বাড়ির দাওয়ায় কাদার তাল নিয়ে খেলতে খেলতে বছর আটের ছেলে হঠাৎই বলে উঠেছিল, “দেখ মা, আমি দুগ্গা গড়েছি।”
ছেলের কাণ্ড দেখে চোখ কপালে কালনার দেউড়ি মোড়ের ঊমা চক্রবর্তীর। দশ হাতের দুর্গার টানা টানা চোখ, অসুরের রাগী মুখ দেখে বেশ চমকে উঠেছিলেন তিনি। কোথায় এমন মূর্তি গড়া শিখল সে, প্রশ্ন শুনে ফোকলা দাঁতে হেসে শুভজিতের উত্তর, “ক্লাবঘরে বড় ঠাকুর তো এ রকম করেই তৈরি হচ্ছে। দেখে দেখে শিখে নিয়েছি।”
শুভজিতের বয়স এখন ২৩ বছর। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চাকরি করেন কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায়। প্রতিমা গড়ার নেশা অবশ্য এখনও আগের মতোই রয়ে গিয়েছে। |
পাড়ার মাঠের পাশে কাশফুল মাথা তুলতে না তুলতেই শুরু হয়ে যেত তাঁর ব্যস্ততা। দিন-রাত এক করে প্রতিমা তৈরি করতে বসে পড়েন তিনি। সারা বছর ধরে নিজের জমানো টাকায় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো করেন নিজেই। সামিল হন পাড়ার লোকজনও।
এ বছরই চাকরি পেয়েছেন শুভজিৎ। সকাল সকাল বেরিয়ে রাতে বাড়ি ফেরা। তবু রাত জেগে তৈরি করেছেন প্রতিমা। টালির ছাউনি দেওয়া এক কামরার বাড়ির বারান্দায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গৃহস্থালীর সঙ্গেই শোভা পাচ্ছে একটি দুর্গাপ্রতিমা। সামনের এবড়ো-খেবড়ো উঠোনের মাঝে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। এর গা ঘেঁষেই লাগানো হয়েছে বাঁশ। সেটি প্রতিবেশীদের বসার জায়গা। শুভজিতের মা বলেন, “প্রতিমা তৈরি করা ছাড়াও মণ্ডপ তৈরি, ঢাকি আনা-সহ পুজোর যাবতীয় কাজ পুরোটাই নিজেই করছে ছেলে।”
শুভজিতের বাবা পেশায় হকার। মা গৃহবধূ। পুজোর খরচ চলে কী ভাবে? উমাদেবী জানান, সারা বছর বেশ কিছু পুজো করত শুভজিৎ। তার টাকা জমিয়ে রাখা হত একটি কৌটোয়। পুজো এলে সেই কৌটো খোলা হত। সেই টাকাতেই হত পুজো। এ ছাড়া কালনা শহরের এক ব্যবসায়ী প্রতিমার সাজের খরচ দিতেন। সেই টাকা মাসে মাসে শোধ করতেন শুভজিৎ। এ বার অবশ্য পরিস্থিতি বদলেছে। শুভজিৎ এখন চাকরি করেন। ফলে পুজোর বাজেটও বেড়েছে।
প্রতিবেশী শুভ দাস, দীপ চক্রবর্তীদের কথায়, “পুজো কাছে এলেই ও সব কিছু ভুলে যায়। আমরাও ওর পাশে থেকে সহযোগিতা করি।” স্থানীয় বধূ সুজাতা চক্রবর্তী বলেন, “শুভজিৎ যখন অনেক ছোট তখন থেকেই ওকে পুজো করতে দেখছি। সমস্ত কিছু নিজের হাতেই করে। কখন যেন ওর পুজো পাড়ার সবার পুজো হয়ে গিয়েছে।” |