বীজ খামারের জমিতেই তৈরি হচ্ছে কিষান মান্ডি
ছরের পর বছর কার্যত ফাঁকাই পড়ে থাকত কৃষি দফতরের অধীনে থাকা বহু বীজ খামার। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এইসব বীজ খামারের জমির অনেকটাই বেদখলও হয়ে গিয়েছিল। এমনই ৩৫টি বীজ খামারে তৈরি হচ্ছে কিষান মান্ডি। এই ভাবেই কার্যত পরিত্যক্ত বীজখামারগুলির জমি কাজে লাগাতে চাইছে রাজ্য সরকার। রাজ্যে বর্তমানে মোট বীজ খামারের সংখ্যা ১৯৫টি। প্রথম পর্যায়ে ৩৫টি বীজ খামারের জমি কিষান মান্ডির জন্য বেছে নেওয়া হলেও পরবর্তী কালে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
একেকটি বীজখামারে রয়েছে গড়ে ২৪ একর করে জমি। সাতের দশকের প্রথম দিকে বীজখামারগুলি গড়া হয়েছিল। এখানে নিয়োগ করা হয়েছিল চাষের কাজে দক্ষ খামার ম্যানেজার এবং গড়ে ১৫ জন করে কৃষি কারিগর। আদতে তাঁরা চাষি। বিভিন্ন ধরনের উন্নত বীজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং তা চাষিদের দেখানো, সবই হত বীজখামারে। কয়েকটি খামারে বীজ উত্‌পাদন করে তা চাষিদের কাছে ন্যায্য দামে বিক্রি করা হত।
কিন্তু ধীরে ধীরে বীজখামারগুলিতে বীজ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় বীজ উত্‌পাদনও। রাজ্য বীজ নিগমের মাধ্যমে অন্য রাজ্য থেকে উন্নত মানের বীজ আমদানি শুরু করায় বীজখামারগুলি ধীরে ধীরে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলে। কর্মীসংখ্যা কমে যাওয়ায় খামারগুলির রক্ষণা বেক্ষণ ব্যাহত হয়। আবার কৃষি দফতর নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ফলে চাষযোগ্যতাও নষ্ট হয় বহু জমির।
একদিকে যখন এই বিপুল পরিমাণ জমি অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে, অন্য দিকে তখন কিষান মান্ডির জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে অনেকটা জমির। একেকটি কিষান মান্ডির জন্য প্রয়োজন গড়ে সাত একর করে জমি। কিষান মান্ডির জন্য জমির খোঁজ করতে গিয়েই বীজখামারগুলিতে কিষান মান্ডি গড়ার কথা ভাবা হয় বলে এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে থাকা রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। দফতরের এক কর্তা জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই কৃষি দফতর এবং কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা আলোচনায় বসে বীজখামারগুলিকে এ কাজে নেওয়ার বিষয়ে একমত হন।
রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে একটি করে কিষান মান্ডি গড়ার কথা। প্রথম পর্যায়ে ৯৫টি কিষান মান্ডি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য ৩৫টি বীজখামারকে বাছা হয়েছে। রাজ্যের কৃষি অধিকর্তা পরিতোষ ভট্টাচার্য বলেন, “যে সব বীজ খামারকে কিষান মান্ডির জন্য বাছা হয়েছে সেগুলিতে কোনও কাজ হত না। অথচ বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছিল। তা ছাড়া কিষান মান্ডিও তো তৈরি হচ্ছে চাষিদেরই স্বার্থে। আজকের যুগে উত্‌পাদিত কৃষি পণ্যের বিপণন একটা বড় সমস্যা। উত্‌পাদিত পণ্য যদি চাষিরা বিক্রি করতেই না পারেন তা হলে তো ক্ষতি তাঁদেরই।”
কিষান মান্ডির জন্য কৃষি বিপণন দফতর অবশ্য জমি নিচ্ছে মাত্র সাত একর করে। বাকি জমি কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে পরিতোষবাবু বলেন, “বাকি জমি কী ভাবে চাষিদের স্বার্থেই ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।”
একেকটি কিষানমান্ডি গড়ার জন্য বরাদ্দ হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এই টাকা আসবে গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (আরআইডিএফ), রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা এবং রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের নিজস্ব টাকা থেকে। তবে বীজখামারগুলিতে কিষান মান্ডি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। যেমন, প্রথম পর্যায়ে হাওড়ায় যে চারটি কিষান মান্ডি গড়া হচ্ছে সেগুলির জন্য নেওয়া হয়েছে বীজ খামার। বাগনান-১ এবং উলুবেড়িয়া-১ এই দু’টি ব্লকের বীজ খামার রাস্তার ধারে অবস্থিত হলেও শ্যামপুর-১ এবং উদয়নারায়ণপুরের বীজ খামার লোকালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে। ফলে এখানে কিষান মান্ডি গড়া হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা কী হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার চাষি ও ব্যবসায়ীরাই। রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের এক শ্রেণির আধিকারিকদের বক্তব্য, শ্যামপুর-১ এবং উদয়নারায়ণপুরের মতো পরিস্থিতি রয়েছে অন্যান্য জায়গাতেও।
রাজ্যের কৃষি বিপণনমন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “প্রতিটি কিষান মান্ডিতে পরিকাঠামোর উন্নতি করা হবে। তৈরি হবে রাস্তাঘাটও। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী নিজে দেখছেন।”
তবে কিছু বীজ খামার কিষান মান্ডির জন্য দিয়ে দেওয়া হলেও বাছাই করা কয়েকটি খামার নিজেদের হাতেই রেখে দিচ্ছে রাজ্য কৃষি দফতর। সেগুলিতে উন্নত মানের বীজ চাষ কী ভাবে করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা করা হবে। পরিতোষবাবু বলেন, “বাছাই করা কয়েকটি খামারে ‘সার্টিফায়েড’ বীজ উত্‌পাদন করে তা তুলে দেওয়া হবে চাষিদের হাতে। চাষিরা এই ‘সার্টিফায়েড’ বীজ থেকে উন্নত মানের বীজ উত্‌পাদন করতে পারবেন। এতে একদিকে যেমন বীজের উত্‌পাদন বাড়বে, অন্য দিকে ফসলও ভাল হবে।”

বি কম পার্ট ওয়ানের ফল আজ
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি কম পার্ট ওয়ানের ফল আজ, সোমবার প্রকাশিত হচ্ছে। বেলা ৩টে থেকে ফল দেখা যাবে এই দু’টি ওয়েবসাইটে: এবং। কাল, মঙ্গলবার কলেজের প্রতিনিধিদের হাতে মার্কশিট দেওয়া হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.