কোষে ছোট্ট ডাকবাবুদের চিনে চিকিৎসায় নোবেল
দিন নেই, রাত নেই তারা কাজ করে মনের আনন্দে। নির্ভুল ভাবে। আর তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমেই বেঁচে থাকে সম্পূর্ণ জীবজগৎ। তারা এক ধরনের ছোট্ট ছোট্ট লিপিড (ফ্যাট) কণা। নাম ভেসিকল। ঘুরে বেড়ায় কোষের অন্দরমহলে। আকারে ছোট হলে কী হবে, এই ভেসিকলের কাজকর্ম দেখে রীতিমতো আক্কেলগুড়ুম হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীদের। আর কোষের নির্ভুল এবং অক্লান্ত কাজের পিছনে ভেসিকলের এই ভূমিকা আবিষ্কার করেই এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিন বিজ্ঞানী। তাঁরা হলেন, আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমস রথম্যান, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক র‌্যান্ডি শেকম্যান এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, জন্মসূত্রে জার্মান অধ্যাপক টমাস সুয়েদহফ।
রথম্যান শেকম্যান সুয়েদহফ।
অসংখ্য কোষ নিয়েই গড়ে ওঠে আমাদের দেহ। আর দেহের এই যাবতীয় কাজকর্মের নিয়ন্ত্রণ থাকে সেই কোষেরই হাতে। কিন্তু কোষের অন্দরমহলে কী ভাবে এই কাজকর্ম চলে, তা জানা ছিল না বহু দিন। ধীরে ধীরে জানা গেল, কোষের ভিতরে থাকা বিভিন্ন অঙ্গাণুই নিয়ন্ত্রণ করে তার কাজ। তিন বিজ্ঞানীর গবেষণা কোষের কাজকর্মের এক নয়া দিগন্ত তুলে ধরল। জানা গেল, শুধু রাইবোজোম বা মাইটোকনড্রিয়াই নয়, কোষের কাজে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এক সময়ে বেকার হিসেবে মনে করা ভেসিকলগুলিরও। জানা গেল, কোষে তৈরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির পরিবহণে চালকের ভূমিকা নেয় এই ভেসিকল।
ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিসা সোয়ানটনের কথায়, “কোষের ভিতরে থাকা এই ভেসিকলগুলি অনেকটা ডাকহরকরার চিঠির থলের মতো। ডাকহরকরা প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঠিকঠাক ঠিকানায় চিঠি পৌঁছে দিয়ে যায়। ঠিক তেমন ভাবেই ভেসিকলগুলি কোষের রান্নাঘরে তৈরি হওয়া প্রোটিন, হরমোন, উৎসেচক পৌঁছে দেয় কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুতে। আবার কখনও কখনও প্রয়োজন মতো কোষের বাইরে বার করে দেয়।” কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের অঙ্কোলজির গবেষক জ্যান ইং হেন্টার বলেন, “রথম্যানদের কাজ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। জীবদেহের বিভিন্ন কাজ ও রোগব্যাধি বুঝতে হলে ভেসিকলের কাজের পদ্ধতি জানতেই হবে।”
গবেষণা শুরু হয়েছিল অবশ্য সেই সত্তরের দশকে। ঈস্টের কোষে বিশেষ ধরনের পরিবহণ পদ্ধতি লক্ষ করেছিলেন র্যান্ডি শেকম্যান। তিনি এর পর এই পরিবহণের সঙ্গে যোগ রয়েছে, এমন তিনটি জিন খুঁজে বার করে তাতে পরিবর্তন করেন। দেখা গেল জিনগুলি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বদলে গেল ঈস্টের ভেসিকলের গঠন। সেই সঙ্গে বদল ঘটল তার পরিবহণ পদ্ধতিরও।
আশির দশকে আর এক মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস রথম্যান আবিষ্কার করেন ভেসিকলের গায়ে লেগে থাকা এক ধরনের প্রোটিন। তিনি দেখান, কী ভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য ভেসিকলকে এই প্রোটিনগুলো সাহায্য করে। কী ভাবে কোষের বিভিন্ন অঙ্গাণুতে দরকারি জিনিস পৌঁছনোর সময়ে তারা প্রয়োজন মতো কোষের তরলে মিশে যায়। জার্মান বিজ্ঞানী সুয়েদহফ দেখান, কী ভাবে নিখুঁত সময় মেনে স্নায়ু কোষের পরিবহণে সাহায্য করে ক্যালসিয়াম। আর পরিবহণে ত্রুটি হলেই দেখা দেয় বিভিন্ন স্নায়ু রোগ।
স্টকহলমে নোবেল কমিটির তরফে সোমবার জানানো হয়েছে, শেকম্যান, রথম্যান এবং সুয়েদহফ এক সঙ্গে এ বারের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন। পুরস্কার মূল্য প্রায় ৭ কোটি ৪১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। কমিটি জানিয়েছে, কোষের পরিবহণ ব্যবস্থার এই রহস্যভেদ পরবর্তী কালে ডায়াবেটিস ও স্নায়ুরোগের মতো বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। সেই কারণেই এই পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়ার কথা শুনে শেকম্যান শুধু বলেছেন, “হে ভগবান...!”

ছবি: এএফপি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.