ষষ্ঠীতেই মহাষ্টমীর ভিড় মণ্ডপে |
ইঙ্গিত মিলেছিল চতুর্থী থেকেই। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় অধিকাংশ পুজোর উদ্বোধনের পরে মণ্ডপে মানুষের ঢল নামাটা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। মহাষষ্ঠীর আকাশে মেঘ কেটে ঝলমলে রোদ দেখা দিতেই হুগলি ও হাওড়ার নানা প্রান্তে শুধুই জন-বিস্ফোরণ। শুরু হয়ে গেল পুজো। আলোয় ঝলমল করছে অলি-গলি।
শ্রীরামপুরের জগন্নাথ ঘাট লেন (লক্ষ্মীঘাট) সর্বজনীনে দূষণ মুক্ত পৃথিবী গড়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় এই পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের লাইন প্রায় জিটি রোড ছুঁয়ে ফেলে। নেহরুনগরের ভ্রাতৃ সঙ্ঘ মাঠ জুড়ে কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার হিসেব বলছে, মণ্ডপ থেকে অন্তত ৫০০ মিটার পর্যন্ত লাইন পড়েছে। ঘণ্টা দু’য়েক পরে সেই ভিড় জিটি রোড ছুঁয়ে ফেলে। মাহেশ বোসপাড়া, ভাগীরথী লেন, আইপিসি, নিউ বয়েজ ক্লাবের প্রতিমা দেখতেও দলে দলে লোক ভিড় জমিয়েছেন। মাহেশ থেকে শ্রীরামপুর জুড়ে জিটি রোডের দু’ধারে আলোর বন্যা। কোথাও সুদৃশ্য আলোর গেট। কোথাও এলইডি দিয়ে রকমারি মডেল। সেই আলো জনতাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছে মণ্ডপে।
এ দিন শ্রীরামপুরের সাংসদের পুজো ৫ ও ৬ এর পল্লি এবং ব্যবসায়ী সমিতির উদ্বোধন করলেন অভিনেত্রী রাইমা সেন। বৈদ্যবাটির জোড়া অশ্বত্থতলা, বাদামতলা, বেণী ব্যানার্জি লেন বা কোন্নগরে জিটি রোডের ধারে দক্ষিণপাড়া সর্বজনীন প্রতিমা, হিন্দমোটর ইউথকোর সর্বত্রই একই ছবি। উত্তরপাড়ার সিএ মাঠে মনোরম মণ্ডপ দেখার পাশাপাশি মাঠের খোলা হাওয়ায় গল্পগুজব জমে উঠেছিল। জয়কৃষ্ণ স্ট্রিট, বিকে স্ট্রিট আলোয় ঝলমল করছে। চণ্ডীতলা নবজাগরণ সঙ্ঘ, ডানকুনি ভ্রাতৃ সঙ্ঘ, নিউ রামকৃষ্ণপল্লি সর্বজনীনেও লোক টানছে।
জেলা সদর চুঁচুড়ার বড় মণ্ডপগুলিতেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। হুগলি মোড় থেকে কারবালা, রথতলা, পিপুলপাতি, আখনবাজার হয়ে চুঁচুড়া স্টেশনের দিকে এগিয়েছে ভিড়। আকাশের খামখেয়ালিপনার উপর ভরসা করতে না পেরে বহু মানুষই এ দিন ঘর ছেড়ে পথে নেমে পড়েন। বৈঁচিগ্রাম থেকে সপরিবারে চুঁচুড়ার রথতলা সর্বজনীনে পুজো দেখতে এসে সুকন্যা দত্ত বলেন, “আজ আবহাওয়া ভাল। তাই অষ্টমী-নবমীর জন্য অপেক্ষা করলাম না।” কারবালার মাঠে দাঁড়িয়ে একই কথা শোনালেন ত্রিবেণীর বাবলু রায়ও।
থিমপুজোর টানে ভিড় জমে যায় হাওড়ার শ্যামপুর থেকে আমতা, উদয়নারাণপুর থেকে বাগনান, উলুবেড়িয়াতেও।
ফেলে দেওয়া পালকের অংশ দিয়ে কী ভাবে প্রতিমা গড়া হয়েছে, তা দেখতে উলুবেড়িয়ার মনসাতলা ধূমকেতু সর্বজনীনে প্রথম দিনেই আছড়ে পড়ে ভিড়। যদুরবেড়িয়া কলতলা সর্বজনীনের পুজোয় উঠে এসেছে একখণ্ড কেদারনাথ। ভিড় হচ্ছে বাগনানের বাঁটুল প্রগতি সঙ্ঘের ঝিনুকের তৈরি প্রতিমা দেখতেও। বাগনান মুক্তদল অথবা বাগনান খালোড় দক্ষিণপল্লিও ভিড়ের দৌড়ে খুব একটা বেশি পিছিয়ে নেই।
শহরঘেঁষা পুজোয় মানুষ ভিড় করেন ডোমজুড় ফুলবাগান স্পোর্টিং ক্লাব, ডোমজুড় ঝাঁপড়দহ যুব সঙ্ঘ সর্বজনীনের পুজো দেখতেও। ডোমজুড় ফুলবাগান স্পোর্টিং ক্লাব এ বার বাঁশের তৈরি ঝোড়া, ফুলো, ধুচুনি দিয়ে মণ্ডপ গড়েছে। ডোমজুড় ঝাঁপড়দহ যুব সঙ্ঘ সর্বজনীন তৈরি করেছে প্লাস্টিকের রঙিন ফিতের মণ্ডপ। খুব একটা পিছিয়ে নেই আমতা পল্লিকল্যাণ বা আমতা জোত্কল্যাণ সড়িয়ালা সর্বজনীনের পুজোও।
আজ, মহাসপ্তমী। উত্সব আরও জমজমাট। |