সম্পাদকীয় ১...
কায়ানির উদ্দেশ্য
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসফাক পারভেজ কায়ানি ঘোষণা করিয়াছেন, আগামী ২৯ নভেম্বর যথানির্দিষ্ট সময়েই তিনি সেনাপ্রধানের পদ হইতে অবসর লইবেন। স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া এ ধরনের ঘোষণার নিহিত তাগিদ একটাই সংশ্লিষ্ট সকলকে আশ্বস্ত করা যে, সেনাপ্রধান হিসাবে নিজের বর্ধিত মেয়াদ আরও সম্প্রসারিত করিবার অভিপ্রায় তাঁহার নাই। এমন অভিপ্রায় পাক সেনানায়করা প্রায়শই পোষণ করিয়া থাকেন। কায়ানি সম্পর্কেও তেমন জল্পনা শুরু হইয়াছিল। ইহার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, অবসরগ্রহণের পর জেনারেল কায়ানি আর পাক রাজনীতি ও সামরিক ব্যাপারে মাথা ঘামাইবেন না। বস্তুত, তাঁহার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাতীয় কোনও পদ সৃষ্টি করিবার প্রস্তাব শুনা যাইতেছে। জন্মলগ্ন হইতে পাকিস্তান অর্ধেকেরও বেশি কাল ফৌজি শাসনে কাটাইয়াছে, ইহা স্মরণ রাখিলে কায়ানির মতো প্রভাবশালী এক জন সেনাধ্যক্ষের অবসরগ্রহণ লইয়া জল্পনা অস্বাভাবিকও নয়।
তবে জেনারেল কায়ানির সপক্ষে এটুকু বলিতে হইবে যে, তাঁহার চাকুরির মেয়াদকালে প্ররোচনা সত্ত্বেও তিনি পিপল্স পার্টির দুর্বল সরকারকে অপসারিত করিয়া ফৌজি শাসন কায়েম করিতে সচেষ্ট হন নাই, যাহা তাঁহার অনেক পূর্বসূরিই করিয়াছেন। বরং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটি সরকারকে তিনি পূর্ণ মেয়াদ অতিক্রম করিতে দিয়াছেন এবং পরবর্তী সরকারকেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়া ক্ষমতাসীন হইতে বাধা দেন নাই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এমন মসৃণ ক্ষমতা হস্তান্তর পাকিস্তানের ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং তাহার কৃতিত্ব অংশত প্রাপ্য জেনারেল কায়ানির। শুধু তাহাই নহে, আগাগোড়া তিনি পাক সেনাবাহিনীর ক্রিয়াকলাপে রাশ টানিয়া রাখিয়াছেন। অ্যাবটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে খতম করিবার মার্কিন অভিযানও পাক সেনাবাহিনীকে তত হতমান করে নাই, যতটা করিয়াছে তদানীন্তন সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। ইহার পিছনে কায়ানির কৌশলের ভূমিকা ছিল। সেনাবাহিনীকে তিনি রাজনৈতিক ব্যাপারে নাক গলাইতে দেন না, এমন একটা ধারণা বা বিভ্রম সাফল্যের সহিত তিনি রচনা করিতে পারিয়াছেন।
অথচ জেনারেল কায়ানি সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তাঁহার পূর্বসূরিদের দুমুখো নীতিই বিশ্বস্ততার সহিত অনুসরণ করিয়া গিয়াছেন। মুখে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসকে পাকিস্তানের বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ বিপদরূপে শনাক্ত করিলেও তাঁহার আমলে পাক ফৌজ ও তাহার গোয়েন্দা শাখা আইএসআই তালিবান, জামাত-উদ-দাওয়া কিংবা হাক্কানি গোষ্ঠীর মতো জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা বন্ধ করিতে কোনও চেষ্টাই করে নাই। বরং পাক তালিবান ক্রমাগত ফিদাইন হামলা চালাইয়া কখনও শিয়া, কখনও খ্রিস্টান, কখনও আহমদিয়া, আবার কখনও সাধারণ, নিরীহ সুন্নিদেরও গণহত্যা ঘটাইয়া চলিয়াছে। কায়ানির বাহিনী এই উপদ্রব বন্ধ করিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং ব্যর্থতার কারণ তাহার নিশ্চেষ্টতা। এ কথা মনে করিবার সঙ্গত কারণ আছে যে, জেহাদি সন্ত্রাসের সংগঠন ও ঘাঁটিগুলিকে উৎখাত করিবার কোনও সচেতন প্রচেষ্টা কায়ানির বাহিনীর তরফে দেখা যায় নাই। প্রতিবেশী ভারতের সীমান্তে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করিয়া যখন-তখন পাক বাহিনীর অতর্কিত গুলিবর্ষণ, সেই রেখা লঙ্ঘন করিয়া জেহাদিদের অনুপ্রবেশে সহায়তা করার ফৌজি ভূমিকাও তাঁহার আমলে বন্ধ হয় নাই। বস্তুত, গত কিছু দিন যে হানাদারি চলিতেছে, তাহা পাকিস্তানের সামরিক কর্তাদের প্রশ্রয় ভিন্ন সম্ভব নহে। জেনারেল কায়ানির রীতিমাফিক অবসরগ্রহণ স্বাগত হইলেও তাঁহার উত্তরসূরিরা এই জেহাদি কারখানাগুলি ধ্বংসে কতটা উদ্যোগী হন, তাহার উপরেই নির্ভর করিবে পাকিস্তানের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ, ভারতের সহিত তাহার সম্পর্কের ভবিষ্যৎও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.