উপযুক্ত চিকিৎসা আর ওষুধের পাশাপাশি ক্যানসার জয় করতে দরকার কাছের মানুষের সহযোগিতা আর যত্ন। শনিবার স্তন ক্যানসার চিকিৎসক ও রোগীদের একটি সংগঠনের তরফে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত সকলে সে কথাই মনে করালেন।
অক্টোবর মাসটি বিশ্ব জুড়ে ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস’ হিসেবে উদযাপিত হয়। ছ’টি কেমো নিয়ে মাত্র মাস দু’য়েক আগে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন বছর পঞ্চান্নর মানসী মুখোপাধ্যায়। এ দিন তাঁর স্বামী রাধাকান্তবাবু শোনাচ্ছিলেন কী ভাবে রোগীর পাশাপাশি নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হয় কাছের মানুষদেরও। শারীরিক কষ্টটা অনুভব না করতে পারলেও যন্ত্রণার সঙ্গে লাগাতার লড়াই চালানোর সাহস রোগীকে জোগাতে হয় পরিবারের সদস্যদেরই। আড়াল করে রাখতে হয় নিজের সব দুশ্চিন্তা। চিকিৎসার খরচের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্ব নিতে হয় তাঁদের। এখনকার ছোট ছোট পরিবারে যা আরও কঠিন। রাধাকান্তবাবুর কথায়, “পরিবারের সদস্যদের ক্যানসার ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতন হতেই হবে। না হলে এত কিছু করা সম্ভব নয়।” |
একই মত স্তন ক্যানসারজয়ী নন্দিতা জাজু, সুচেতা চক্রবর্তী, ডালিয়া চক্রবর্তীদের। বছর আটত্রিশের নন্দিতা বলছিলেন, কেমো চলাকালীন শারীরিক যন্ত্রণা এবং শরীরে নানা রকম পরিবর্তন সয়ে নিয়ে মানসিক জোর বজায় রাখা সম্ভব হত না, যদি বাড়ির লোকেরা পাশে না থাকতেন। সুচেতা আবার ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে-লড়তেই বজায় রেখেছেন নিজের কাজ। এখন তিনি বাংলা সিরিয়ালে জনপ্রিয় অভিনেত্রী। ২০০৯ সালে প্রথমে ডিম্বাশয়, তার পরে স্তনে ক্যানসার ধরা পরে তাঁর। সুচেতা বলেন, “দীর্ঘ ৯ বছর যাঁর সঙ্গে প্রেম ছিল, ক্যানসারের কথা শুনেই সম্পর্ক ভেঙে দেন তিনি। ওই দিনগুলো পার করে কী ভাবে আবার গ্ল্যামার দুনিয়ায় ফিরেছি, আমিই জানি।” তাঁর কথায়, “১৮টা কেমো নেওয়ার পরে নখ ফেটে রক্ত পড়ত, খেতে পারতাম না। বমি হত, সঙ্গে ধুম জ্বর। মাথার চুল-ভুরু উঠে গেল। চামরা কালো হয়ে গেল। প্রডিউসারেরা একের পর এক সিরিয়াল আর সিনেমা থেকে আমাকে বাদ দিলেন। জীবনের এই রকম ভয়ঙ্কর মুহুর্তে কাছের মানুষকে পাশে না পেলে লড়াইটা কত কঠিন হয়, আমি জানি।”
ক্যানসার বিশেষজ্ঞ তাপ্তি সেন এবং চঞ্চল গোস্বামী এ দিন জানালেন, ক্যানসার রোগীর আত্মীয় ও পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং ও সচেতনতা বাড়ানোর উপরে তাঁরা আলাদা জোর দেন। রোগীকে না জানিয়ে আলাদা করে বাড়ির লোকের সঙ্গে বসা হয়। রোগ কোন পর্যায়ে, তা সারবে কি না, কত টাকা লাগবে এবং রোগীকে কী ভাবে মানসিক জোর দিতে হবে, সব শেখানো ক্যানসার চিকিৎসার অতি প্রয়োজনীয় অংশ। |