স্কুলে যাবে বলে মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল জগদ্দলের ললিতা বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার পর থেকেই তাদের খোঁজ মিলছিল না। বুধবার সকাল থেকে ওই ঘটনার জেরে তুলকালাম বাধে জগদ্দলে। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত ছাত্রীদের খোঁজ মিলল বিহারের মুজফ্ফরপুরে। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার রাতে রাজ্য পুলিশ গিয়ে ট্রেনে করে ওই মেয়েদের উদ্ধার করে নিয়ে আসছে।
উদ্ধার হওয়া ছ’জনের মধ্যে পাঁচ জন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। এক জন ক্লাস নাইনে পড়ে। প্রত্যেকে গরিব পরিবারের। নেহা রাম, পূজা নইয়া, বিজিতাকুমারী নইয়া, ঊষা কুমারী পাসোয়ান, আশা সাউ এবং রেশমা খাতুনএই ছ’জনই মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেরিয়েছিল। |
নেহার মা সবিতাদেবী জানান, মঙ্গলবার বিকেল ৪টে নাগাদ তাঁর মোবাইলে একটি অচেনা মোবাইল নম্বর থেকে ফোন আসে। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে নেহা জানায়, তাকে বিহারের ছপরা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মারধর করা হচ্ছে। বিক্রি করে দেওয়া হবে বলে তার আশঙ্কা। কথা বলতে বলতে নেহার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেওয়া হয় বলে দাবি মায়ের। উদ্বিগ্ন পরিবারটি সঙ্গে সঙ্গে জগদ্দল থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ওই ফোন নম্বরটিও পুলিশকে দেয়। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। যদিও নম্বর দু’টি সে সময় পরিষেবা সীমার বাইরে ছিল।
সবিতাদেবীর কথায়, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ ফের অন্য একটা নম্বর থেকে নেহা ফোন করে একই কথা বলে। মেয়ে কান্নাকাটি করে বলছিল, আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।” দু’টি ফোন নম্বরই পুলিশকে দিয়েছিলেন তাঁরা। পূজার মা মালতি নইয়া বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়ে বাড়ি না ফেরায় স্কুলে খোঁজ নিই। কেউ কিছু বলতে পারেনি।”
ঘটনা হল, জগদ্দল, কাঁকিনাড়া, নৈহাটি-সহ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে অপরাধ খুবই বেড়েছে। একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক বছরে জগদ্দলের ওই এলাকা থেকে আরও কয়েকটি মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। কাউকেই খুঁজে বের করতে না পারায় পুলিশের উপরে ক্ষোভ ছিল। এ বার ছ’টি মেয়ে একই সঙ্গে বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় গোটা এলাকাই ক্ষোভে ফুঁসছিল। এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ জগদ্দলের সার্কাস মোড়ে ঘোষপাড়া রোডে অবরোধ শুরু করে জনতা। একেই পুজোর জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তার উপরে অফিস টাইমে অবরোধের জেরে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, এসএন ব্যানার্জি
রোডও স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সাড়ে ৯টা নাগাদ পুলিশের তিনটি গাড়ি যায়। উত্তেজিত জনতা গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। দু’টি গাড়ির কাচ ভাঙে। এর পরেই জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ইটের ঘায়ে তিন পুলিশকর্মী জখম হন। পুলিশ লাঠি চালালে স্থানীয় কয়েক জনও আহত হন। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পুলিশের পক্ষ নিয়ে শূন্যে তিন রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভাটপাড়ার সিপিএম নেতা পার্থ বসু। অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, “পুলিশকে গোটা ঘটনা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’ গুলি চালনার কথা মানতে চায়নি পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিক্ষোভকারীদেরও একাংশের বক্তব্য, গুলির আওয়াজ তাঁরা শোনেননি। |