রাজা আসেন যান; নীতি থাকিয়া যায়। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক হইতে কপিল সিব্বল বিদায় লইয়াছেন, কিন্তু তাঁহার মানসিকতার প্রভাব কমে নাই। সম্প্রতি মন্ত্রক সিদ্ধান্ত করিয়াছে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-এর যে কোনও শাখায় ফি-সংক্রান্ত যে কোনও পরিবর্তন ঘটাইতে হইলে মন্ত্রকের অনুমতি লাগিবে। আই আই এম-গুলি যেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলাইয়া চলে, যেন উৎকর্ষের অজুহাতে সীমাহীন ভাবে ফি বাড়াইয়া না যায়, ইহাই নাকি সরকারের লক্ষ্য। আপাতত যে ভাবে এই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলি কাজ করিয়া থাকে, তাহাতে এই সিদ্ধান্ত লইবার অধিকার কিন্তু একমাত্র আই আই এম-এর নিজেদেরই। নূতন নীতি বলিতেছে, অতঃপর এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিবে।
স্বভাবতই বিভিন্ন আই আই এম চূড়ান্ত অখুশি। সিব্বলের আমল হইতেই এই সরকারি অতিসক্রিয়তার বিরুদ্ধে তাহারা প্রতিবাদী হইয়া উঠিতেছে। তাহারা স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকারি সম্পত্তি নহে। তবে কেন তাহাদের সরকারের অঙ্গুলিহেলনে চলিতে হইবে, নিজেদের উৎকর্ষের পথটি কেন তাহারা নিজেরা বাছিতে পারিবে না? উৎকর্ষ এবং স্থায়িত্বের ভাবনা তো তাহাদেরই সর্বাধিক হইবার কথা। উপরন্তু, এখনও প্রতিটি আই আই এম-এর বোর্ড অব গভর্নর্স-এ কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব অন্যতম সদস্য হিসাবে স্বীকৃত। যে কোনও আর্থিক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যেহেতু বোর্ডই লইয়া থাকে, এবং সরকারি সচিব যেহেতু সেই বোর্ডের স্বাভাবিক সদস্য, তাই এখন কোন যুক্তিতে বোর্ডের অনুমতির পরেও আবার মন্ত্রক হইতে অতিরিক্ত অনুমতির বন্দোবস্ত করিতে হইবে, তাহা বোধগম্য নহে। এত শত পদ্ধতিগত খুঁটিনাটির বাহিরেও একটি বৃহত্তর প্রশ্ন রহিয়াছে। স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় অনুদানপ্রাপ্ত হইলেই কেন্দ্রীয় সরকারের নাক গলাইবার অধিকার মিলে না। বিশেষত যে প্রতিষ্ঠান অর্ধশতাব্দী দেশের গৌরব বৃদ্ধি করিতেছে। বাস্তবিক, যে কোনও বেসরকারি, আধা-সরকারি, সরকারি-অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভালমন্দের সিদ্ধান্ত তাহার নিজস্ব হওয়া বাঞ্ছনীয়, যদি তাহাতে সমাজের স্বার্থবিরুদ্ধ কোনও পদক্ষেপ করা হয়, তবে সমাজই কালক্রমে তাহাকে পথ শুধরাইতে বাধ্য করিবে। সরকারি তর্জনী তোলা থাকুক সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য, তাহাই স্বাভাবিক।
একই প্রশ্ন তোলা যায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিত দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলক কোর্স চালুর ক্ষেত্রেও। সিদ্ধান্ত হইয়াছে, এই ক্ষেত্রে ইউ জি সি বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নির্ধারিত নির্দেশিকা মোতাবেক চলিতে হইবে। নির্দেশিকার ভিত্তি হইবে একটি বিশেষ গ্রেডের উপরে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সহিত (‘নাক’ অনুমোদনে) ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রেডের দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মিলনের স্বীকৃতি, এবং বাকিগুলির অস্বীকৃতি। ইউ জি সি ওয়েবসাইটে সামগ্রিক তালিকা থাকিবে, স্বীকৃত ও অস্বীকৃত নামসমেত। বিষয়টি জটিল। বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিষয়ে যেহেতু তথ্যাদি জানিবার উপায় কম, তাই একটি সরকার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এই পদ্ধতিতে যুক্ত থাকিবার সুবিধা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাহার ভূমিকা ঠিক কী হওয়া উচিত? অনুমোদনের মাধ্যমে প্রবেশাধিকার দেওয়া বা না-দেওয়া? না কি প্রবেশকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে যথাসম্ভব তথ্য জনস্বার্থে প্রচারিত করা? যদি দ্বিতীয়টি করা সম্ভব হয়, তাহা হইলে প্রথম কাজটির কী প্রয়োজন থাকিতে পারে, অনর্থক পুলিশগিরি ছাড়া? ওয়েবসাইটে তথ্য-পরিসংখ্যান প্রচারিত হউক, তাহার ভিত্তিতে জনসাধারণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত লউন, নির্বাচন করুন। অভিভাবকত্ব যদি করিতে হয়, স্বাধীনতা ও অধিকারের ভিত্তিতে তাহা হউক, নিষেধাজ্ঞা ও সরকারি কর্তৃত্বের পথে নহে। |