লক্ষ্মীটি দোহাই তোমার

শোভা দে

টাকার গুরুত্ব আমার কাছে খুব কম। এর কারণ একটাই। টাকা আমাকে আকর্ষণ করে না। আবেগ নিয়ে টাকার দিকে ধেয়ে যেতেও পারি না। টাকা কী ভাবে কাজ করে, টাকার ভূমিকাই বা কী সেটাও আমি জানি না। সত্যি বলতে কি বুঝতেই পারি না। আর সব থেকে বড় কথা হল আমার ওপর অর্থের কোনও চাপ নেই। এই কারণে আমি খুব বেশি অর্থ উপার্জনও করি না। যেটুকু রোজগার করতে পেরেছি তা আমার এক বিশ্বস্ত অ্যাকাউন্টেন্ট সামলান। আর একটা কথা বলা ভাল। মানি ইজ সিরিয়াসলি আনসেক্সি!

ঋতু কুমার
আমার মনে হয় প্রত্যেকটি মহিলার মধ্যে একটা অন্তর্নিহিত ক্ষমতা আছে ব্যাঙ্কিং সম্পর্কে বোঝার। তা না হলে রান্নাঘরের বাজেটটা মহিলারা সামলান কী করে? একটা বাজেট মাথায় রেখে তার পরেই তো মহিলারা সংসারটা চালান। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যেটা হয়, স্টক সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে বেশিক্ষণ আলোচনা চলতে থাকলে বেশ একঘেয়ে লাগে। ক্লান্তিকরও মনে হয়। স্টকস আর শেয়ারের দেখাশোনা কিন্তু একটা হোল টাইম কাজ। তাই সেটা যাঁরা পেশাদার তাঁদেরকে দিয়ে করানোই ভাল।

রাখি সাওয়ন্ত
একেবারে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বারো বছর বয়স থেকে রোজগার করতে শুরু করি। তার পর আমার শো, আইটেম নাম্বার, স্বয়ম্বর করে যা রোজগার করেছি, তা দিয়ে আমি প্রচুর সম্পত্তি কিনেছি। বাড়ির লক্ষ্মী আমি। সরকার আজকাল এমন ব্যবস্থা করেছে যে অনলাইনে নিজের ট্যাক্স নিজেই দিয়ে দেওয়া যায়। আমি সেটাই করি। বিনিয়োগ ইত্যাদি ব্যাপারে আমার একটা ধারণা আছে। কিন্তু আমি জুয়াতে টাকা ওড়াই না। এই নয় যে বিশাল লাভ হবে বলে শেয়ারে ইনভেস্ট করে যা রোজগার করেছি তা জলাঞ্জলি দেব।


মালবিকা সরকার
আমাদের দেশে অনেকেরই ধারনা যে টাকাপয়সা ব্যাপারটা পুরুষদের বিষয়। কেমব্রিজে থাকাকালীন একদিন ওমলেট বানাতে হবে। দেখি আমার রুমমেট জিজ্ঞেস করছে গ্যাসবিলটা কী ভাবে শেয়ার হবে। আমি হতভম্ব। এ সব নিয়ে আলোচনা করতে আমি অভ্যস্তই ছিলাম না। প্রেসিডেন্সি ইউনিভাসির্টিতে উপাচার্য পদে নিযুক্ত হওয়ার পর ব্যস্ততা বেড়েছে। আমার স্বামী আইনজ্ঞ। আইন আর অঙ্ক দু’টোই ও ভাল জানে। বলব না যে ইনভেস্টমেন্টের ব্যাপারটা বুঝি না। তবু বিনিয়োগের আগে ওর সঙ্গে ক্রসচেক করে নিই। আসলে বৈষয়িক ব্যাপার নিয়ে চর্চায় আমি আনন্দ পাই না।

কিরণ বেদী
আমরা বোধহয় প্রথম জেনারেশনের মহিলা যারা রোজগার করে ট্যাক্স দিই। আগেকার দিনের মহিলারা গয়না গড়িয়ে সঞ্চয় করতেন। ওটাই ছিল ওঁদের নিরাপত্তা। বিয়ের সময় মেয়েদের গয়না দেওয়া হত যাতে তাদের ভবিষ্যতে কাজে লাগে। কিন্তু কোনও সম্পত্তিতে তো মেয়েদের সে ভাবে অধিকার ছিল না। চাকরি জীবনে আমার টিডিএস কাটা হত। পরে আরবিআই বন্ডস কিনতাম। আমার মনে হয় মেয়েরা বেশি ঝুঁকি নিতে চান না। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা ফিন্যান্স বোঝেন না বলে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ফাঁদে পড়ে যান। মনে হয় ধীরে ধীরে মেয়েরা ফিন্যান্সটা বুঝবে। তবে সেটা হতে সময় লাগবে।

