গোমতীর তীরে অন্য ঢাক
ই কলকাতারই মেটিয়াবুরুজে নির্বাসিত হয়ে এসেছিলেন লখনউয়ের নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। সংস্কৃতি ও শিল্পরসিক এই নবাবকে কুর্নিশ জানাতে পারেনি সে দিনের পরাধীন বাংলা।
এ বার পুজোয় সেই ওয়াজিদ আলি শাহকেই যেন কুর্নিশ জানাল লখনউ শহরের সহারা পরিবারের প্রথম দুর্গাপুজো। বিষ্ণুপুরী ঘরানায় তৈরি মন্দির আর মহিষাসুরমর্দিনীর মৃন্ময়ী রূপ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল নবাবদের তৈরি অসংখ্য রাজসিক স্থাপত্যের সঙ্গে। আর আকাশে বাতাসে বাংলার ঢাকের বোলের সঙ্গে, বিভিন্ন বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে যেন মিলে গেল নবাবের লেখা গান ‘বাবুল মোরা নইহার ছুট যায়ে...’
গোমতী নদীতে যথাসময়ে ভাসান হয়ে গেলেও আনন্দের রেশ রয়ে গিয়েছে সহারা পরিবারের অগণিত আত্মীয়দের মধ্যে। আর সেই আনন্দের রেশ নিয়ে কলকাতায় ফিরে এসেছেন ওই গোষ্ঠীর আহ্বানে আমন্ত্রিত সেলিব্রিটিরা। কলকাতায় যখন ‘মিশর রহস্য’ নিয়ে তুমুল উত্তেজনা, প্রিমিয়ারের উৎসব পার করেই প্রসেনজিৎ সপরিবারে পৌঁছে গিয়েছিলেন সহারার দুর্গাপুজোয়। অষ্টমী-নবমীর সারা দিনে নানা সময়ে বারবার হাতে তুলে নেন ঢাকের কাঠি। তাঁর সঙ্গে ঢাক বাজানোয় শামিল হয়েছিলেন গোষ্ঠী কর্ণধার সুব্রত রায় সহ আরও অনেকেই। “সহারাশ্রী সুব্রত রায়ের সঙ্গে আমার যোগাযোগ বহু দিনের। ওঁদের পুজোর প্রতিটা লোকাচারে যোগ দিয়েছি, এমনটা তো ইচ্ছে থাকলেও কলকাতায় করতে পারি না,” বললেন প্রসেনজিৎ।
মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় দুর্গা বন্দনা। নাচলেন হেমা মালিনী।
রসিকতা করে তিনি এও বললেন, “হ্যাঁ, এ বার ভাবছি পুজোয় ঢাক বাজাবারও বরাত নেব। ওইটাই তো শুধু বাকি আছে...হা হা হা!”
শুধু প্রসেনজিৎই বা কেন, সহারার গোটা পরিবারই ষষ্ঠীর বোধনের ঢাকে মেতে উঠেছিলেন। তনুশ্রী শঙ্করের ব্যালে গ্রুপের তরুণ-তরুণীরাও তাল মেলালেন উদ্দাম নাচে। ১০৭ একর জায়গা জুড়ে বিরাট ময়দানে সন্ধে নামতেই শুরু হয়ে গিয়েছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠান। মঞ্চ থেকে তখন সরাসরি একের পর এক স্তোত্র ও গান...কখনও ‘নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী...’ কখনও ‘রূপং দেহি, জয়ং দেহি...’
সারা ময়দান জুড়ে বিরাট মেলা। কোথাও হচ্ছে গুজরাতিদের ডান্ডিয়া নাচ, কোথাও বা হরিয়ানার লোকগান। অষ্টমীর দিন হেমা মালিনী নাচলেন দুর্গা বন্দনায়। কোটি কোটি রঙিন আলোয় সাজানো বিরাট ময়দানের মাঝখানে শিল্পনির্দেশক গৌতম বসুর তৈরি পুজো মণ্ডপ, তোরণ দেখতে দেখতে অতিথিরা এগিয়ে আসছিলেন বর্ণাঢ্য মঞ্চের দিকে। চারিদিকে মুখরোচক সব খাবারের স্টল। বাঙালি লুচি ছোলার ডাল, বেগুন ভাজা, আলুর দম, পায়েস থেকে নানা ধরনের লখনউভি কাবাব বিরিয়ানি সবই ছিল। খানাপিনার আয়োজনেও মিলে গেল যেন বাংলার সঙ্গে নবাবি কেতা। অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে হয়তো হাসলেন ওয়াজিদ আলি শাহ।
প্রায় চল্লিশ হাজার অভ্যাগতকে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত সুব্রত রায় বললেন, “ছোটবেলায় মামার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত। পাঁচশো-সাতশো লোক আসত। এখনও খুব মনে পড়ে সেই পুজোর কথা। বহু দিন ধরেই ইচ্ছে ছিল পুজো করার। মাকে অনেক দিন ধরেই বলতাম দুর্গাপুজো করব। মা বলতেন ‘তোরা পারবি তো করতে? অনেক নিয়মনিষ্ঠার ব্যাপার।’ ভেবেচিন্তে পিছিয়ে গেছি বহু বার আমরা ভাইবোনেরা। কিন্তু শেষমেশ এ বছর পুজোটা করেই ফেললাম। খুব ভাল লাগছে এত মানুষকে নিয়ে এই পুজোর আয়োজন করতে পেরেছি বলে।”
তবে আগামী বছর আর মণ্ডপ নয়।
স্থায়ী মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হবেন দেবী দুর্গা। কেমন করে হবে সেই পুজো তাই নিয়ে কানাকানি এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সহারা শহরে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.