বর্ধমানের বড় রেশম ব্যবসায়ী বিনোদীলাল হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় বড় বজরায় সপারিষদ ভাগীরথী নদী ধরে কলকাতা যাচ্ছিলেন ব্যবসার কাজে। মুর্শিদাবাদের প্রায় শেষ প্রান্ত কুলারিয়ায় ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে এক সাধু ভগ্নপ্রায় একটি ছোট মন্দিরে দুর্গাপুজো করতেন। আনুমানিক ৪০০ বছর আগে মৃত্যুর সময় সেই সাধু বিনোদীলালবাবুকে তার প্রতিষ্ঠিত পুজো অর্পণ করে যান। পুজো শুরুর পর থেকেই বিনোদীলালের ব্যবসা আরও বাড়ে। তাঁর দু’ পুরুষ পর বিশ্বনাথ হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় রেশম ব্যবসায় উন্নতির শিখরে ওঠেন। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে তাঁর ব্যবসা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর বহরও বাড়তে থাকে। ৪০০ বছর ধরে যেখানে দেবী আরাধ্য হন, তার পাশ দিয়ে এক কালে ভাগীরথী বয়ে যেত। বেলডাঙার নাম তখন ছিল কুলারিয়া। বড় মন্দির করে সেখানে চালু হওয়া পুজো আজও স্বমহিমায় চলছে।
দু’ বছর আগে মন্দিরটি ভেঙে নতুন করে তৈরি হলেও মাটির আসনটি আজও অক্ষত। প্রাচীন রীতি মেনেই রথযাত্রার দিন কাঠামো পুজো হয়। বেলডাঙার মহুলার রঞ্জিত ঘোষ ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে প্রতিমা নির্মাণ করেন। টানা চোখের ডাকের সাজের একচালা প্রতিমা। মনে করা হয়, বেলডাঙা সহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় এটাই প্রথম পুজো। তাই আজও দূরদুরান্ত থেকে ভক্তরা পুজো দেখতে ছুটে আসেন।
বেলডাঙার হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য বিজন হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বেলডাঙার ইতিহাসের সঙ্গে এই পুজো জড়িয়ে রয়েছে। এই পুজো শুরু হলে তবেই আশপাশের পুজো শুরু হয়। সপ্তমী তিথি ছাড়লে একটা ঘিয়ের প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়, সেটা সন্ধিপুজো পর্যন্ত জ্বলে। প্রাচীন কালে বন্দুক চালিয়ে সন্ধি পুজোর শুরু হত। বর্তমানে শব্দবাজির আইন মেনে বাজি ও আতস বাজি ফাটানো হয়।”
গত ৩০ বছর ধরে পরিবরের পুরোহিত লক্ষ্মীনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আগে বেলডাঙার নাম ছিল কুলারিয়া। সেই সময় থেকেই এই পুজো শুরু। পুজোর নিয়ম ও ভোগের ক্ষেত্রে আজও কোনও পরিবর্তন হয়নি। মুর্শিদাবাদের আশপাশের নানা জেলার মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন। সন্ধিপুজোর সময় প্রচুর মানুষ উপস্থিত হন।” পরিবারের নবীন সদস্য শুভঙ্কর হাজরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রাচীন রীতি মেনে দশমীর সকালে পুরুষ সদস্যরা কড়ি খেলা ও মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। আজও কাঁধে করে ৫ কিলোমিটার দূরে ডুমনিদহে নিয়ে গিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়।” |