মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এখনও পর্যন্ত দেশের বাইরে পা দেননি। হার্ভার্ডের আহ্বান সবিনয় প্রত্যাখ্যান করেছেন। হিলারি ক্লিন্টনের আমন্ত্রণ ঝুলিয়ে রেখেছেন। কিন্তু নিজের রাজ্যে বসেই বারাক ওবামার দেশে এক রকম হ্যাটট্রিকের মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
মা-মাটি-মানুষের কাহিনি এ বার পাড়ি দিয়েছে নিউ ইয়র্ক। রাজনৈতিক লড়াইয়ের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এক বাঙালি মহিলার হাতে কী ভাবে শেষ পর্যন্ত পরাস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এক রাজ্যে তিন দশকের কমিউনিস্ট শাসন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ছবি এবং ধারাভাষ্য সহযোগে সেই ইতিহাস শুনবেন। শোনাবেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক এবং ক্যুইজ মাস্টার ডেরেক ও’ব্রায়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউ ইয়র্ক ক্যাম্পাসেই ব্রডওয়ে রুমে আজ, শুক্রবার ডেরেকের অতিথি-ভাষণে শ্রোতা ১০টিরও বেশি দেশের ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এবং সাংবাদিকতার পাঠরত ছাত্র-ছাত্রীরা।
মমতা সশরীরে যাননি। কিন্তু ২০১০ সালে তাঁর উত্থানের বৃত্তান্ত জেনেছিল ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভারও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এ বার কলম্বিয়ার পালা। সেই অর্থে মার্কিন মুলুকে মমতার হ্যাটট্রিক! নিউ ইয়র্ক থেকে ডেরেক বলছেন, “আমার নেত্রী আসলে ওয়ান-উওম্যান আর্মি, যার হাতে ভারতে কমিউনিজম পর্যুদস্ত হয়েছে! এটাই আমার বলার বিষয়।”
রাজনীতি-সহ সমাজের নানা ক্ষেত্র থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের বক্তব্য শোনার রেওয়াজ কলম্বিয়ার বহু দিনের। সাম্প্রতিক কালে যেমন ভারতীয় রাজনীতি থেকেই বিজেপি-র অরুণ জেটলি এবং জেডিইউ-এর এন কে সিংহ সেখানে বক্তৃতা সেরে এসেছেন। অতীতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এসেছিল সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির কাছেও। এখন ভারতীয় রাজনীতির সাম্প্রতিক সমীকরণের প্রেক্ষিতেই তৃণমূল নেত্রী চর্চার বিষয়। বস্তুত, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই বিষয় বেছেছেন কলম্বিয়ার উদ্যোক্তারা। বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচনের কাউন্টডাউন এই ভাবেই ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে দেখছেন আমেরিকার বাসিন্দারা। ‘ইন্ডিয়া ভোটস ২০১৪’, এই নামেই আজকের অনুষ্ঠানের পোস্টার পড়েছে নিউ ইয়র্কের ক্যাম্পাসে। ডেরেককেও তাঁর দলনেত্রীর রাজনৈতিক কেরিয়ারের বর্ণনা সেরে বলতে হবে ২০১৪-র আসন্ন নির্বাচনের কথা। এবং সেখানেও লোকসভা ভোটের পরে যুক্তরাষ্ট্রীয় জোট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কী ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে তৃণমূলের ভূমিকা, ব্যাখ্যায় আসবে সে কথা।
নিউ ইয়র্ক থেকে কলম্বিয়ার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ও সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ-এর ছাত্রী আকাঙ্খা টাংরি আনন্দবাজারকে জানাচ্ছেন, তাঁদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি আছে বলেই তাঁরা নিয়মিত ভারতীয় রাজনীতিকদের আমন্ত্রণ করেন ছাত্র-ছাত্রীদের মুখোমুখি হয়ে মত বিনিময়ের জন্য। আকাঙ্খার কথায়, “ওই বিষয়ের পড়ুয়া হিসাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কেরিয়ার নিয়ে জানতে আমাদের বিপুল উৎসাহ। তাঁর রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতো কেউ মমতার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলতে এসেছেন, আমরা খুবই আনন্দিত!”
আর স্বয়ং ডেরেকের বক্তব্য, “মমতাদি’র বিরামহীন লড়াইয়ের ফলে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তিন দশকের কমিউনিস্ট রাজ শেষ হয়েছে, তথ্য দিয়ে সেই ঘটনার প্রেক্ষাপটই ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করব।” ছবি ও ভাষ্য-সহ তৃণমূল নেত্রীর লড়াইয়ের অধ্যায়ের বর্ণনায় অবশ্যই সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম থাকবে। প্রথম পর্বে এই বৃত্তান্ত শেষ করার পরে দ্বিতীয় পর্বে ভারতীয় রাজনীতিতে ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো সোস্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং শেষ পর্বে ২০১৪-র লোকসভা ভোট নিয়ে বলার কথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদের। প্রতি বিভাগের সঙ্গেই থাকবে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের পর্ব।
দেখার এখন এটাই যে, মমতার এফডিআই-বিরোধিতা নিয়ে কোনও অস্বস্তিকর প্রশ্ন দলের ক্যুইজ মাস্টার-সাংসদকে সামলাতে হয় কি না!
|