সম্পাদকীয় ২...
আপনি আচরি
ক্ষমতা থাকিলে ক্ষমতার অপব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। কথাটি কেবল রাষ্ট্রক্ষমতার ক্ষেত্রেই সত্য নহে। যে কোনও ধরনের ক্ষমতাই আপনার মধ্যে এই আশঙ্কার বীজ ধারণ করে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং দূরসংযোগের প্রযুক্তির বিপুল অগ্রগতির ফলে এক নূতন ধরনের ক্ষমতার বিস্ফোরণ ঘটিয়াছে। সোশাল মিডিয়া নামক পরিসরটি সেই ক্ষমতায় ধন্য। আরব বসন্ত হইতে দিল্লি গণধর্ষণের প্রতিবাদ অগণিত ব্যক্তি-নাগরিক অতি দ্রুত এক একটি বিষয়ে সমবেত হইতেছেন সোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন পরিসরে, দেখিতে দেখিতে সেই সম্মেলন রাষ্ট্রীয় তথা রাজনৈতিক ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাইতেছে, ক্ষমতার অধীশ্বররা তাহার নিকট নতজানু হইতেছেন। এই সাফল্যের মাধ্যমেই সোশাল মিডিয়ার ক্ষমতা তৈয়ারি হইতেছে।
সুতরাং, ক্ষমতা অপব্যবহারের আশঙ্কাও। একযোগে এবং কার্যত এক মুহূর্তে বহু মানুষের নিকট যে কোনও ‘তথ্য’ প্রচারের সুযোগ থাকিলে অপপ্রচারের সম্ভাবনা অনিবার্য। অপপ্রচার নানা ধরনের। বিপজ্জনক গুজব, ক্ষতিকর চিত্র, বিকৃত (অ)তথ্য বহু উপায়েই অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহৃত হইতে পারে। হইতেছেও। অপপ্রচারের প্রবণতা নূতন নহে। ব্রিটিশ আমলে এবং তাহার পরেও ভারতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি সৃষ্টিতে অনেক সময়েই গুজব সৃষ্টি বড় ভূমিকা লইত। ফ্রান্সের গ্রামাঞ্চলে ‘শ্বেত সন্ত্রাস’-এর প্রচার ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত। কিন্তু ইন্টারনেট এবং মোবাইল টেলিফোন এই ধরনের প্রচারের শক্তিকে যেখানে পৌঁছাইয়া দিয়াছে, কয়েক বছর আগেও তাহা অকল্পনীয় ছিল। গণেশের দুগ্ধপানের কাহিনি নিতান্ত সাম্প্রতিক ইতিহাস। ইন্টারনেটের সাহায্য পাইলে সে দিন আরও কত গণেশ আরও কত দুধ পান করিয়া ফেলিতেন, আজ তাহা ভাবাও কঠিন। প্রযুক্তির দৌলতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা প্রচার কী ধরনের বিপদ সৃষ্টি করিতে পারে, সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে তাহার এক নূতন এবং ভয়াবহ নমুনা দেখা গেল।
মুজফ্ফরনগরের অভিজ্ঞতা জাতীয় সংহতি পরিষদের সম্মেলনে দীর্ঘ ছায়া ফেলিয়াছে। প্রধানমন্ত্রী হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন রাজ্যের প্রশাসকরা কার্যত সমস্বরে সোশাল মিডিয়ার বিপজ্জনক ব্যবহার সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন এবং প্রয়োজনে কী ভাবে তাহার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করা যায়, তাহা বিবেচনা করিতে চাহিয়াছেন। উদ্বেগ অস্বাভাবিক নহে। কিন্তু সেই উদ্বেগের তাড়নায় সোশাল মিডিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করিবার আগে গভীর ভাবে ভাবনাচিন্তা জরুরি। অপপ্রচার বন্ধ করিবার জন্য প্রচার নিয়ন্ত্রণ করিবার নীতি রাষ্ট্রের চালকরা সর্বযুগেই অনুসরণ করিতে চাহিয়াছেন, কারণ তাহা আপাতদৃষ্টিতে সহজ উপায়। কিন্তু আগাছা ঠেকাইতে গিয়া শতপুষ্পের বিকাশ বন্ধ করা গণতন্ত্রের ধর্ম হইতে পারে না। যে প্রচারে সত্যই বিপদ ঘটিতে পারে তাহার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা লওয়া প্রচলিত আইনেই সম্ভব। তাহার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সমস্যা সেখানেই। মুজফ্ফরনগরই দেখাইয়া দিয়াছে, অশান্তির প্রকৃত স্রষ্টা রাজনীতি, যে রাজনীতি বিরোধ এবং বিদ্বেষকে আপন স্বার্থসিদ্ধির কাজে ব্যবহার করিতে চাহে, তথ্যপ্রযুক্তি বা সোশাল মিডিয়া তাহার হাতিয়ার হইয়া দাঁড়ায়। মন্ত্রী ও নেতারা যদি আপন আপন দলকে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারেন, তবে অপপ্রচারের বিপদ অনেক কমিবে, তাহা দমন করিতে প্রশাসনও অনেক বেশি তৎপর হইবে। প্রশাসকরা বরং সেই চেষ্টা করুন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.