|
|
|
|
আজ বিশ্ব ডাক দিবস |
অবহেলায় ভগ্নস্তূপ খেজুরির ডাকঘর |
সুব্রত গুহ • খেজুরি |
চরম উপেক্ষা আর অবহেলা। ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন খেজুরি ডাকঘর আজ ভগ্নস্তূপে পরিণত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে স্থাপিত প্রাচীন এই ‘কেডগিরি পোস্ট অফিস’টিকে অনেকেই দেশের প্রথম ডাকঘর বলে। তবে সরকারি ভাবে তার স্বীকৃতি জোটেনি। সরকারি উপেক্ষা আর অবহেলায় খণ্ডহরে পরিণত ডাকঘরের ধ্বংসাবশেষে কান পাতলে আজও শোনা যায় প্রাচীন খেজুরি বন্দর ও ডাকঘরের অতীতের নানান রোমাঞ্চকর গল্পগাথা।
১৬৭২ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্যাপ্টেন জেমস নামে এক নাবিক সবর্প্রথম খেজুরিতে ঘাঁটি গাড়েন। এরপর থেকেই খেজুরি ব্যবসা আর বাণিজ্যের অন্যতম পীঠস্থান হয়ে পড়ে। কোম্পানি বন্দরে অফিস ঘর, এজেন্টদের বসবাসের জন্য বাসস্থান বানায়। জাহাজে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণের জন্য বিশ্রামাগার, চার্চ, পাকা ইমারত তৈরি হয়। ধীরে ধীরে খেজুরি একটি সমৃদ্ধ বন্দরে পরিণত হয়। কেডগিরি থেকে ক্যাজুরী, কাদজেরী, গ্যাজুরী— খেজুরির নামের বিবর্তন বড়ই বিচিত্র। মোহনা অঞ্চলে নাব্যতা হ্রাসের জন্য কলকাতা পর্যন্ত না গিয়ে ইউরোপ থেকে আসা বড় বড় জাহাজগুলি খেজুরিতেই ঘাঁটি করত। পরে স্লুপ বা ছোট ছোট জাহাজ বা বজরায় করে মালপত্র নিয়ে যাওয়া হত কলকাতায়।
এই বন্দরের সূত্রেই খেজুরিতে গড়ে উঠেছিল প্রথম ডাকঘর। ইউরোপ থেকে আসা চিঠিপত্র ‘কেডগিরি ডাকঘরে’র মাধ্যমেই যাওয়া-আসা করত। |
|
দেশের ‘প্রথম’ ডাকঘর। —নিজস্ব চিত্র। |
মহেন্দ্রনাথ করণের ‘খেজুরি বন্দর’ ও যোগেশচন্দ্র বসুর ‘মেদিনীপুরের ইতিহাস’ সূত্রে জানা যায়, ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের আগে এই ডাকঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৮১৭ সাল থেকে ১৮২০ পর্যন্ত কেডগিরি শিপ লেটার পোস্টাল স্ট্যাম্প ও ১৮২২ সালে কেডগিরি ডাকঘরে মেটাল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হত। ১৮৩৭ সাল থেকে ১৮৪১ পর্যন্ত কেডগিরি অ্যান্ড পোস্ট অফিস স্ট্যাম্প ও ১৮৯৪ সালে কেডগিরি ডিস্ট্রিক্ট মিডনাপুর স্ট্যাম্প ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায়। খেজুরি বন্দর থেকে কলকাতা পর্যন্ত প্রতিদিন ছোট ছোট ছিপে করে বিলেত থেকে চিঠিপত্র পৌঁছত কলকাতায়। ১৮৫১-৫২ সালে কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার, ডায়মন্ড হারবার থেকে কুঁকড়াহাটি ও কুঁকড়াহাটি থেকে খেজুরি পযর্ন্ত ভারতবর্ষের প্রথম টেলিগ্রাফ লাইন চালু হয়। বলাবাহুল্য কেডগিরি পোস্ট অফিসের দোতলা থেকেই। ১৮৬৪ সালে বিধ্বংসী বন্যায় খেজুরি বন্দরের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। ধীরে ধীরে অতীতের সমস্ত গরিমাই মুছে যায়। এখন খেজুরিকে লোকে চেনে রাজনৈতিক সংঘর্ষপ্রবণ এলাকা হিসাবে। অথচ, সদিচ্ছা থাকলে পোস্ট অফিসকে কেন্দ্র করে খেজুরিতে সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেত। রাজনীতির পরিচয়ের বাইরেও পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিত খেজুরি। খেজুরির প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত সুনির্মল পাইক ও খেজুরি ইতিহাস সংরক্ষণ পষর্দের সহ-সভাপতি অরবিন্দ বেরা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে বিস্তর চিঠি চালাচালি করেছেন। মৌখিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও বাস্তবে কিছুই হয়নি। এমনকী ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে একটি মনুমেন্ট গড়ার প্রস্তাব উঠলেও সরকারি লাল ফিতার ফাঁস কাটিয়ে তা আজও বাস্তবায়িত করা যায়নি। বর্তমান খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলও দাবি করেন, “পোস্ট অফিসকে ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন মহলে দরবার করেছিলাম। কোনও কাজ হয়নি।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল এই এলাকারই মেয়ে। তিনি বলেন, “এই এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও ঐতিহ্য আমার জানা। সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। খেজুরিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার কথা গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখা হবে।” |
|
|
|
|
|