বারোয়ারি পুজো তো আছেই। তার সঙ্গে রয়েছে বাড়ির পুজো। বসিরহাট, সন্দেশখালির বিভিন্ন জায়গায় কোথাও বাড়ির পুজো রূপ পেয়েছে বারোয়ারির, কোথাও বা বারোয়ারি পুজো হয়ে উঠেছে বাড়ির পুজো।
বাহাত্তর বছর আগে সন্দেশখালির হাটগাছা গ্রামে শুরু হয়েছিল পুজো। সূচনা করেন গ্রামেরই শুকদেব মৃধা নামে এক জন প্রথমে শিবের পুজো শুরু করেন। বৃন্দাবন থেকে রাধাগোবিন্দ ও কাশি থেকে শিবের মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করা হয় মন্দিরে। কিন্তু গ্রামবাসীদের কথা মাথায় রেখে পরে ওই পরিবারেরই ছেলে রজনী মৃধা ও তাঁর পাঁচ ভাই নাটমন্দির করে দশভূজার পূজো শুরু করেন। বাড়ির নাটমন্দিরে চাঁদোয়া খাটিয়ে তার তলায় বসানো হয় প্রতিমা। সেই সময়ে পরিবারের সকলে শিকড়ের টানে বাড়ি ফেরেন। পুজোর দিনগুলোয় অন্নভোগ দেওয়া হয় দেবীকে। বাড়িতে বানানো হয় নারকেল নাড়ু আর নানা খাবার। বাড়ির নাটমন্দিরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মৃধা ঘেরির গিয়ে মিশেছে রায়মঙ্গল নদীতে। দশমীর দিন বাড়ি থেকে বাঁশের দোলায় চাপিয়ে দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় গৌড়েশ্বর নদীর ধারে। সেখানেই নৌকায় তোলা হয় প্রতিমা। তারপর কালিন্দী, গৌড়েশ্বর ও রায়মঙ্গল নদীর সঙ্গমস্থলে সাত পাক ঘোরানোর পরে দেবী বিসর্জন হয়।
আর রয়েছে বসিরহাটের ভবানীপুর গ্রাম। মার্টিন কোম্পানির রেললাইনের পাশে ফুটে থাকা কাশ আর শিউলির গন্ধে এক সময়ে ভরে যেত। ছিয়াত্তর বছর আগে গ্রামের সন্তোষ মজুমদার প্রতিবেশীদের নিয়ে গোলপাতার ছাউনি ও বাঁশের চটার বেড়া দেওয়া ঘরে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। তার ধারাবাহিকতা রয়েছে এখনও। তবে পুরনো ঘরে নয়, প্রতিমার জন্য এখন রয়েছে পাকা মণ্ডপ। এক সময়ে ভবানীপুরে চাল চিনির কল ছিল বলে এলাকার নাম হয় কলবাড়ি। পুজোর সময়ে একবার এলাকার বিশেষ কেউ অর্থাভাবে দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেননি। সেই সময়ে মজুমদারেরাই পুজো করেন। সেই থেকে এই বারোয়ারি পুজো মজুমদার পরিবারের পুজো বলেই খ্যাত। পরিবারের বড় বউ অসীমারানি গ্রামের মানুষের কাছে আদরের মামণি। এখনও নবমীর দিন গ্রামের সবাইকে একাসনে বসে খাবার পরিবেশন করেন তিনি। গরিবদের মধ্যে পোশাক বিতরণের রীতি আজও অটুট আগের মতোই। |