবেন। গত বছর ১ জুলাই ঝাড়গ্রাম ও ঘাটালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উদ্বোধনের দিন অনেক মামলার নিষ্পত্তিও করে দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি কল্যাণজ্যেতি সেনগুপ্ত। শুধু ঘাটালেই নিষ্পত্তি হয়েছিল ১৩৩টি মামলা ও ৫৮টি প্রি-লিটিগেশন কেসের। এত দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে আশা জেগেছিল।
সে দিন উপকৃতদের মধ্যে অন্যতম ঘাটালের বাসিন্দা মহাদেব চৌধুরী বলেন, “ভাইয়ের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ হতে মামলা করেছিলাম। বিচারপতিরা সমস্যা মিটিয়ে দেন।” ঘাটালের আর এক বাসিন্দা শঙ্করী করণের মামলা পড়ে ছিল এক বছর। সে দিন কয়েক ঘণ্টায় নিষ্পত্তি হয়ে যায়। স্বভাবতই গ্রামের মানুষের মধ্যে আশা জাগে, আর বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কোর্টে যেতে হবে না। সে আশা আজও অপূর্ণ রয়েছে। ঘাটাল বা ঝাড়গ্রাম, কোথাও আর এই পরিষেবা মেলেনি। অথচ তিন মাস অন্তর আদালত-গাড়ি আসার কথা ছিল।
গাড়িতেই লোক আদালতের কাজ। ২০১২ সালের ১ জুলাই ঝাড়গ্রামে।
পরিষেবার এই হাল কেন? নানা পক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্পষ্ট হল, আসল সমস্যা সমন্বয়ের। গাড়ির সত্ত্ব পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের। ওই সংস্থার রেজিস্ট্রার অঞ্জন কুমার সেনগুপ্ত জানান, একটিমাত্র গাড়ি। তাই দু-তিনটি জেলায় পরপর দু-তিন দিন কর্মসূচি ঠিক করতে না পারলে গাড়ি পাঠানোর খরচ ওঠা মুশকিল। কিন্তু জেলাস্তরের আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ কেন পরপর দিন ঠিক করতে পারছেন না? জেলা কর্তৃপক্ষ দুষছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সম্পাদক প্রকাশ বর্মন বলেন, “স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির থেকে কমর্সূচির তালিকা না পেলে আমরা গাড়ি চাইতে পারছি না।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি কী বলছে? মেদিনীপুর শহরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধারের কথায়, “বিচারকের সময় পেলে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সময় মিলছে না, দুটোই পাওয়া গেল তো কলকাতা থেকে গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না।”
তবে কি ভ্রাম্যমাণ আদালত আর চালু হবে না?
অঞ্জনবাবু অবশ্য ভরসা দিলেন, কেবল চালু থাকাই নয়, আদালত-গাড়ির আওতায় আসছে আরও কয়েকটি জেলা। পশ্চিম মেদিনীপুর ছাড়াও হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। “নানা জেলার আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করার ব্যাপারে জানানো হয়েছে। কর্মসূচির কথা জানালেই কলকাতা থেকে গাড়ি পাঠাব।”
গাড়ির সংখ্যা যদিও বাড়ছে না। সাকুল্যে একটি গাড়ি দিয়েই কাজ চলবে। পরপর কয়েকটি লোক আদালতের দিন ফেলে তিন-চারটি জেলার ‘প্যাকেজ’ তৈরি করতে হবে। সমন্বয়ের কাজ কী করে হবে, সে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

সহ প্রতিবেদন: দেবাশিস দাস


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.