সম্পাদকীয় ২...
দুই পক্ষ
জার্মানির চ্যান্সেলর, স্বদেশে ‘মাতা’ নামে পরিচিত অ্যাঞ্জেলা মার্কেল সম্প্রতি নির্বাচনে বড় রকমের সাফল্য অর্জন করিয়াছেন। কিন্তু এখনও তিনি জোটসঙ্গী খুঁজিতেছেন। তেইশ বছর আগে দুই জার্মানির মিলনের পরে তাঁহার ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দল এত ভাল ফল কখনও করে নাই, কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তথাপি তাহার অধরা থাকিয়া গিয়াছে। মার্কেলের জোটসঙ্গী ফ্রি ডেমোক্র্যাট দল পাঁচ শতাংশের কম ভোট পাওয়ায় জার্মানির নিয়ম অনুসারে আইনসভায় কোনও আসন পায় নাই। সুতরাং সরকার গড়িবার জন্য তাঁহাকে ‘বিরোধী’ শিবির হইতেই খুব সম্ভব সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট দল হইতেই শরিক সংগ্রহ করিতে হইবে। আপাতদৃষ্টিতে চমকপ্রদ মনে হইতে পারে, কিন্তু জার্মানির রাজনীতিতে ইহা অতি পরিচিত পরিস্থিতি। পঞ্চাশের দশকের পর হইতে কোনও দলই সেখানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করিতে পারে নাই। সরকার গড়িবার জন্য প্রতিপক্ষের সাহায্যপ্রার্থনা করিতে হইয়াছে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের সহিত হাত মিলাইয়া সরকার চালাইবার এই বাধ্যবাধকতা জার্মান শাসনতন্ত্রের একটি অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য। সে দেশে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’-এর নিয়ম প্রচলিত, ফলে আইনসভায় আসনসংখ্যা নির্ভর করে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের উপর। সুতরাং কোনও একটি দলের পক্ষে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সচরাচর কঠিন। অর্থাৎ বিভিন্ন মতের অনুগামীরা এমনকী নির্বাচনের সময় যে দলগুলি একে অন্যের বিরোধী হিসাবে লড়াই করিয়াছে, নির্বাচনের পরে তাহারাও একে অন্যের সহিত সহযোগিতা করিয়া শাসন চালাইবে, ইহাই স্বাভাবিক বলিয়া ধরিয়া লওয়া হয়। এই রীতি কেবল ভিন্নমতের সহিত বোঝাপড়ার শিক্ষাই দেয় না, মতবিরোধিতা যাহাতে বিরূপতায় পরিণত না হয় সেই শিক্ষাও দান করে। ভারতীয় রাজনীতিকদের পক্ষে এই শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। মার্কিন রাজনীতিকদের পক্ষেও কম জরুরি নহে দ্বিদলীয় বোঝাপড়ার চূড়ান্ত ব্যর্থতায় আপাতত সে দেশে খোদ সরকারই শিকেয় উঠিয়াছে, তবে আপাতত তাঁহাদের ভাবনা তাঁহাদের হাতেই ছাড়িয়া দেওয়া যাক। এ দেশে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে দলীয় পরিচয় রাজনীতিকদের এক একটি প্রকোষ্ঠে পুরিয়া তালা বন্ধ করিয়া দেয়, রাজনৈতিক বিরোধিতা দলগত, এমনকী ব্যক্তিগত শত্রুতায় পর্যবসিত হয়। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এক নিরন্তর কুরুক্ষেত্র রচনা করে। তাহাতে ক্ষতি গণতন্ত্রের। গণতান্ত্রিকতার।
রাজনীতিকদের মানসিকতা শুভবুদ্ধির প্রেরণায় উন্নত হইবে, এমন আশা দুরাশামাত্র। প্রয়োজনের তুল্য শিক্ষক নাই। ব্যবহারিক প্রয়োজনে পারস্পরিক সহযোগিতা অপরিহার্য হইলে আচরণের পরিবর্তন সম্ভব। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থাই ভারতের পক্ষে শ্রেষ্ঠ, এমন কোনও কথা নাই। কিন্তু এমন কোনও ব্যবস্থার প্রয়োগসম্ভাবনার বিবেচনা হইতে ভারতের শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের প্রক্রিয়ার সূচনা হইতে পারে। রাজনীতিকদের ইহাতে শঙ্কিত হইবার কারণ নাই, সহযোগিতার পাশাপাশি পরস্পর লড়াই করিবার বহু সুযোগ তাঁহারা পাইবেন। সোশাল ডেমোক্র্যাটদের সহযোগী হিসাবে পাইবার জন্য ‘মাতা’ মার্কেলকে এখন বিস্তর দর কষাকষি করিতে হইতেছে, পাইবার পরেও টানাপড়েন থামিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.