ঘুরে দাঁড়ানো রফতানি আর রাশ টানা আমদানির দৌলতে গত আড়াই বছরে সব থেকে নীচে নেমে গেল বাণিজ্য ঘাটতি। উৎসবের মুখে যা প্রত্যাশিত ভাবেই খুশি করেছে কেন্দ্র ও শিল্পমহলকে। দেখিয়েছে আশার আলো। কারণ, বাণিজ্য ঘাটতি এতখানি নেমে যাওয়ায় আগামী দিনে চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন ঘাটতিতেও (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) লাগাম পরানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অনেকে। আর মূলত এই সম্ভাবনা আঁচ করেই বুধবার উঠেছে শেয়ার বাজার। ২৬৫ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স ফের ঢুকে পড়েছে ২০ হাজারের ঘরে।
এ দিন প্রকাশিত কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে এক লাফে ১১.১৫% বেড়েছে রফতানি। চোখে পড়ার মতো (১৮.১০%) কমেছে আমদানিও। যার ফলে ৬৭৬ কোটি ডলারে নেমে এসেছে বাণিজ্য ঘাটতি। গত ৩০ মাসে যা সর্বনিম্ন।
চওড়া বাণিজ্য ঘাটতি আর তার হাত ধরে বাড়তে থাকা চলতি খাতের ঘাটতি কিছু মাস ধরেই ঘুম কেড়েছে কেন্দ্রের। এমনকী অগস্টেও বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১,০৯০ কোটি ডলার। বাণিজ্য সচিব এস আর রাওয়ের দাবি, রফতানির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। যেমন, সেপ্টেম্বরে ১৫.২% রফতানি বেড়েছে শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যেরই। একই সঙ্গে যে ভাবে আমদানিতে রাশ টানা হয়েছে, তার জন্য কেন্দ্রের কৃতিত্ব দাবি করেছেন তিনি। |
রাওয়ের দাবি, আমদানিতে (বিশেষত সোনা-রুপোর) লাগাম টানতে যে একের পর এক পদক্ষেপ করা হয়েছে, তার ফল মিলছে। কাজ হচ্ছে দাওয়াইয়ে। কারণ পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, সেপ্টেম্বরে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮০% কমেছে সোনা-রুপো আমদানি। দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলারে। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৪৬০ কোটি ডলার। ৬% কমেছে তেল আমদানিও।
কেন্দ্র মনে করছে, এই আর্থিক বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ১৫ হাজার কোটি ডলারের নীচে বেঁধে যাবে। ফলে ৭ হাজার কোটি ডলারের মধ্যে থাকবে চলতি খাতে ঘাটতিও। এই সম্ভাবনাকে ‘কুর্নিশ করে’ই এ দিন উঠেছে বাজার। সেনসেক্সের দৌড় থামে ২০,২৪৯.২৬ পয়েন্টে। দিনের শুরুতে উঠেছে টাকাও। পরে অবশ্য ডলারের বাড়তি চাহিদার জেরে দর নামে ১৪ পয়সা। বাণিজ্য ঘাটতি কমায় খুশি শিল্পও।
ডলারের সাপেক্ষে টাকার পতন নিয়ে সম্প্রতি নাজেহাল হয়েছে কেন্দ্র। এক সময় প্রায় ৬৯ টাকায় পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন মুদ্রাটি। যার বড় কারণ চলতি খাতে বিপুল ঘাটতি (৮,৮০০ কোটি ডলার বা জাতীয় আয়ের ৪.৮%)। যে কারণে চলতি অর্থবর্ষে ওই ঘাটতিকে ৭,০০০ কোটিতে বেঁধে রাখার প্রতিজ্ঞা বার বার শুনিয়েছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তা সম্ভব বলে দু’দিন আগেও জানিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি খাতে ঘাটতির একটা বড় অংশ তৈরি হয় বাণিজ্য ঘাটতি থেকে। তাই তাতে রাশ টানা গেলে, চলতি খাতে ঘাটতিও লাগামছাড়া হবে না।
তবে এর মধ্যেও আশঙ্কা থাকছে। কারণ অনেকেই মনে করছেন, উৎসবের মরসুমে আমদানি বাড়বে। উল্টো দিকে, আমেরিকায় অচলাবস্থার প্রভাব পড়বে রফতানিতে। ফলে ফের বাড়বে বাণিজ্য ঘাটতি। রাও অবশ্য জানিয়েছেন, আমদানিতে রাশ টানতে কেন্দ্রের দাওয়াই আপাতত জারি থাকবে। মার্কিন মুলুকের সমস্যাও রফতানিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে তাঁর দাবি। |