একটা পুজোয় তিনি কত ক্ষণ কাটাচ্ছেন, শ্যেন দৃষ্টিতে তা লক্ষ্য রাখছে পাশের পুজো। একসঙ্গে সবাইকে তুষ্ট করতে গিয়ে মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষের হাল খারাপ। হাতিবাগান-হেদুয়ার পাঁচটি মোক্ষম পুজোর নেপথ্যেই অতীন। সবার জন্যই তাঁকে পালা করে সময় ভাগ করতে হচ্ছে। কারও ভাগে একটু বেশি হলেই বাকিদের মুখ ভার। অতীনের দাবি, বিজয়ার পরে সবাই ঠিক মিলেজুলে যাবে। তখন স্টার থিয়েটারে এই মন কষাকষির থিম নিয়েই জমবে নাটক ‘পুজোর ক্যাঁচাল’!
|
উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়ির কত্তার জন্য সব্বার সকাল থেকেই মন খারাপ। বোধনের পরেই দাদার কানে শোনার যন্তর কোথায় হাপিস! আশি ছুঁইছুঁই দাদাই খাটো ধুতিতে দশ হাতে পুজোর সব হ্যাপা সামলান। বিলেত থেকে কেনা দামি মেশিন ছাড়া তিনি কী করে এত দিক সামলাবেন, আর কী করেই বা টিভি চ্যানেলে ইন্টারভিউ দেবেন? অবশেষে দুপুরের পরে তাঁর ভাই ফোনে খবর দিলেন, যন্ত্রটা রয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে। মুহূর্তে ঠাকুরদালানের মেজাজ পাল্টে গেল। ভাই, ভাইপো, নাতিরা ধরলেন, এই জন্যই সন্ধেয় স্পেশাল পার্টি চাই!
|
জামবনির ব্লক-সদর গিধনির পূর্বাশা সর্বজনীনে ঢুকলেই মাথায় বৃষ্টি পড়বে। শিল্পী তপন মাহালি মাথা খাটিয়ে আলো, ধ্বনি ও জল দিয়ে এই মায়াজাল তৈরি করেছেন। মণ্ডপ-চত্বরে খোলা আকাশের তলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বড় বড় ফোঁটা ঝরবে। কিন্তু বাদ সাধছেন স্বয়ং প্রকৃতিদেবী। আসল বৃষ্টিতে নকলের মহিমা ঢাকা পড়ছে। ভগবানের ছিস্টির সঙ্গে কী করে লড়ব! চোরা আশঙ্কায় মুখ চুন উদ্যোক্তাদের।
|
লালগড়ের বটতলা চকের চায়ের দোকানে কেটলিটা টগবগ করছে। প্রবীণ মালিক মহাদেব রায়ের পাত্তা নেই। না, পুজোর ছুটি-টুটি নয়। রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে তখন তিনি বোধনে ব্যস্ত। এ এক অন্য বোধন সাহিত্যের। ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘সুস্বন’-এর শারদ সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল মহাদেববাবুরই হাত দিয়ে। কী ব্যাপার? সম্পাদক পঙ্কজকুমার মণ্ডল বললেন, “২০০১ সালে প্রথম সংখ্যাটি উনিই কিনেছিলেন কি না! যা বইপোকা লোক।”
|
বিকেলে কুমোরপাড়া থেকে তেকোনা ঠাকুর বার করতেই বেদী ভেঙে খানখান। হেড শিল্পীও সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছেন। উদ্যোক্তাদের মাথায় হাত, তা হলে সন্ধেয় নাচ-গানের অনুষ্ঠানের কী হবে? প্রধান অতিথির আসার সময় হয়ে গেল যে! পঞ্চমীর সন্ধেয় অগত্যা প্রতিমা ছাড়াই মণ্ডপের ফিতে কাটা হয়ে গেল। পর দিন মেরামতির পরে বালির ওই পুজো কমিটির ঠাকুর আসতে আসতে বোধনের লগ্ন পেরিয়ে গিয়েছে।
|
পাড়ার মোড়ে দেখা দুই বান্ধবীর। একজন পঞ্চমীর সারা রাত ঠাকুর দেখেছেন। আর একজনের গলায় দেমাকি ঝাঁঝ, “আমাদের তো লাইনে দাঁড়াতে হয় না। মামা অনেকগুলো ভিআইপি পাস পেয়েছে।” শুনে প্রথম জনের সহানুভূতির সুর, “সে কী রে, কাল যে দেখলাম ভিআইপি-র লাইনেই লোক বেশি! আমাদের পাবলিকের লাইনই বরং ফাঁকা!” ভিআইপি-র সংখ্যাবৃদ্ধিতে যেন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল।
|
সবুজের সমারোহ দেখে ভরে যাচ্ছে ফড়িংয়ের ঝাঁক। দেখে বোঝা দায়, এ সবই নকল গাছপালা। দুর্গাপুরের ফুলঝোড় সর্বজনীনের থিমের প্রতি ফড়িংদের টান উপভোগ করছেন দুর্গাপুরবাসী। একজন বোঝালেন, “বেচারা ফড়িং! দুর্গাপুরে দূষণের মাত্রা এতটাই যে, আসল গাছে ছোপ ধরে গিয়েছে। মণ্ডপের নকল সবুজই ফড়িংদের জন্য বরং নিরাপদ।”
|
হাতি নয়, ঘোড়াও নয়! দু’টি পেল্লায় বলদ দেবীর রথ টানছে। আসানসোলের রবীন্দ্রনগর উন্নয়ন সমিতির পুজো দেখে পাড়ার দুই ঠাকুমা তাজ্জব! পাড়াতুতো নাতি এসে ব্যাপারটা খোলসা করলেন। “সহজ ব্যাপার। পুজোটা কৃষিমন্ত্রীর অনুগামীদের তো। তাই রথ টানছে বলদে।” |