|
|
|
|
মাওবাদী বনধে অল্প সাড়া বেলপাহাড়ি, বিনপুরে |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
লালগড় বাজারের মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকানে বসে শুক্রবার সন্ধ্যায় আশপাশের গ্রামের কয়েক জন মানুষ জটলা করছিলেন। তাঁদের কাছ থেকেই অন্যেরা জানতে পারলেন, শনিবার ভারত বন্ধ ডেকেছে মাওবাদীরা। যাঁরা বন্ধের খবর অন্যদের দিচ্ছেন, তাঁরা আবার সে কথা জেনেছেন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে। ২০১১ পর্যন্ত এই ধরনের বন্ধের সমর্থনে জঙ্গলমহলে কিছু দিন আগেই পোস্টার পড়ে যেত, দেওয়াল লেখা হত। ২০০৯-১০ সালে বন্ধের সমর্থনে মিছিলও বার করত মাওবাদীরা কিন্তু এ বার সে সব কিছুই হয়নি। কোনও প্রচারই হয়নি মাওবাদীদের ডাকা এ দিনের বন্ধ নিয়ে। তেমনই ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি ও বিনপুরের দু’-একটি জায়গা বাদ দিলে সামগ্রিক ভাবে বন্ধের কোনও প্রভাবই পড়েনি জঙ্গলমহলে। দোকানবাজার খোলা ছিল, স্বাভাবিক ছিল স্বল্পপাল্লা ও দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচল।
বস্তুত, বন্ধ যে কারণে ডাকা হয়েছিল, তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সম্পর্ক নেই। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ওড়িশার মালকানগিরিতে পুলিশের হাতে এক মহিলা-সহ ১৩ জন মাওবাদী নিহত হন। তারই প্রতিবাদে বনধ ডাকে মাওবাদীরা। জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের একাংশ জানতেন না, মাওবাদীরা বন্ধ ডেকেছে। এক সময়ে ‘হুইসপারিং ক্যাম্পেনের’ জেরে আগাম বনধের খবর জানতে পারতেন এলাকাবাসী। এ বার তা-ও হয়নি। লালগড়ের কাঁটাপাহাড়ি, বড়পেলিয়া, ধরমপুরের মতো এক সময়কার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় দোকান-বাজার ছিল খোলা, যানবাহন চলেছে স্বাভাবিক ভাবে। |
|
মাওবাদী বনধেও স্বাভাবিক রইল ঝাড়গ্রাম শহর। শনিবার শহরের পাঁচমাথা মোড়ে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
তবে বেলপাহাড়ি বাজার, বাঁশপাহাড়ির কিছু দোকানপাট এবং বিনপুরের দহিজুড়ি বাজার ও পালইডাঙা এলাকায় কিছু দোকানপাট বন্ধ ছিল। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া এলাকায় মাওবাদীরা সক্রিয় বলেই বেলপাহাড়িতে বনধের প্রভাব পড়েছে। ওই এলাকায় মদন মাহাতো তার স্কোয়াড নিয়মিত ঘোরাফেরা করছে বলে গোয়েন্দারাও স্বীকার করছেন।
২০১২-র মে মাসে ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ প্রতিবাদে ভারত বন্ধ ডেকেছিল মাওবাদীরা। তখনও সাড়া দেয়নি পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহল। তবে ২০১১-র নভেম্বরে কিষেণজিকে হত্যার প্রতিবাদে সে বছর ডিসেম্বরের গোড়ায় দু’দিনের ভারত বন্ধ ডেকেছিল মাওবাদীরা। তাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে। তার পর আর মাওবাদী বন্ধের প্রভাব এই রাজ্যে তেমন টের পাওয়া যায়নি।
রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের (আইবি) এক কর্তা বলেন, “আমাদের আশঙ্কা ছিল, এ বার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, বেলিয়াবেড়া, সাঁকরাইল এই সব এলাকায় বন্ধের প্রভাব পড়বে। কারণ, ওই সব এলাকা থেকে ওড়িশার দূরত্ব খুব বেশি নয়। আর ওড়িশার ঘটনার জেরেই এ দিনের বন্ধ ডাকা হয়। কিন্তু ওই এলাকাগুলিই স্বাভাবিক ছিল। তবে বেলপাহাড়ি ও বিনপুরের কিছু জায়গায় বন্ধের প্রভাব পড়ল কেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।”
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াতেও এ দিনের বন্ধের কোনও প্রভাব পড়েনি। পুজোর বাজার করতে বাঁকুড়ার সারেঙ্গা, রাইপুর, রানিবাঁধ এলাকার বিভিন্ন দোকানে ক্রেতারা ভিড় করেছিলেন। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূল নেতা সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “মাওবাদীরা যে বন্ধ ডেকেছে, সেটা মানুষ বুঝতেই পারেনি। সাধারণ মানুষ আর ওদের বন্ধে সামিল হয়ে নিজেদের সময় নষ্ট করতে রাজি নন।” |
|
|
|
|
|