সেনা উর্দি এখনও কৈশোরের দুঃস্বপ্ন মায়ানমারে
য়স সবে কুড়ি ছুঁয়েছে জ মিন পায়িংয়ের। দ্রুত আর অভ্যস্ত হাতে মোটরবাইকের নাটবল্টু খুলছিল সে। বছর ছয়ের অভিজ্ঞতায় এই সব কাজে এখন সে রীতিমতো চোস্ত। অথচ, শৈশবটা সেনা-উর্দিতে চাপা না পড়লে এখন তো তার সবে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর কথা! কিন্তু যে বয়সে বইপত্তর আর খেলার সবুজ মাঠই হওয়ার কথা ছিল সঙ্গী, তখনই সব ছেড়ে ছুটতে হয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। কাঁধে সেনাবাহিনীর গুরুদায়িত্ব। হাতে ভারী বন্দুক। জ মিন একা নয় এই ছবি মায়ানমারের ঘরে-ঘরে। এগারো থেকে তেরো বছর বয়সী কিশোরে ছেয়ে গিয়েছে দেশের সেনাবাহিনী তৎমাদাও।
জ মিন পায়িংয়ের বয়স তখন চোদ্দো। বাবা রিকশা চালান। আর মা ভোর রাতে উঠে বসেন বিনস সিদ্ধ করতে। সকালে বাজারে বিক্রি করবেন বলে। “টানাটানির সংসারে টাকার লোভ দেখালে নিজেকে আটকানো বেশ মুশকিল। তাই বাধ্য হয়ে নাম লেখালাম সেনাতে,” জানাল যুবক।
গত বছরই রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মায়ানমারের। সেনাবাহিনীতে টেনে আনা সব কিশোরকেই মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে তারা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠনের অফিসার স্টিভ মার্শালের কথায়, মায়ানমারে এখন নাবালক সেনার সংখ্যাটা যে ঠিক কত, তার কোনও হিসেব পাওয়া যায়নি। তবে প্রতিশ্রুতি মতো এক বছরে ১৭৬ জনকে ছেড়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। এই ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের দেওয়া সময়সীমায় মেয়াদ। কিন্তু এখনও বহু পথ হাঁটা বাকি, মানছেন সব পক্ষই।
বর্ধমান যেমন পশ্চিমবঙ্গের ধানের গোলা তেমনই মায়ানমারের বোগেল। আগের রাজধানী ইয়াঙ্গন থেকে সড়ক পথে ঘণ্টা চারেকের পথ। এখানেই বাড়ি জ মিন পায়িংয়ের। প্রথমে দীর্ঘ ষাট বছরের সামরিক শাসন। পরে তছনছ করে দেওয়া সাইক্লোন নার্গিস। ২০০৮-এর ঝড়ে প্রাণ হারান এক লক্ষ চল্লিশ হাজার মানুষ। এই যৌথ হানায় শুকিয়ে যায় একের পর এক খেত। ঘর-বাড়ি, দোকানপাট উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে নার্গিস। রাস্তায় গাদাগাদি করে রয়েছে অনাথ শিশুরা।
সেই সুযোগেই আসরে নামে সেনা। মার্শালের কথায়, “বাপ-মা মরা ছেলে, আজ আছে, কাল নেই। কেউ খেয়ালও করে না এদের। তাই এদের অনায়াসেই ভিড়িয়ে দেওয়া হয় সেনাবাহিনীতে।” তার উপর ঝড়ে হারিয়ে গিয়েছে জন্ম সার্টিফিকেট। ফলে বয়সের গেরোয়ও পড়তে হবে না। সব দিক থেকেই বল তখন সেনা কর্তাদের কোর্টে।
জ মিন পায়িংয়ের মতো একই পরিণতি হয় জ জ লিনের। নার্গিস ধেয়ে আসছে শুনেই ছেলেকে বৌদ্ধ মঠে রেখে আসেন বাবা সো পায়িং। সেই যে ছেলে বেপাত্তা হল, সাড়ে তিন বছর আর কোনও খোঁজ মেলেনি। কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়ানো কিছুই বাদ দেননি তিনি। আশা যখন ছেড়েই দিয়েছিলেন, ফোন করেন এক সরকারি আমলা। দুরু দুরু বুকে শোনেন হারিয়ে যাওয়া ছেলের গলাও।
সাড়ে চার মাসের প্রশিক্ষণ। তার পরই যুদ্ধক্ষেত্র। এর উপর ছিল সিনিয়রদের অত্যাচার। খাবার মুখে তোলার আগে লাথি মেরে ফেলে দিত হামেশাই। সমানে চলত মারধরও। “একটুও ভাল লাগে না এখানে। সুযোগ পেলেই পালাব,” ফোনে বাবাকে জানায় সেই কিশোর গলা।
সুযোগ আসে গত বছর জুনে রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে চুক্তির পরই। বিভিন্ন সরকারি দফতরে হত্যে দিয়ে ছেলেকে ছাড়াতে পেরেছেন সো পায়িং। তবু আতঙ্কের স্মৃতি পিছু ছাড়তে চায় না। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে, কিন্তু আবার কোনও দিন সেনারা তুলে নিয়ে যাবে না তো! সেনার পদ ছাড়লেও বৈধ কাগজপত্র পায়নি সো’র ছেলে। আন্তর্জাতির শ্রম সংগঠন তাকে একটা চিঠি দিয়েছে। শ্রম সংগঠনের অফিসার স্টিভ মার্শাল জানান, বাবা-মায়ের কাছে ফেরত পাঠানোর জন্য এই সিলমোহরই যথেষ্ট। কিন্তু তা-ও বিপাকে পড়ছে অনেকেই। কাজ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে, এই সব কিশোরদের নামে সেনা আদালতে মামলা ঠুকে দিচ্ছে সেনাবাহিনীর অনেক নিচু তলার কর্মী। ফলে একটা গেরো কাটতে না কাটতেই আবার নতুন সমস্যা।
মার্শাল জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীর কাঠামো এখনও যা, তাতে এই সব কিশোর-যুবকদের শুষে নেওয়ার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে। চাইলেই আগাম অবসর নিতে পারেন সেনার প্রবীণ অফিসার। কিন্তু বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমলে চলবে না। তাই কম বয়সীদের লোভ দেখিয়ে সেনা বাহিনীতে আনেন। দেশের অর্থনীতির যা চিত্র, তাতে সামান্য এক বোতল কেরোসিন পাওয়ার জন্যও ফাঁদে পা দেয়।
তবে গত ষোলো মাসে ছবিটা একটু বদলেছে। রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডে বড় হোর্ডিং। ছোট-খাটো শরীরে সেনার ঢোলা পোশাক পরা যুবক। নীচে লেখা এ কোথায় যাবে, স্কুলে না সেনাবাহিনীতে? ইউনিসেফের এ রকম লাগাতার প্রচার তো রয়েছেই। সাহায্যের জন্য টেলিফোনে হেল্পলাইন নম্বরও খোলার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু সেনা না হয় মুক্তি দিল কিশোরবাহিনীকে। মায়ানমারে বিদ্রোহীদের দলেও যে রয়েছে আরও শত শত নাবালক। তারা কবে ছাড়া পাবে? কী ভাবে?
প্রশ্নগুলো সহজ। উত্তর জানে না কেউই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.