|
|
|
|
বিপজ্জনক সেতু দিয়ে নিষেধ উপেক্ষা করেই চলছে লরি
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
ভারী ট্রাক ঢুকলেই সেতুর দু’পাশের রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যায় বাস, যাত্রীবাহী ট্যাক্সি, অটো, ট্রেকার, ভ্যান রিকশা, সাইকেল থেকে মায় পায়ে হাঁটা বাসিন্দারা। প্রায় ৭০ ফুট লম্বা সেতুতে মালবাহী ট্রাক পার না হওয়া পর্যন্ত যানজটে আটকে থাকা গাড়ি চালকদের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। ভরা কোটালের সময় তা-ও বন্ধ। জোয়ারে সেতুর পাটাতন দিয়ে বয়ে চলে প্রায় হাঁটু সমান জলস্রোত। তখন বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত যান চলাচল। কোলাঘাট শহরের বিবেকানন্দ মোড়ের কাছে হ্যামিল্টন ব্রিজ এমনই বেহাল।
পাঁশকুড়া থেকে কোলাঘাট শহরের কাছে এসে রূপনারায়ণে মেশা দেহাটি খালের উপর লোহার কাঠামো ও কাঠের পাটাতন দেওয়া দীর্ঘ দিনের পুরানো এই সেতু কোলাঘাটের বাসিন্দাদের কাছে হ্যামিল্টন ব্রিজ নামে পরিচিত। কোলাঘাট থেকে জশাড়গামী সড়কে এই সেতুর উপর দিয়ে লরি, বাস, ট্যাক্সি, অটো, ট্রেকার, ভ্যান রিকশা, মোটর সাইকেল, সাইকেল মিলিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি চলাচল করে। তা ছাড়া কোলাঘাট ব্লকের উত্তর দিকের বিস্তীর্ণ এলাকা ছাড়াও লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর এলাকার বহু বাসিন্দা কলকাতা-সহ নানা জায়গায় যাতায়াতের জন্য এই সড়ক ব্যবহার করেন। এই রাস্তা দিয়েই যেতে হয় কোলাঘাট বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত সমিতির অফিস বা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এমন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার সংযোগকারী সেতুর অবস্থাই বিপজ্জনক। রয়েছে পূর্ত দফতরের ‘সেতুটি বিপজ্জনক’ বিজ্ঞপ্তিও। নিষেধ রয়েছে ভারী যানবাহন চলাচলে। কিন্তু তাকে তুড়ি মেরে প্রতিদিন অবাধে চলছে ইট, স্টোনচিপ, বালি, সিমেন্ট, রড বোঝাই বড় বড় মালবাহী ট্রাক। আর মাত্র ফুট দশেক চওড়া এই সেতুর উপর মালবাহী লরি ঢুকলে অন্য কোনও গাড়ি সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারে না। ফলে প্রতি দিন সকালে ও বিকালে পড়ুয়া, অফিসযাত্রী, ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার সময় ব্যপক যানজট সৃষ্টি হয়। |
প্রতিদিনের চেনা ছবি। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
কোলাঘাট বড়িষা গ্রামের সুকল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সেতুটির লোহার কাঠামো দীর্ঘ দিন না সংস্কার হওয়ায় মাঝ বরাবর দুর্বল হয়ে নিচু হয়ে গিয়েছে। ফলে রূপনারায়ণে একটু বেশি জোয়ার এলেই সেতু দিয়ে প্রায় হাঁটু সমান জলস্রোত বয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় গাড়ি চলাচল।’’ স্থানীয় কোলা গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী তপন বেরা বলেন, “সরকারি নিষেধাজ্ঞা না মেনে ভারী মালবাহী লরি যাওয়ার সময় কোলাঘাট বিডিও অফিসের কাছে খড়িচক খালের উপর সেতু কয়েক বছর আগে ভেঙে গিয়েছিল। একই অবস্থা এখানেও হতে পারে।” জশাড়-কোলাঘাট সড়কে কর্মসূত্রে প্রতিদিন কলকাতায় যাতায়াত করা দাসপুরের বাসিন্দা সুকুমার সামন্ত বলেন, “সেতুর কাছে যানজটের কারণে প্রায়ই স্টেশনে পৌঁছতে দেরী হয়। কোলাঘাট শহরের মধ্যে পাকারাস্তাও বেহাল হয়ে রয়েছে।”
কোলাঘাটের তৃণমূল বিধায়ক বিপ্লব রায়চৌধুরী সেতুর বেহাল দশা স্বীকার করে বলেন, “হ্যামিল্টন সেতুর অবস্থা ভাল নয় জানি। এ নিয়ে পূর্ত দফতরকে জানানো হলে ওরা টাকার সমস্যার কথা বলেছিল। তারপর বিষয়টি সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে জানানো হয়। শুভেন্দুবাবু হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে উদ্যোগী হয়ে হ্যামিল্টন ব্রিজের কাছে পাকা সেতুর জন্য পর্ষদ থেকে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। ওই টাকায় পূর্ত দফতর সেতু তৈরির কাজ করবে।” পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সঞ্জয় গুহ বলেন, “হ্যামিল্টন ব্রিজের কাছে নতুন পাকা সেতু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক প্রস্তুতি চলছে। দ্রুত ওই কাজ শুরু হবে। তা ছাড়া কোলাঘাট শহরের মধ্যে পাকা রাস্তা মেরামতির কাজ শীঘ্রই করা হবে।”
তবে কোলঘাট ব্লক অফিসের কাছে খড়িচক খালের উপর পাকা সেতুর কাজ শুরু নিয়ে যে ভাবে টালবাহানা চলছে তাতে হ্যামিল্টন ব্রিজের কাছে নতুন পাকা সেতু কবে হবে তা নিয়ে সংশয়ে এলাকাবাসী। |
|
|
|
|
|