|
|
|
|
|
|
আছে জনশ্রুতি আর ইতিহাস |
|
ছবি: অনিতা দত্ত। |
মালদহ এনএস রোডে আদি কংস বণিকদের দুর্গাপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জনশ্রুতি আর ইতিহাস, ঐক্য এবং ঐতিহ্য আনুমানিক তিনশো পঞ্চাশ বছর পূর্বে বর্তমান বাবুপাড়ার নিমতালি ঘাটে এক বৃদ্ধা স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন মহানন্দা নদীতে একটি চক্রাকার পাথর চণ্ডীরূপে জলের তলায় আছে। তিনি তা কুড়িয়ে পান। পুজো করতে থাকেন। পরে তা জনৈক গিরিজাবাবুর বাড়িতে অধিষ্ঠিত হয়। সেখানে দশভূজারূপে পূজিত হতে থাকেন। গিরিজাবাবু পরবর্তী কালে পাথরটি আদি কংসবণিকদের হাতে সমর্পণ করেন। কংসবণিক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত সদস্য মাধবচন্দ্র কমললোচন, জনমোহন ও লক্ষ্মীকান্ত দত্তর উদ্যোগে বাংলার ১৩৭৫ সালের ১০ বৈশাখ তৈরি হয় আদি কংসবণিক দুর্গাবাড়ি। অন্য কোনও ভাবে নয় মালদার ২২৭টি কংসবণিক পরিবারের পুরুষ সদস্যদের আর্থিক সাহায্যেই এ পুজো হয়ে আসছে। পুজোর যাবতীয় ব্যবস্থা পুরুষরাই করেন বলে জানান দুর্গাবাড়ির কার্যকরী সভাপতি উত্তমকুমার দাস। এখানে মায়ের অন্নভোগ হয় না। আড়াই কেজি আটার শুদ্ধ ঘিয়ে ভাজা লুচি মাকে ভোগ হিসাবে নিবেদন করা হয়। নবপত্রিকার সময় ২২৭টি পরিবারের মহিলা ও শিশুরাও উপস্থিত থাকেন। মৃৎশিল্পী থেকে মালাকার, চাকি থেকে পুরোহিত বংশপরম্পরা ধরে পুজোর কাজ করে আসছেন। দোচালা প্রতিমার সঙ্গে আরও বাইশটি মূর্তি ( চার জন সেপাই, জয়া-বিজয়া, ৪ জন পরী, শিবের সঙ্গে নন্দী তৃঙ্গি, রাম লক্ষ্মণ আর প্রত্যেকের বাহন) পূজিত হয়। দশমীর দিন যানবাহনে নয়, ঘাড়ে করে মাকে মায়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলি ঘাটে। সেখান থেকে নৌকা করে মিশন ঘাটে। ঘাটে সাহা সম্প্রদায়ের প্রতিমা আসে। কথিত আছে সাহাদের দুর্গা এবং কংসবণিকদের পূজিত দুর্গা পরস্পর বোন। তাই বিসর্জনের দিন মিশন ঘাটে তারা মিলিত হয়। সেখানে মিষ্টি মুখ ও আরতি করে কংসবণিকদের পূজিত দুর্গা নিয়ে আসা হয় সদর ঘাটে। বিসর্জনের পর দুর্গাবাড়িতে এসে সদস্যরা রীতি মেনে দই খই মুখে দেন।
|
কাগজের তৈরি দুর্গা |
|
ছবি: সুদীপ দত্ত। |
ছাত্রজীবন থেকে থিমপুজোর কাজ করছেন তুহিন ঘোষ। কলাভবনের প্রাক্তন ছাত্র, জলপাইগুড়ির বাসিন্দা তুহিন এই মুহূর্তে কাগজের দুর্গা বানাতে ব্যস্ত। দুর্গার সঙ্গে কাগজ আর থার্মোকল দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্যাঁচা এবং রাজস্থানী পুতুল। তাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন কলেজ পড়ুয়া তাঁর