পুলিশ ভ্যানের তার জালির জানালায় চোখ রেখে দূর থেকে প্রতিমা দর্শন। কিছুক্ষণের মধ্যে কিছু পুজো মন্ডপ ঘুরে দেখা। অনেকটা আনন্দে সামিল হয়েও না হওয়ার মতই ছিল। তাই এ বার আগেভাগেই কর্তৃপক্ষের কাছে ওদের বায়না ছিল গাড়ি থেকে নেমে অন্য দশ জনের মত ভিড়ে মণ্ডপে দাঁড়িয়ে প্রতিমা দেখার ব্যবস্থা করার। তা শুনে উদ্যোগী হন মহকুমা শাসক। মঙ্গলবার মহকুমাশাসক হোমে গিয়ে সকলের সঙ্গে কথা বলেন। তার জেরে এবার প্রথম পুলিশের ভ্যানের বদলে বাসে করে ঘুরে ঘুরে মন্ডপ দেখার আনন্দে মাতবে ওরা। বাড়তি পাওনা মহকুমা শাসকের বাংলোয় পচ্ছন্দমত মেনু দিয়ে রাতের খাবারের ব্যবস্থা। খবরটা শোনার পরে ওদের কেউ আকাশের দিকে হাত ছুড়ে বিজয়ীর আনন্দে মাতল। কেউ আবার পাশে দাঁড়ানো বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেও ফেলল। ওরা মানে রানী, নন্দিতা, পায়েল, রিঙ্কুর মত ২৯ জন নাবালিকা। সকলে কোচবিহার শহিদ বন্দনা স্মৃতি মহিলা হোমে আবাসিক। রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন হোমটি। জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “মহকুমা শাসক পুরো বিষয়টি দেখছেন। ওদের পুজোর আনন্দ দিতে পেরে আমরাও খুশি।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহার শহর লাগোয়া শহীদ বন্দনা স্মৃতি মহিলা হোমে অনুর্ধ্ব ১৮ বছরের মোট ৮৩ জন নাবালিকা রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ জন পুজোর ছুটিতে বাড়ি ফিরে গেলেও ২৯ জন হোমে আছে। তাদের বাড়িঘরের খোঁজ নেই। প্রতিবছর পুজোর সময় হোমে থাকা নাবালিকাদের পুলিশের বড় ভ্যানে বসিয়ে প্রতিমা দেখতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তাদেরই কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে পুজো দেখার অনুরোধ করেন হোম কর্তৃপক্ষের কাছে। এর পরে হোমের সুপার নিজে ওই আর্জি নিয়ে কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহার দ্বারস্থ হন। মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “হোমে গিয়ে কথা বলেছি। ওরা সকলেই ওই ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছে। ওদের মুখে তৃপ্তির হাসি দেখে এটাই সেরা পুজো উপহার মনে হচ্ছে।” হোমের সুপার অদিতি রায় বলেন, “পুলিশের ভ্যানে বসে খানিকটা দূর থেকে প্রতিমা মণ্ডপ ঠিকঠাক দেখা যায় না। তা বুঝি। কিন্তু নিরাপত্তার প্রশ্ন তো রয়েছে। সেই দিকটি খেয়াল রেখেই এবার আবাসিকদের পুজো দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” |