লক্ষ্মী ঘরে আনতে রাত জাগছে গ্রাম
দুর্গাপুজো আসে, চলেও যায়।
গ্রামের বারোয়ারিতে পুজো হয় ঠিকই, তবে নামমাত্র। আসল জৌলুস তোলা থাকে লক্ষ্মী পুজোর জন্য। কালনা ২ ব্লকের হিজুলি গ্রামে দু’দশক ধরে এটাই রেওয়াজ। মায়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেয়েও এখানে চারদিনের জন্যই ঘরে আসে।
কল্যাণপুর পঞ্চায়েতে বেহুলা নদীর গা ঘেঁষে ছোট্ট গ্রাম হিজুলি। আঁকাবাঁকা রাস্তার এক পাশে বসত আরেক পাশে ধান জমি। বাসিন্দা মেরেকেটে আটশো। তাঁদের বেশিরভাগই কৃষক অথবা খেত মজুর। তবে এখন চাষের কাজ নয়, সকলেই ব্যস্ত লক্ষ্মীদেবীর ঘরে আসার প্রস্তুতিতে। গ্রামেরই এক প্রবীণ জানান, বছর কুড়ি আগে ফি বছর বর্ষায় বেহুলার জল উপচে ভাসত গ্রাম। নষ্ট হত সমস্ত ফসল। মাঠের ধান বাঁচাতে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হয়। তারপর থেকে দুর্গাপুজো আসলেই কোজাগরী লক্ষ্মীর অপেক্ষায় থাকেন তাঁরা।
মণ্ডপ গড়তে ব্যস্ত গ্রামের মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
বেহুলা সেতু পেরিয়ে গ্রামের উত্তরপাড়া। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের মাঝের মাঠে প্রতিবারই মাথা তোলে অঙ্কুর ক্লাবের মণ্ডপ। কিন্তু এ বার পুজোর আগের দিনও মাঠ ফাঁকাই পড়ে আছে। প্রশ্ন করতেই তড়িঘড়ি এসে গ্রামেরই কয়েকজন নিয়ে গেলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনে। সেখানে পুরো দক্ষযজ্ঞ। ছেলে-ছোকরা থেকে আধবুড়ো সকলেই ব্যস্ত মণ্ডপসজ্জায়। কেউ রং করছেন, কেউ বা খড়, মাটি, প্লাস্টিকের পাতা দিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন। তৈরি হচ্ছে বেশ কিছু মডেলও। গ্রামবাসীরা জানান, এ বছর তাঁদের থিম অরণ্যের অধিকার। অরণ্যের প্রয়োজন, প্রকৃতির ধ্বংসলীলা এবং দেদার গাছ কেটে ফেলায় বিপন্ন মানব সভ্যতা- এই তিন ভাগে ওই থিম ফুটিয়ে তোলা হবে। কিন্তু হাতে তো একটা রাত, এত সব হবে কখন? প্রশ্ন শুনেই মাথা তুললেন কার্তিক বাগ, পল্লব হাজরা, সুশীল মালিক, নির্মল মালিকদের মতো কয়েকজন যুবক। বললেন, “কম সময়ে কাজ করাটাই তো চ্যালেঞ্জ। বৃহস্পতিবার সারা রাত ধরে কাজ হবে। শুক্রবার সন্ধ্যার আগেই মণ্ডপ খুলে দেওয়া হবে।” ক্লাবের সদস্যেরা জানান, এ বার দুর্গাপুজোয় টানা বৃষ্টি হওয়ায় পুজো নিয়ে একটু অনিশ্চয়তা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গত দু’দিনে মেঘ কেটে রোদ ওঠায় জোরকদমে কাজ শুরু হয়েছে।
উত্তরপাড়া পেরিয়ে কয়েক পা এগোলেই দক্ষিণপাড়া নিউ তরুণ সঙ্ঘের পুজো। উত্তরপাড়াকে টক্কর দিতে হুগলির বাঁশাই থেকে রংবাহারি আলো এনেছেন তাঁরা। চার দিন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা যাতে বিপর্যস্ত না হয় তাই রয়েছে জেনারেটরের ব্যবস্থা। প্রতিমাতেও রয়েছে অভিনবত্ব। স্থানীয় হাটগাছা গ্রামের এক শিল্পী মুসুরির ডাল দিয়ে ফুট পাঁচেকের প্রতিমা গড়ছেন। জীবন্ত মডেল দিয়ে দেখানো হবে ‘যমলোকের বিচার কাহিনী’। ক্লাব সদস্য সুশান্ত মালিক, জগবন্ধু মণ্ডলেরা বলেন, “লক্ষ্মীপুজোয় গ্রামের সবচেয়ে বড় উৎসব। ছেলেমেয়েরা নতুন জামা রেখে দেয় পরার জন্য।”
ইতিমধ্যেই মেলা বসে গিয়েছে গ্রামে। বাড়িতে আসতে শুরু করেছেন আত্মীয়েরা। গ্রাম জুড়ে এখন একটাই প্রার্থনা, বৃষ্টি যেন না হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.