এতগুলো মানুষের এক টুকরো সাধের সবুজ নষ্ট হতে বসেছিল আর একটু হলে। গ্লস্টারশায়ারের স্ট্রাউড শহর। কংক্রিটের জঙ্গলে এক ফোঁটা সবুজের ছোঁয়া দেড়শো বছরের পুরনো একটা আপেল গাছ। আর যত গণ্ডগোল তাকে ঘিরেই। সম্প্রতি হাত বদল হয়েছে ওই জমির। আপেল গাছের মাথা মুড়িয়ে বিলাসবহুল বাড়ি বানানোর স্বপ্ন প্রোমোটার জেরি ওয়ালশের চোখে। কিন্তু বাধ সাধলেন রোয়ান বুরো। গাছ কাটতে দেবেন না বলে ওই গাছেই চড়ে বসেছেন তিনি। এক দিন-দু’দিন নয়, গত এক সপ্তাহ ধরে এটাই ঘর-বাড়ি মধ্য চল্লিশের এই ব্যক্তির।
গাছে বসেই দিব্যি খাচ্ছেন সুপ বা স্যান্ডউইচ। কোনওটাই তাঁর বানানো নয়। এই প্রতিবাদীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন আশপাশের বহু মানুষ। খাবার, জল যখন যেটা দরকার রোয়ানের হাতে তুলে দিচ্ছেন তাঁরাই।
পরিবেশবাদীর এ হেন অভিনব প্রতিবাদ মনে করিয়ে দেয় গত শতকের শেষ দিকের এক কাহিনি। ব্রিটেনের ডেভনে রাস্তা বানানোর পরিকল্পনা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। তার প্রতিবাদে প্রস্তাবিত ওই রাস্তার মাটির নীচে সুড়ঙ্গ বানিয়ে তার মধ্যেই রাত কাটান ড্যানিয়েল হুপার। প্রতিবাদের এই নতুন চমকই সে সময় খবরের শিরোনামে তুলে আনে তাঁকে। |
সাধের গাছে রোয়ান বুরো। ছবি ডেইলি মেলের সৌজন্যে। |
এত বছর পর খবরে আরও এক পরিবেশপ্রেমী। তবে প্রকৃতি আর মানুষের এই বাঁধন গ্লস্টারশায়ারের ইতিহাসে বেশ পুরনো। সালটা ১৯৫৯। প্রকাশিত হয় লরি লি-র উপন্যাস ‘সাইডার উইথ রোজি’। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর পরই ছোট্ট স্লাড গ্রামটা কী ভাবে বদলে গেল, তা নিয়েই ছেলেবেলার স্মৃতির ঝাঁপি উপুড় করে দিয়েছিলেন লেখক।
এই স্লাড থেকে মেরেকেটে দু’মাইলের রাস্তা স্ট্রাউড শহর। রোয়ান বুরোর কথায়, গাছটা যে কেবল এত দিনের স্মৃতি তা-ই নয়, এর গোড়ায় গর্ত করে থাকে প্রচুর বেজার। ছুঁচলো মুখ, ছোট পা, এই বেজাররা দেখতে অনেকটা বেজির মতো। সবুজ ধ্বংস করে বাড়ি বানানোর যাবতীয় সবুজ সঙ্কেত জোগাড় করে ফেলেছেন প্রোমোটার ওয়ালশ। অনুমতি পেলেই উনি যা করছেন সেটাই ঠিক, কী করে বলব প্রশ্ন তুলেছেন রোয়ান। বরং তাঁর যুক্তি, নিজের মতো করে প্রত্যেকে যদি প্রতিবাদ গড়ে তোলে, আইনপ্রণেতারা এক দিন সেটাই মেনে নিতে শিখবেন।
গাছ নিয়ে এই ধুন্ধুমার শুরু দিন পনেরো আগে। গাছের প্রাণ বিপন্ন দেখে সেই যে তল্পিতল্পা নিয়ে রোয়ান ঘাঁটি গেড়েছিলেন, তার জন্যই এখনও গাছে হাত দিতে পারেনি কেউ।
ছোটখাটো একটা ঝামেলা বেধেছিল কাল। রাত তিনটে নাগাদ একটু বিছানার খোঁজে নেমেছিলেন তিনি। সেই ফাঁকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওখানে জড়ো হয় প্রোমোটার বাহিনী। জানতে পেরেই দৌড়ে আসেন রোয়ান। উঠে যান গাছের বাসায়। বাধ্য হয়েই শেষমেশ রণে ভঙ্গ দেন বাকিরা।
এই জমিতে আবাসন প্রকল্পের কথা চাউড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আপত্তি জানিয়ে স্টেট কাউন্সিলে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অন্তত একশো জন। স্থানীয় স্থপতি জুডিথ ফিফার জানালেন, মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে তাতে বাড়ি বানাতেই হবে। কিন্তু এই গাছটাকে জড়িয়ে বাঁচে প্রচুর বন্যপ্রাণী। কুড়ি ফুটের গাছটাকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিস্তরঙ্গ জীবনটা হুট করে কী রকম যেন বদলে গেল গত ক’দিনে।
একটা গাছকে নিয়ে এ ভাবে যে প্রতিবাদ গড়ে উঠতে পারে, ভাবেননি আবাসনের কর্তৃপক্ষ। অনুমতি দেওয়ার সময় গাছ কাটা যাবে না বলে কোনও নির্দেশ তো কেউ দেননি যুক্তি তাঁদের। উল্টে বেজারদের যাতে ঠিকমতো অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া যায়, তা দেখতে পরিবেশবিদও রেখেছেন তাঁরা। তবে বাগ্-বিতন্ডার পারদ যতই চড়ুক না কেন, বুলডোজার কাজ পায়নি এখনও। চালকহীন বুলডোজার একাই দাঁড়িয়ে রোয়ান বুরোর প্রহরী হিসাবে। |