বাড়ির সামনে পুলিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে এক প্রৌঢ়া। সঙ্গী পুলিশকর্মীদের হাতে রয়েছে বাড়িতে ঢোকার জন্য আদালতের নির্দেশ। তবু বাড়ির ভিতরে ঢুকতে পারছেন না!
কারণ বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবল হম্বিতম্বি করে যাচ্ছে নমিতা ঘোষ নামে ওই প্রৌঢ়ার ছেলে। নমিতাদেবীর অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ছেলে ইন্দ্রনাথ ঘোষ ওরফে অমিত। ইন্দ্রনাথের হম্বিতম্বি মেনে নমিতাদেবীকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশও। তার পর থেকে কার্যত আত্মীয়-বন্ধুদের আশ্রিতা হয়েই রয়েছেন নমিতাদেবী।
কী ঘটেছিল? নমিতাদেবীর অভিযোগ, ২০০৯ সালে স্বামী কাশীনাথ ঘোষ মারা যেতেই তাঁর ছেলে ইন্দ্রনাথ মা ও বোন সুস্মিতার উপরে অত্যাচার শুরু করেন। ২০১১ সালে সুস্মিতার বিয়ের পরে নমিতাদেবী তার একমাত্র আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠেন। ইন্দ্রনাথ প্রায়ই তার মাকে মারধর করত বলে অভিযোগ। বিষয়টি থানায় জানালেও কোনও দিন মামলা করেননি নমিতাদেবী। তাঁর কথায়, “ভেবেছিলাম, ছেলে নিজের ভুল বুঝতে পারবে।” কিন্তু চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল নমিতাদেবীকে মারধর করে বাড়ি থেকে বার করে দেন ইন্দ্রনাথ। এর পরেই আশ্রয়হীন নমিতাদেবী ছেলের নামে শিয়ালদহ আদালতে মামলা করেন।
|
নমিতা ঘোষ। |
নমিতাদেবী জানান, বাড়িছাড়া হওয়ার পরে অসুস্থ অবস্থাতেই এ দিক-সে দিক আশ্রয় নিতে হয়েছিল। জায়গার অভাবে মেয়ের বাড়িতেও থাকতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত মেয়ে সুস্মিতাই তাঁর এক বন্ধুর বাড়িতে মায়ের রাত গুজরানের ব্যবস্থা করেছেন। এ দিকে চলতি মাসের ৩ তারিখে শিয়ালদহ আদালতের প্রথম বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে নির্দেশ দেন, নমিতাদেবীকে তাঁর বাড়িতে ঢোকাতে হবে। তাঁর শান্তিপূর্ণ ভাবে থাকা এবং নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তা-ও নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর পরেই চিৎপুর থানার পুলিশকর্মীরা নমিতাদেবীকে নিয়ে তাঁর ৬৬/৩ বি টি রোডের বাড়িতে যান। কিন্তু ইন্দ্রনাথের বাধায় নমিতাদেবীকে বাড়িতে ঢোকাতে পারেননি তাঁরা। আদালতের নির্দেশ মেনে ঘরে ঢুকতে না দেওয়ায় ইতিমধ্যে চিৎপুর থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন ওই প্রৌঢ়া।
কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ নমিতাদেবীকে বাড়িতে ঢোকাতে পারল না কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে উত্তর ডিভিশনের এক কর্তার বক্তব্য, “আদালতের নির্দেশ না মানলে বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে। পুজোর জন্য আদালত এখন বন্ধ। খুললেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।” পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, আদালতে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই চিৎপুর থানার অফিসারের ওই বাড়িতে গিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ইন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে বলে, “আমি আদালতের নির্দেশ মানতে রাজি। কিন্তু একই ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতে পারব না।” তার দাবি, ওই বাড়িতে একটিই ঘর রয়েছে। মা ঢুকলে তাকে পরিবার নিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি ইন্দ্রনাথের এমনও অভিযোগ, “মায়ের চরিত্রের দোষ রয়েছে।”
ছেলের এই অভিযোগ শুনেই কেঁদে ফেলেছেন নমিতাদেবী। পরে জানান, ওই ঘরটি তিনিই ছেলেকে থাকতে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও, আরও কয়েকটি ঘর রয়েছে। সেখানে রাখা তাঁর গয়না ও সম্পত্তি ছেলে দখল করে রেখেছে। বিক্রি করে দিয়েছে তাঁর ঠাকুরের মূর্তি-সিংহাসন।
তবুও ছেলের শাস্তি চান না মা। বলেন, “ওর কিছু হোক, তা চাই না। শুধু স্বামীর দিয়ে যাওয়া আশ্রয়টুকু ফিরে পেতে চাই।” |