গানের জন্য রীতিমতো গোয়েন্দাগিরি!
সেটাই প্রায় তিরিশ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন গীতিকার প্রণব রায়ের পুত্র প্রদীপ্ত রায়। সন্ধানও মিলেছে গুপ্তধনের। পুজোয় মান্না দে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর অপ্রকাশিত গানের চারটি অ্যালবাম বেরচ্ছে তাঁরই উদ্যোগে। “ভাবনাটা মাথায় দিয়েছিলেন মান্নাবাবুই,” বলছিলেন প্রদীপ্ত, “একদিন বললেন, একটা ছবিতে সাত-আটটা নিধুবাবুর টপ্পা গেয়েছি। ছবিটা হবে না। দেখো, গানগুলো পাও কি না।”
গান-তদন্তের সেই শুরু। বহু খোঁজার পরে মিলল অসমাপ্ত সিনেমা ‘নিধুবাবুর টপ্পা’। উদ্ধার করা হল মান্না দে-র চারটি টপ্পা। প্রদীপ্ত বলছেন, “মুক্তি পাওয়া ছবির রেকর্ডে অপ্রকাশিত গানও খুঁজছিলাম। জানতাম, ‘ভোলা ময়রা’ ছবির গান অপ্রকাশিত। প্রযোজক জং বাহাদুর রানার কাছে অনুমতি মিলল। ছবিটা এ দেশে বহু খুঁজেও পাইনি। শেষে বাংলাদেশের এক বন্ধু সহায় হলেন। পাওয়া গেল গানগুলো।”
প্রদীপ্ত বলছিলেন, “এ দেশে সিনেমাগুলো পাওয়াই তো দুষ্কর। এক প্রযোজকের খোঁজ করে তাঁর বাড়ি গেলাম। শুনলাম তিনি কিছু কাল আগে প্রয়াত। তাঁর পুত্র বললেন, তাঁর বাবা নাকি কোনও দিন কোনও সিনেমা প্রযোজনাই করেননি। শেষে বহু কষ্টে সিনেমাটির প্রচারপুস্তিকা সংগ্রহ করে তাঁকে দেখাতে বিশ্বাস করলেন। কিন্তু শর্ত দিলেন, পুস্তিকাটি দিলে তবেই গানের অনুমতি দেবেন।” এ ভাবেই বহু কষ্টে মান্না দে-র গাওয়া কুড়িটি অপ্রকাশিত গানের অ্যালবাম তৈরি হয়েছে।
একদিন চলে গিয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি। খবর পেয়েছিলেন শ্রীমতী পিকচার্সের ৭-৮টা ছবির গান রেকর্ড হয়েও বেরোয়নি। তাঁর মালিক কানন দেবী। সেই সিনেমাগুলির স্বত্ব কিনেছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়। গান পেয়েছেন তাঁর কাছ থেকে।
আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়? “সবগুলোই পঞ্চাশ আর ষাটের দশকের। দুটো অতুলপ্রসাদ সেনের, ‘আমার পরান কোথা যায়’ আর ‘কত গান তো হল গাওয়া’,” বলছেন প্রদীপ্ত। স্মৃতি উসকে দিয়ে বলে চললেন, “হেমন্তবাবুর লেকের ধারের চার তলার ফ্ল্যাটে বার বার হানা দিয়েছি। একদিন একটা ক্যাসেটে পাঁচ-ছ’খানা অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত আর নজরুলের গান দিয়ে বললেন, কবে গেয়েছি মনে নেই, তোকে প্রকাশের অনুমতি দিলুম।” তার সঙ্গে হেমন্ত-সংগ্রাহক জয়দীপ চক্রবর্তীর সহায়তায় আরও বেশ কিছু গান জুড়ে তৈরি হয়েছে হেমন্তর ১৬টি গানের ‘অপ্রকাশিত’।”
আর সলিল চৌধুরী? “পনেরোটা গানের মধ্যে ঋত্বিককুমার ঘটকের ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ সিনেমার সেই ‘অনেক ঘুরিয়া শ্যাষে আইলাম রে কলকাত্তায়’ গানটাও আছে।” |