ঘড়িতে তখন রাত ৯টা ৩৫ মিনিট। “এই সৃজিত এ দিকে আয়। কে এসেছে দ্যাখ!” ভারসোভার সিনেম্যাক্স মাল্টিপ্লেক্সের লবিতে চেঁচিয়ে উঠলেন ‘কাকাবাবু’ প্রসেনজিৎ। স্ত্রী কিরণ জুনেজার সঙ্গে তখন হল-এ ঢুকছেন ‘শোলে’র পরিচালক রমেশ সিপ্পি।
প্রথমেই প্রসেনজিতের কাছে জানতে চাইলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় গল্পটা কোন বছরে লিখেছেন। পোস্টারটাও খুব মন দিয়ে দেখলেন। সৃজিত তখন পাশে দাঁড়িয়ে রমেশ সিপ্পিকে বলছেন, “স্যর, ‘মিশর রহস্য’র পোস্টারের রঙে কিন্তু শোলের প্রভাব রয়েছে!”
এর ঠিক বারো মিনিট পরেই হল-এ ঢুকলেন শ্রীদেবী। সঙ্গে বনি কপূর। বেশ কিছুক্ষণ ছবি দেখলেন ‘হাওয়া হাওয়াই’। হল-এর অন্যান্য আসনে তখন এমএস সথ্যু, প্রদীপ সরকার, ইয়ামি গৌতমরাও। ‘‘দোসর’-এর পর এই প্রথম আমার ছবির প্রিমিয়ার হল মুম্বইয়ে,” বুধবার হলের লবিতে দাঁড়িয়ে বলছিলেন প্রসেনজিৎ। “এটাই তো বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বিরাট কৃতিত্ব। একটা বড় সময় জুড়ে বাংলায় সে রকম ছবি হতই না, যা আমরা মুম্বইকে দেখাতে পারি। আজ এই প্রিমিয়ারগুলোর মাধ্যমে মুম্বইয়ের লোকেরা জানতে পারছে আমরা কলকাতায় কী কাজ করছি।” |
গোটা দেশের ৮০টা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘মিশর রহস্য’। কলকাতা ছাড়াও বেঙ্গালুরু-দিল্লি-মুম্বই ও পুণেতেও একই দিনে রিলিজ করছে ছবিটি। কলকাতার মাল্টিপ্লেক্সগুলোতেও কোনও ছবি এত বেশি সংখ্যক শো পায়নি, যা পাচ্ছে ‘মিশর রহস্য’। প্রথম দিন থেকেই মাল্টিপ্লেক্সগুলোয় ‘মিশর রহস্য’-র ৯টা করে শো থাকছে যা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে রেকর্ড। “প্রসেনজিৎ-সৃজিত জুটির আবেদন যদি একটা কারণ হয়, দ্বিতীয় কারণ অবশ্যই রণবীর কপূরের ‘বেশরম’ ফ্লপ হওয়া। ‘বেশরম’য়ের শো বাতিল হওয়াতেই মাল্টিপ্লেক্সগুলোর কাছে নতুন ছবি নেই যার পুরো লাভটাই পাচ্ছে ‘মিশর রহস্য’,” বলছিলেন আইনক্স কর্তা পঙ্কজ লাডিয়া।
গোটা টলিউডই দেখতে আগ্রহী প্রসেনজিৎ-সৃজিত বক্স অফিসে হ্যাটট্রিক করতে পারেন কি না। তিন বছর আগে ২০১০-এর পুজোয় ‘অটোগ্রাফ’ এবং ২০১১-র পুজোয় ‘বাইশে শ্রাবণ’ বক্স অফিস সাফল্য পাওয়ার পর থেকেই এই ভাবনা সবার মনে। তার উপরে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি বাঙালির ভালবাসা, কাকাবাবুর নস্টালজিয়া মিলিয়ে এই ছবিটা নিয়ে আলাদা উত্তেজনা রয়েছে, স্বীকার করলেন প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা।
শুধু ‘মিশর রহস্য’ নয়। পুজোয় দেব-কোয়েল জুটির ‘রংবাজ’ নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রত্যাশা। শুধু পশ্চিমবঙ্গেরই ২২৩টি হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘রংবাজ’। এ ছাড়াও অসমের ১০টি হল-সহ রাঁচি, জামশেদপুরেও মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি। এবং এই প্রথম কোনও বাংলা ছবি একই দিনে রিলিজ করছে সুদূর ইতালিতেও। ইতালিতে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে দেব-কোয়েল জুটির জনপ্রিয়তা দারুণ। “তাই ওখানে রিলিজ করছে ছবিটা। আর আমি মনে করি বাংলা ছবির ক্ষেত্রে এটা এক বিরাট সাফল্য,” বলছিলেন ছবির প্রযোজক এবং কোয়েলের স্বামী নিসপাল সিংহ রানে। ‘রংবাজ’ নিয়ে আশাবাদী দেবও। “ছবিটা ইতিমধ্যেই রেকর্ড করে ফেলেছে অ্যাডভান্স বুকিংয়ে। দর্শকদের এই ভালবাসাটা থাকলে ‘রংবাজ’ অনেক রেকর্ডই ভেঙে ফেলবে আগামী কয়েক দিনে,” শেষ মুহূর্তে প্রচারে যাওয়ার আগে বলছিলেন দেব। কোয়েল আবদার করে রেখেছেন, “ছবি যদি রেকর্ড ওপেনিং নেয়, তা হলে নিসপালকে মল্লিকবাড়িতে অষ্টমী কি নবমীতে ঢাক বাজাতেই হবে।”
এই দু’টো বড় মাপের ছবির পাশাপাশি আর একটি ছবিও মুক্তি পাচ্ছে আগামী কাল। সেটি অশোক ধানুকার এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘খিলাড়ি’ যাতে অভিনয় করেছেন অঙ্কুশ এবং নুসরত। ‘খিলাড়ি’ও ১২৯টি হলে মুক্তি পাচ্ছে।
সব মিলিয়ে পুজোর বাজারে টলিউড জমজমাট। |