|
|
|
|
|
ত্রিপুরায় ১০০ বছর পুরনো
বাড়ির পুজোর জাঁক কমেছে
আশিস বসু • আগরতলা |
|
একশো বছর পার হয়েছে আগরতলার কয়েকটি বাড়ির পুজোর। ত্রিপুরা রাজপরিবারের চিকিৎসক অসিত দেববর্মা, পুরোহিত কুলচন্দ্র চক্রবর্তীর উত্তরাধিকারীরা আজও একই নিয়মে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন পুরনো সেই ঐতিহ্য।
১৮৯৯ সালে পুজো শুরু করেন রাজ-চিকিৎসক অসিত দেববর্মা। পারিবারিক কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকলেও, ১৯২৭ সাল থেকে একটানা পুজো চলছে ওই বাড়িতে।
পরিবারের সদস্য বিজয় দেববর্মা জানান, বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। দুর্গার কাছে প্রার্থনারত অবস্থায় বসে অসুর। এখানে সে হিংস্র, প্রতিহিংসা-পরায়ণ নয়। রাজপরিবারের শিল্পীরাই ওই বাড়ির প্রতিমা তৈরি করেন। দুর্গাকে সাজানো হয় বেনারসীতে। লক্ষ্মী, সরস্বতী সাজেন সিল্কে। বিজয়বাবুর ভাই বিকাশ দেববর্মার স্ত্রী বলেন, ‘‘পুজোয় আত্মীয়-বন্ধু সবাই আসেন। আনন্দে মেতে থাকে সকলে।
বাড়ির পুজোটা একশো বছর ধরে নিষ্ঠা নিয়ে চালিয়ে যাওয়ার মধ্যে এটাই বড় প্রাপ্তি।’’
কৃষ্ণনগরে পুরাতন কালীবাড়ি রোডে শেফাল চক্রবর্তীর বাড়ির পুজো। তিনি জানান, অবিভক্ত ত্রিপুরার ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় প্রপিতামহ কুলচন্দ্র চক্রবর্তীর হাত ধরে ওই বাড়ির পুজো শুরু ১৮৯০ সাল নাগাদ। নবরাত্র চণ্ডীপাঠ হয়। শুরু হয় মহালয়ার পরদিন। চলে দশমী পর্যন্ত। রাজা বীরবিক্রম মাণিক্যের আমলে তাঁদের পরিবার ত্রিপুরার কৃষ্ণনগরে চলে এসেছিল। ৮০ বছর ধরে ওই বাড়িতেই একচালা মাতৃমূর্তির পুজো হচ্ছে। শেফালবাবু বলেন, ‘‘আগে নিজেই মূর্তি গড়তাম। এখম বয়সের জন্য তা পারি না।’’ পুজোয় আগে পাঁঠা বলি হত। ৩-৪ বছর ধরে তা বন্ধ। বিশেষ একটি কাঠামো গড়ে দুর্গার কাছে ‘শত্রু’ বলি দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। সেটাও একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে। দশমীর ভোরে বাড়ির লোকেরা নদীর জল নিয়ে আসেন। সেই জলে দুর্গার ‘প্রতিবিম্ব’ দেখে বিসর্জনের রীতি এখনও মেনে চলছেন শেফালবাবুরা।
পরনো আরও একটি পুজো হয় জয়নগরের বর্ধনরায় পরিবারের বাড়িতে। এলাকায় ‘মালঞ্চ’ বাড়ি বলে পরিচিত সেটি। পরিবারের সদস্য অমলেন্দুকুমার বর্ধনরায় বলেন, ‘‘অবিভক্ত বাংলার কুমিল্লা জেলার চৌবেপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আমার বাবার ঠাকুর্দারা। শুনেছি, স্বপ্নাদেশে তাঁদের আমলেই বাড়ির পুজো শুরু হয়। ১২৫ বছরের বেশি সময় ধরে পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই দুর্গাপুজো হচ্ছে।”
একচালার প্রতিমা আগে তৈরি হতো বাড়ির নাটমন্দিরেই। এখন বাইরে থেকে গড়ে নিয়ে আসা হয়। পুজো হয় বৈষ্ণব নিয়মে। খোয়াই থেকে ঢাকিরা আসেন। অমলেন্দুবাবু বলেন, ‘‘দেশের বাড়িতে কবিগান, জারি গানের মতো লোকসংগীতের আসর বসত। ৩-৪ বছর আগেও আগরতলার বাড়িতে শিল্পী, গুণীজনেরা এসে গভীর রাত পর্যন্ত গানবাজনা করতেন। একশো বছরের পুরনো অলঙ্কার, বাসনপত্র আজও পুজোতে ব্যবহার করা হয়। অমলেন্দুবাবুর বক্তব্য, ‘‘ঐতিহ্যবাহী এই পুজোর দিকে পরিবারের সদস্যদের ভক্তি ক্রমে কমে যাচ্ছে। আগামী দিনে পুজো কী ভাবে হবে, সেটাই চিন্তার।” |
|
|
|
|
|