হাসপাতালে চলছে দালাল-রাজ,
রোগীরা দুষছেন কর্তাদের
সাধারণ শারীরিক পরীক্ষাই হোক বা রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিষেবায় আরামবাগ হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা। বিশেষ করে গরিব মানুষদের পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। যে পরিষেবা নিখরচায় পাওয়ার কথা, তার জন্য তাঁদের খরচ হচ্ছে বিস্তর। এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই তাঁরা দুষছেন।
সমস্যার কথা মেনেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। ইতিমধ্যে হাসপাতালের দেওয়ালে দালালদের সাহায্য না নেওয়ার জন্য সচেতনতামূলক পোস্টার লাগিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের অভিযোগ, চিকিৎসকদের কিছু অংশের সঙ্গে দালালদের সরাসরি যোগ রয়েছে। তা ছাড়া, রাজ্যের শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের নাম করে ওই দালালেরা হাসপাতালে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। তাই গোলমালের আশঙ্কায় কেউই প্রতিবাদ করতে সাহস করেন না বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ।
হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়েরও আক্ষেপ, “রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য দালালদের উপদ্রব থামানো যাচ্ছে না।”
আরামবাগের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছি সুপারকে। দলেরই একটা অংশের নেতাদের লোকজন ওই নোংরামো করছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। তাদের সংযত হতে বলা হয়েছে।” মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তণিমা মণ্ডল বলেন, “দালালদের উৎপাত ঠেকাতে সব সময়ে চেষ্টা করা হয়। রোগী কল্যাণ সমিতিতে এ নিয়ে আলোচনাও হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।”
হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “দালালদের জন্য কোনও রোগী অসুবিধায় পড়েছেন বলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযোগপত্র হাসপাতালেই পাওয়া যায়।” প্রতিদিন সকাল ছ’টা থেকেই আরামবাগ হাসপাতালে শুরু হয়ে যায় দালালদের দাপট। হাসপাতাল কর্মীদের অনেকেই জানিয়েছেন, সেখানে প্রায় ১৫ জন দালাল আছেন। কে কোন ওয়ার্ডে ঢুকবেন, তা নিয়ে সকাল থেকেই তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। কেননা, চিকিৎসকেরা রোগীদের দেখার পরে যে সব পরীক্ষা করার নির্দেশ লিখে দেন, সেই সব কাগজ হাতাতেই ওই প্রতিযোগিতা চলে। তাতে নার্সদের সহযোগিতাও থাকে বলে অভিযোগ। রোগীরা জানিয়েছেন, দালালরা যে ভাবে চিকিৎসকদের ঘিরে থাকেন, তাতে তাঁদের চেনার উপায় থাকে না। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে রোগীদের নানা কাজেও হাত লাগান ওই দালালেরা।
হাসপাতালের কর্মীরা জানান, দালালদের প্রতিদিন গড় আয় হয় ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা। রোগীদের বাইরে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করানোর জন্য বিভিন্ন নার্সিংহোমের সঙ্গে দালালের যোগাযোগ থাকে। সেখান থেকে কমিশন মেলে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কেউ কেউ ওই দালালদের দিয়ে ব্যক্তিগত কাজ করিয়ে নেন বলে অভিযোগ। অপারেশন থিয়েটারেও তাঁদের অবাধ যাতায়াত। শুধু তাই নয়, রোগীদের খাবারেও তারা ভাগ বসায়।
সর্পদষ্ট হয়ে আরামবাগের নৈসরাই গ্রামের এক প্রৌঢ় বর্তমানে ওই হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর ছেলে বলেন, “ডাক্তারবাবু বাবাকে দেখে কিছু পরীক্ষা করার জন্য বলে যাওয়ার পরেই এক যুবক এসে বলল, এখানে দেরি হবে। অন্যত্র ভাল জায়গায় পরীক্ষা হবে। সেখানে যেতে হল। খরচও হল। কিন্তু ডাক্তারবাবু কোনও প্রতিবাদ করলেন না।”
খানাকুলের নতিবপুরের এক প্রসূতি দিন কয়েক আগে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসক তাঁর আল্ট্রা-সোনোগ্রাফি করার নির্দেশ দেন। হাসপাতালেই ওই ব্যবস্থা থাকলেও তাঁকে দালাল বাইরে নিয়ে গিয়ে ওই পরীক্ষা করায় বলে অভিযোগ। দালালদের সাফাই, পেটের দায়েই তাঁরা এই কাজ করেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.