তনুশ্রীশঙ্কর
বিয়ের পর আমি ছিলাম একজন গৃহবধূ। ফিন্যান্স সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। মাথায় থাকত যে, আনন্দ তো রয়েছেই। কিন্তু সব কিছু পালটে গেল আনন্দ চলে যাওয়ার পর। একেবারে গোড়া থেকে শিখতে হল সব কিছু। আজও যে সবটা বুঝি তা নয়। তবে বোঝার চেষ্টা করি। আমার ট্রুপের ডান্সারদের সব সময় বলি যে তারা যেন ফিন্যান্সের ব্যাপারটা সম্পর্কে জেনে নেয়। আরও একটা ব্যাপার আছে। ছোটবেলা থেকে তারা বাবা-দাদাদের উপর ভরসা করে এসেছে। বিয়ের পর স্বামীর উপর নির্ভরশীল হতেই তারা পছন্দ করে এই সব বিষয়ে। একটা কমফর্ট জোন থাকে। তবে ডাইকোটমি রয়েছে। এক দিকে মেয়েদের পেশার জন্য কষ্ট করতে অসুবিধে হয় না। সেখানে ‘নো ডিপেন্ডেন্স’। আর সেই মেয়েরাই আবার নিজেদের রোজগার কী ভাবে ইনভেস্ট করবেন তার দায়িত্ব দিয়ে দেন স্বামীদের উপর। দেয়ার ইজ আ সেন্স অব এসকেপিজম অ্যান্ড আ ড্যাশ অব লাভ ইন দিজ সারেন্ডার। হয়তো এর মধ্যে দিয়েই তাঁরা বোঝাতে চান যে স্বামীর উপরেই তাঁদের ভরসা।


সাইনা নেহওয়াল
পরিবারের লক্ষ্মী আমাকে বলাই যায়। তবে সেই লক্ষ্মীর ভাঁড়ারের চাবি আমার বাবার হাতেই এখনও। তার জন্য অবশ্য আমার কোনও আক্ষেপ নেই। আমার কোনও ব্যক্তিগত এজেন্ট নেই। তাই বাবা-ই করে এ সব। আমার মা বরাবরের হোমমেকার। তা ছাড়া সত্যি বলতে কী, এ সবে আমার তেমন ইন্টারেস্টও নেই। ব্যাপারগুলো আমি ঠিক বুঝি না সেটাও বলব না। আসলে বুঝলেও ঠিক আগ্রহ পাই না।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথমে কিছুই জানতাম না। আমার বাবা সব কিছু দেখে দেন। কত দিন বকুনি খেয়েছি কিছুই না জানার জন্য। শুধু মনে হত দূর ছাই, আবার এই সব কেন বুঝতে হবে। মাথার ওপর তো বাবা আছেন। তবে আজকাল আমি আগের থেকে বেশি আপডেটেড। বাবা যদি একশো পারসেন্ট জানেন তা হলে আমি ফিফটি পারসেন্ট অন্তত বুঝি। যা কিছু বাবা করেন সেটা সম্পর্কে আমাকে আপডেটেড রাখেন। আজকাল বুঝি যে শুধুমাত্র পেশাদার কাউকে রেখে দিলেই চলবে না। তিনি কী ভাবে কাজটা করছেন সেটা বোঝার জন্যও তো আমাকে কিছুটা পড়াশোনা করতে হবে। আমি জানি ইন্ডাস্ট্রির বেশ কিছু শিল্পী আর্থিক ব্যাপারগুলো না জানার জন্য ঠকেছেন। ‘ইকনমিক্স ওয়েলথ’ বলে একটা কাগজ বাবা রাখেন। আমাকে মাঝে মাঝে সেটা পড়তে পাঠিয়ে দেন। তাই জানি কোন কোম্পানির এখন কত স্টার রেটিং। শুধু ব্যাঙ্কে টাকা ফেলে রাখলেই যে চলে না সেটাও বুঝি। তাই এইটুকু খেয়াল রাখি যে কোথায় বিনিয়োগ করলে ইনকাম নন-ট্যাক্সেবল হবে।

সোহিনী সেনগুপ্ত
জানি না কেন যেন ব্যাঙ্কের কাজ করতেই ভয় লাগে। মা আমার থেকে একটু বেটার এই ব্যাপারে। আমার থেকে আর একটু বেশি সচেতন। টাকাপয়সার হিসেব রাখতে জানেন। সারাটা জীবনই টাকা রোজগার করতে পারিনি আমি। নিজে একটা সরকারি চাকরি করি। কিন্তু বহু সময়ই ‘উইদআউট পে’ হয়ে যাই। আমার কোনও ব্যাঙ্কব্যালেন্স নেই। এই জন্য আমার বাবা আর শ্বশুরমশাই খুব চিন্তিত। এই সব ফাইনান্স সংক্রান্ত খুঁটিনাটি জানতেও চাই না। এটা ঠিক যে, মেয়েদের লক্ষ্মী বলা হয়। আমার মনে হয় তার কারণ মেয়েদের ‘লাকি’ মনে করা হয়। কেন আমার এই ব্যাঙ্কের প্রতি অনীহা? আসলে একটা কারণ হতে পারে বাবাই সব সময় আমার এই সব ব্যাপারের প্রতি খেয়াল রাখেন।

শুভলক্ষ্মী পান্সে
আমি এমন কোনও পেশাদার নারীকে দেখিনি যিনি এই সম্পর্কে অজ্ঞ। ইলাহাবাদ ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে আমি মহিলাদের ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের কথা বারবার বলি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বরাবরই খুব স্বাধীনচেতা। একুশ বছর বয়সে নিজের নামে একটা রেকারিং অ্যাকাউন্ট খুলেছিলাম। আজকের পেশাদার নারীদের টাকা নাড়াচাড়া করতেই হয়। তাই আর্থিক খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানাটাও খুব জরুরি। বুঝতে চেষ্টা করলে খুব বেশি সময় লাগবে না। ফাইন্যান্সের ব্যাপারে তিনটে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে - কম ঝুঁকি, বেশি রিটার্ন ও নানা ধরনের বিনিয়োগ। আজকাল অনেক শেয়ার ব্রোকারই মহিলা। যদিও তাঁরা দেরিতে এই জগতে প্রবেশ করেছেন, আমার আশা অচিরেই বহু মেয়ে এগিয়ে আসবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.