ভয় পেতাম ষোলো বছরের বাচ্চাটা ঘুমের
মধ্যে বারান্দা থেকে না পড়ে যায়
চিন তেন্ডুলকর ওর প্রথম প্রেমের সঙ্গে গাঁটছড়া ত্যাগ করল যার নাম ক্রিকেট।
আমি জানি না, সচিনের অবসরের খবরের চেয়ে আর কোনও বড় খবর এই মুহূর্তে খেলার দুনিয়ায় আছে কি না! ক্রিকেটবিশ্বের এমন একজন মহান অ্যাম্বাস্যাডর সচিন, যার নামে প্রায় আড়াই দশকেও কেউ কোনও দিন একটাও বিতর্কিত ঘটনার খোঁজ পায়নি। আগামী একশো বছরেও দ্বিতীয় সচিন তেন্ডুলকর পাওয়া যাবে বলে আমি মনে করি না।
মাত্র ষোলো বছর বয়সে সচিন ভারতীয় দলে ঢুকেছিল। উননব্বইয়ের সেই পাকিস্তান সফরে আমি ওর সিনিয়র সতীর্থ ছিলাম। সেই সময় থেকেই সচিন বরাবরের একজন সরল আর লাজুক ছেলে। সচিন সম্পর্কে অনেকেই যেটা জানে না, সেই পাকিস্তান সফরে ওর রুমমেট থাকার সুবাদে আমি সেটা গোড়াতেই জেনে ফেলেছিলাম সচিনের ঘুমের মধ্যে হাঁটার অভ্যেস আছে!
টিম হোটেলে আমাদের ঘরটা আবার ছিল বারান্দার ধারে। যে বারান্দায় কি না কোনও গরাদ বা পাঁচিল-টাচিল ছিল না! যে কারণে আমাদের আরও ভয় ছিল, সচিন না ঘুমের মধ্যে হাঁটতে-হাঁটতে বারান্দায় বেরিয়ে গিয়ে কোনও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে! রাতে যাতে সচিন ঘর থেকে কোনওক্রমেই না বেরোয় সেটার ব্যাপারে আমাকে সেই পাকিস্তানে সফরে সব সময় নিশ্চিত থাকতে হত।
এক দিন সচিনকে দেখলাম একটা নতুন ব্রেসলেট পরেছে। কিন্তু পরের দিন যখন ঘুম থেকে উঠলাম, রীতিমতো চমকে গেলাম দেখে যে, ব্রেসলেটটা দুমড়ে-মুচড়ে একাকার। আজও আমার মাথায় ঢোকেনি, সেই রাতে ঘুমের মধ্যে সচিন ঠিক কী করেছিল! ওর চেয়ে সিনিয়র হলেও ক্রিকেটজীবনে আমরা অনেক ভাল মুহূর্ত একসঙ্গে কাটিয়েছি। এমনকী একবার ওর স্ত্রী অঞ্জলির ওকে পাঠানো বিশাল পুষ্পস্তবক আমি নিয়েছিলাম। তার পর সচিনকে দিয়েছিলাম সেটা।
সচিনের অসংখ্য দুধর্র্র্র্ষ সেঞ্চুরির মধ্যে আমার হৃদয়ে চিরদিনের মতো রয়েছে বিরানব্বইয়ে পারথ টেস্টের সেঞ্চুরিটা। ম্যাচের খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অস্ট্রেলীয় বোলিংয়ের ঝাঁঝ সামলে আমরা দু’জনে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ গড়েছিলাম। যেটা এত বছর পরেও এখনও আমাদের দু’জনের কাছেই দারুণ স্পেশ্যাল হয়ে আছে। সে দিন ক্রিজের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখেছিলাম সচিনকে অবিশ্বাস্য সব শট মারতে! স্রেফ ব্রিলিয়ান্ট। উনিশ বছরের সচিনের অসাধারণ ব্যাটিং সে দিন অ্যালান বর্ডার, স্টিভ ওয়, ডিন জোন্সদের হতবাক করে দিয়েছিল।
ওর সবচেয়ে বড় গুণ, ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা আইকন হওয়া সত্ত্বেও বরাবরের বিনয়ী। মাটিতে পা থাকা মানুষ। প্রচণ্ড গোছানো একজন প্লেয়ার, যে ক্রিকেট খেলাটার পাশাপাশি ক্রিকেট কিটসকেও প্রচণ্ড সম্মান দেয়। সে জন্যই সচিন ক্রিকেটের ভগবান!

নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন
সচিন যে বার চেন্নাইয়ে প্রথম বুচিবাবু টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছিল, তখন থেকেই আমি ওর গুণমুগ্ধ। ভারতীয় ক্রিকেটে সচিনের থেকে বেশি অবদান কারও নেই। সচিনকে ছাড়া একটা ভারতীয় দলের কল্পনা করতে পারছি না।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন
মনে রাখতে হবে, সচিনের খেলোয়াড় জীবন এমন একটা বিষয় যা আমাদের চিরকাল আনন্দ দিয়েছে, গর্বিত করেছে।
বিষেণ সিংহ বেদী
সাচো, তোমার কতটা কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি! এই মুহূর্তটা আসতই। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতি তোমার দায়বদ্ধতার জন্য তোমাকে আমাদের সেলাম! প্রার্থনা করি অবসর জীবনে তুমি যে শান্তি আর নিরিবিলি চাও, সেটা পাবে!
গৌতম গম্ভীর
সচিন পাজিকে স্যালুট। আমার মনে হয় ভারতের দশ নম্বর জার্সিটাকেও রিটায়ার করিয়ে চিরকালের জন্য সংরক্ষিত করা উচিত। ধন্যবাদ পাজি।
শেন ওয়ার্ন
গত কুড়ি বছরে সচিনের থেকে বড় ক্রিকেটার কেউ নেই। সর্বকালের সেরাদের অন্যতম হিসাবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ওকে মনে রাখবে! ওর কাঁধে বরাবর যে চাপের পাহাড় থেকেছে, সেটা সহ্য করেও মাঠে আর মাঠের বাইরে সচিন যে ভাবে বাকিদের জন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে, সেটা অবিশ্বাস্য!
ডিকি বার্ড
ও বলটা খেলার জন্য, সঠিক লাইন আর লেংথ খুঁজে নেওয়ার জন্য অনেক বেশি সময় বের করে। ১৯৪৮ সালে ব্র্যাডম্যানকে খেলতে দেখেছিলাম। তারপর সচিনই একমাত্র ক্রিকেটার যাকে আমার সবচেয়ে বেশি ব্র্যাডম্যানের মতো বলে মনে হয়েছে। আমার সর্বকালের সেরা টিমে সচিন সব সময় চার নম্বরে খেলবে। ওর প্রশংসায় এর থেকে বেশি বলা আর সম্ভব নয়।

সাংবাদিকদের চা-বিস্কুট
বৃহস্পতিবার বিকেলেই পেরি ক্রস রোডে সচিনের বাড়ির সামনে নিরাপত্তা আঁটোসাটো করা হয়েছে। ভক্তেরা যাতে বিরক্ত না করে তার জন্য মোতায়েন হয়েছে বিশেষ বাহিনী। তবু প্রচারমাধ্যম রণে ভঙ্গ দেয়নি। সাংবাদিকরা অনেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়েছিলেন সচিনের বাড়ির সামনে। মাস্টারব্লাস্টার সামনে না এলেও তাঁদের জন্য কিন্তু চা-বিস্কুট পাঠিয়ে দেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.