ক’জন ছাত্রছাত্রী রাহুল, তপন, রামানন্দ, অনির্বাণ, রিম্পা, শ্রাবণী, বর্ণালী এবং জয়শ্রী। দেড় মাস ধরে মূলত কাগজ, থার্মোকল ও রং ব্যবহার করে চলছে এই শিল্পকর্ম। তাঁর তৈরি দুর্গা, প্যাঁচা ও পুতুল দেখা যাবে জলপাইগুড়ির সেনপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির (কালীতলা রোড) দুর্গাপুজোয়। পুজো কমিটির সম্পাদক নীহার মজুমদার বলেন, ‘লোকশিল্পকে সমৃদ্ধ করার দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের থিমের পরিকল্পনা। মণ্ডপে দেখা যাবে ছোটবড় নানা মাপের প্রায় তিনশোটি প্যাঁচা। এই ধরনের প্যাঁচা বর্ধমানের জয়দেব অঞ্চলের লোকশিল্প। তা ছাড়া লক্ষ্মীর এই বাহন সমৃদ্ধিরও প্রতীক। আমরা সবার সমৃদ্ধি কামনা করি। থাকছে বেশ কয়েকটি রাজস্থানী পুতুল। আমাদের মণ্ডপটিও আর পাঁচটা মণ্ডপ থেকে আলাদা। সম্পূর্ণ উন্মুক্ত এই মণ্ডপ, জাতি ধর্ম শ্রেণি নির্বিশেষে বাঙালির ঐদার্যের এক লক্ষ এক হাজার টাকা। বিগ বাজেটের পুজো বলতে যা বোঝায়, আমাদের পুজো তা নয়। তা না হলেও এই অন্য রকম পুজো নজর কাড়বে তা বলা বাহুল্য।
|
কালিম্পঙের পুরনো দুর্গা পুজো |
|
ছবি: অনিতা দত্ত। |
কালিম্পংয়ের সব চেয়ে পুরোনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম মিলনী ক্লাবের দুর্গা পুজো। এ বছর এই পুজো পঁচাশি বছরে পা দেবে। পুজোর প্রতিষ্ঠা পুরুষ কালিম্পংয়ের আদি বাঙালি বাসিন্দা গণেশ পাইন। সে সময় পুজো হত কালিম্পং থানার উল্টো দিকে ( বর্তমান সুপার মার্কেটের জায়গায়)। দায়িত্বভার ছিল মৈত্রী সংঘের ওপর। পুজোর সূচনাকালে (১৯২৯) কালিম্পং ছিল নিরিবিলি এক পাহাড়ি জনপদ। যাতায়াতের সুব্যবস্থা ছিল না। এ পথে টয়ট্রেন চলত গেলখোলা পর্যন্ত। শিলিগুড়ি থেকে প্রতিমা টয়ট্রেনে চাপিয়ে নিয়ে আসা হত গেলখোলা পর্যন্ত। তার পর প্রতিমা নিয়ে যাওয়া গত রোপওয়ে করে। ১৯৩৫ থেকে প্রতিমা সরাসরি সড়কপথে নিয়ে আসা হয়। এ বছরও প্রতিমা আসবে শিলিগুড়ি থেকে। পুজোর সরঞ্জাম আনা হচ্ছে জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি বাজার থেকে। মালদা থেকে আসবে ঢাকি ও গঙ্গাজল। দশমীর পর দিন থেকে লক্ষ্মীপুজোর পর দিন পর্যন্ত বাংলা নাটক অভিনীত হত সেই সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মুলতুবি রাখা হয়েছে। হবে না স্মরনীকা প্রকাশও বলে জানালেন ক্লাবের সভাপতি মণীন্দ্রনাথ বিশ্বাস। পুজোর কটা দিন কালিম্পং পাগাড়ের প্রায় দুশোটি বাঙালি পরিবার পুজো মণ্ডপেই খাওয়া দাওয়া সারবেন। নবমীর মহাভোজে উপস্থিত থাকবে শৈলশহরের সব সম্প্রদায়ের মানুষ। |
|
|
|
|
|