পরিবারের সঙ্গে বসে এখন আর মহালয়া শোনা হয় না। পুজোর চার দিন ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মণ্ডপে ঘুরে ঠাকুর দেখাও হয় না।
আসানসোলের চেনা বৃদ্ধাশ্রমে আবাসিকদের সঙ্গী সহ-আবাসিকেরাই। সবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরোনো আর অষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির মধ্যে দিয়েই নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছেন তাঁরা।
প্রায় ১১ বছর ধরে এই বৃদ্ধাবাসে রয়েছেন ছবি মজুমদার। তিনি জানান, প্রথম যখন এসেছিলেন, পরিবারের সঙ্গে ঠাকুর দেখার কথা মনে পড়ত। পুরনো স্মৃতি ফিরে আসত। এখন আর সে ভাবে মনে পড়ে না।
আবাসিক ব্রজেন ভট্টাচার্যের একটি রেডিও আছে। মহালয়ায় ভোরে উঠে তিনিই সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। আর, পুজোর সুর ঢুকে পড়ে বৃদ্ধাবাসে। ছবিদেবীর কথায়, “এখন আর মন খারাপ করে না। প্রতি বছরই কেউ না কেউ ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যায়। সবাই একসঙ্গে যাই।” |
ব্যস্ততা নেই। —নিজস্ব চিত্র। |
দামোদরের ধারে বন-বনানী ঘেরা বৃদ্ধাবাসটি চালায় একটি বেসরকারি সংস্থা। ম্যানেজার শ্রীকান্ত দত্ত জানান, প্রত্যেক বছরই একাধিক সংগঠনের তরফে পালা করে আবাসিকদের ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ বারও বার্নপুরের সুভাষপল্লি ও পুরানহাটের দু’টি সংগঠন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আবাসিকদের মধ্যে কেউ যেমন বহু বছর ধরে আছেন, কেউ এসেছেন সম্প্রতি। কেউ সবার সঙ্গে মহালয়া শুনে আনন্দ পান। আবার কারও ঢাকের বাজনা শুনে মনে পড়ে যায় ফেলে আসা দিনের কথা। অনেকেই আছেন, যাঁদের আজও পুরনো দিনে ফিরতে ইচ্ছে করে।
তেমনই এক জন রেবা দত্তের কথায়, ‘‘সারা বছরই তো এখানে বন্দি। বাড়ির লোকের কথা মনে পড়ে। দুঃখ হয়।” তিন ছেলের সংসারে পুজোর দিনগুলো আনন্দেই কাটাতেন সুখেন্দুশেখর ভট্টাচার্য। মাত্র তিন মাস আগে এসেছেন। সুখেন্দুশেখরবাবু বলেন, “ছেলেদের কাছে যাব না। এরা যদি ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যায়, সবার সঙ্গে যাব। একটু মুক্ত আকাশের নীচে দাঁড়াব।” বুলু চট্টোপাধ্যায় আবার এমন এক জন যিনি চান পুজোর দিনগুলো দাদা-বৌদির সঙ্গে মণ্ডপে ঘুরতে। থাকতেন দাদা-বৌদির সঙ্গেই। দশ মাস আগে দাদা রেখে গিয়েছেন এখানে। তার পর থেকে আর যোগাযোগ নেই। তিনি বলেন, “এ বার এখনও নতুন পোশাক আসেনি। পুজোয় দাদা নিয়ে যাবে কি না, জানি না।” |