বেসরকারি ডি.এড কলেজের এক আবাসিক ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে পাত্রসায়রের রসুলপুর এলাকায়। মৃতের নাম আব্বাসউদ্দিন মল্লিক (১৮)। বাড়ি পাত্রসায়র থানার বাজিতপুর গ্রামে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সোমবার ওই কলেজে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। কলেজের অধ্যক্ষ মহম্মদ রফিকুল ইসলামকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃতের পরিবার। গাফিলতির অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশকুমার বলেন, “ওই বেসরকারি কলেজের হস্টেলে ছাত্রটির কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হচ্ছে। তার রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। আপাতত সব দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে ওই ডি.এড কলেজের হস্টেলের একটি ঘরের বিছানায় অসাড় অবস্থায় আব্বাসউদ্দিনকে পড়ে থাকতে দেখে সহপাঠীরা অধ্যক্ষকে খবর দেন। পরে ওই ছাত্রকে হস্টেল থেকে সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পাত্রসায়র ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক আব্বাসউদ্দিনকে মৃত বলে জানান। এর পরেই উত্তেজিত জনতা রসুলপুরে গিয়ে ওই কলেজে ভাঙচুর চালায়। বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা, পেশায় বিড়ি পাতার ব্যবসায়ী মন্টু মল্লিকের ছয় ছেলের মধ্যে আব্বাসউদ্দিন ছিলেন সবার ছোট। মৃতের এক দাদা রফিক মল্লিক জানান, এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ওই বেসরকারি ডি.এড কলেজে ভর্তি হন আব্বাসউদ্দিন। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কলেজের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছিলেন। রফিক বলেন, “এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ কলেজের এক শিক্ষক ফোনে ভাইয়ের শরীর খারাপের কথা জানান। আমরা বাড়ি থেকে রসুলপুরে যাওয়ার পথে জানতে পারি ওকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি, ভাই মৃত।”
রফিকের অভিযোগ, তাঁর ভাই রাতে ওই কলেজের হস্টেলের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটা এ দিন সকালে জানতে পারলেও পরিবারকে জানাননি। রফিকের কথায়, “পুরোটাই রহস্যজনক মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।” মৃত ছাত্রের বাবা মন্টু মল্লিকের অভিযোগ, “আমার ছেলে যেভাবেই মারা যাক না কেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সময়মতো চিকিতসা হলে আমার ছেলে হয়তো অকালে চলে যেত না। ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কলেজের এক ছাত্র বলেন, “এ দিন সকালে আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠলেও আব্বাস ওঠেনি। ওকে ওই ভাবে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে ঘুম ভাঙাতে যাই। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করে ওর সাড়াশব্দ না পেয়ে কলেজের এক শিক্ষককে খবর দিই।” পাত্রসায়রের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক উজ্জ্বল মণ্ডল বলেন, “মৃত অবস্থায় আব্বাসউদ্দিনকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। দেহটি শক্ত হয়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার অনেক আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে।” কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। কলেজের মালিক তথা পরিচালন সমিতির সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, “আমি এখন রাজ্যের বাইরে রয়েছি। তবে, ওই ছাত্রের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। কী ভাবে ওই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে তা কেউই বলতে পারছেন না। তবে, ওই ছাত্রের মৃত্যুর জন্য কলেজ কোনও ভাবেই দায়ী নয়। তার পরেও কলেজে ঢুকে কিছু লোক ভাঙচুর চালিয়েছে। অধ্যক্ষকে মারধর করেছে।” একই সঙ্গে ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে, তা কলেজের তরফে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন আব্দুস সামাদ। |