সম্পাদকীয় ১...
পা রাখিবার জমি
মির প্রয়োজন হইলে যে তাহা অধিগ্রহণ করিতে হইবে, এই কথাটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশেষে বুঝিয়াছেন। অথবা, স্বীকার করিয়াছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল তাঁহাকে সাহস জোগাইয়াছে বলিয়াই অনুমান। তিনি অন্তত এইটুকু বুঝিয়াছেন, যাহাই হউক না কেন, এখনই ফের সি পি আই এম-এর ঝুলিতে ভোট ঢালিয়া দিতে মানুষের আপত্তি আছে। বস্তুত, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের চালচলনেও যদি মুখ্যমন্ত্রী এই বিশ্বাসের প্রতিফলন দেখিতে পাইয়া থাকেন, তাহাতে অবাক হইবার কারণ নাই। তবে, যে কারণেই হউক না কেন, জমি অধিগ্রহণের অপরিহার্যতা যে মুখ্যমন্ত্রীর স্বীকৃতি পাইয়াছে, তাহা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বিশেষ সুসংবাদ। তিনি বলিয়াছেন, গায়ের জোরে নহে, কৃষককে বুঝাইয়া, তাঁহাদের মনোমত দাম দিয়া তবে জমি অধিগ্রহণ করিতে হইবে। অধিগ্রহণ করিতে হইলে জবরদস্তি করিতেই হইবে, কোনও সভ্য সমাজ এমন দাবি করিবে না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ‘আমরা ২৩৫, উহারা ৩০’-এর মৌতাতে কাজটি করিয়া ফেলিয়াছিলেন। অবশ্যই কৃষককে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হইত। সদ্য পাশ হওয়া জমি অধিগ্রহণ আইনে ক্ষতিপূরণের যে পরিমাণ ধার্য করা হইয়াছে, তাহাতে কোনও জমির মালিকই আপত্তি করিবেন বলিয়া বোধ হয় না। তবে, মুখ্যমন্ত্রী কথাটি সম্পূর্ণ করেন নাই। তিনি পরিকাঠামো ইত্যাদির জন্য অধিগ্রহণের কথা বলিয়াছেন। তাহা অবশ্যই জরুরি। সড়ক, রেলপথ ইত্যাদি তৈরি হইলে তাহার জাড্যেই শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়িবে। কিন্তু, প্রয়োজন হইলে শিল্পের জন্যও সরকার জমি অধিগ্রহণ করিয়া দিবে, মুখ্যমন্ত্রী এই কথাটিও বলিয়া রাখিলেই পারিতেন। জমি প্রসঙ্গে তাঁহার নূতন অবস্থানে শিল্পমহল আশ্বস্ত হইতেছে। তিনি কথাটি সম্পূর্ণ করিলে সেই ইতিবাচক হাওয়ার জোর বাড়িত। তবে, বহু বিলম্বে হইলেও, প্রথম ধাপ হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী অনেক দূর গিয়াছেন। এক বার যখন অধিগ্রহণের প্রয়োজন বুঝিয়াছেন, তখন বাকিটা বুঝিতে সমস্যা হইবে না।
অধিগ্রহণের প্রশ্নে নীতিগত পরিবর্তন একটি দিক। প্রশাসনিক ক্ষিপ্রতা তাহার অন্য দিক। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি লইয়া সম্প্রতি যে জট পাকিয়াছে, তাহার সমাধানে কঠোর হইবার নির্দেশ দিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যবাসী এই পরিবর্তনটিকেও আন্তরিক ভাবে স্বাগত জানাইবেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের হাওয়ামোরগ যে মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবের উপর চূড়ান্ত নির্ভরশীল, তাহা লইয়া তর্ক নাই। সমস্যা হইল, কে ইশারায় কতখানি বুঝিবেন, তাহা নির্দিষ্ট করিয়া বলা কঠিন। অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রী মুখে অধিগ্রহণের পক্ষে বলিয়াছেন বলিয়াই যে মনেও সেই কথাই আছে, প্রশাসন তাহা নিশ্চিত করিয়া জানিবে কী উপায়ে? মুখ্যমন্ত্রী কোনও দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ না রাখিয়া স্পষ্ট ভাবে কঠোর নীতির কথা বলায় প্রশাসনের সুবিধা হইবে, অনুমানের উপর ভর করিয়া পথ চলিতে হইবে না। প্রশাসন যথাসময়ে তৎপর হইলে, স্থানীয় আবেগ বুঝিতে পারিলে বহু সমস্যাই অনেক সহজে সমাধান করা যায়। অধিগ্রহণের প্রশ্নে, অতএব, বিচক্ষণ ও তৎপর প্রশাসনের কোনও বিকল্প নাই। আশা করিবার যথেষ্ট কারণ আছে যে প্রশাসনকে নিজের বিবেচনা অনুযায়ী চলিতে দিলে অনেক কম জট পাকিবে। অনাবশ্যক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ সরিয়া গেলে প্রশাসন কুশলী ভাবে কাজ করিতে পারিবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এই কারণেই অতি তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁহার শাসনকালের প্রথম আড়াই বৎসর বিভিন্ন ভ্রান্তিতে নষ্ট হইয়াছে। আশা করা যাক, তিনি নিজের কথায় নিজে বিশ্বাস রাখিবেন যাহা গিয়াছে, তাহা গিয়াছে। আর একটি দিনও নষ্ট করিবার নহে। তাঁহার জমি নীতি সংশোধিত হউক। প্রশাসন কুশলী হউক। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়নের স্বপ্ন পূরণ হউক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.